প্রতীকী ছবি।
এক নিঃসন্তান দম্পতির কাছে বিক্রি করার জন্যই চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের ফুটপাত থেকে তিন বছরের এক শিশুকে চুরি করা হয়েছিল। তবে ওই দম্পতি চুক্তিমতো টাকা না দেওয়ায় তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হয়নি শিশুটিকে। বৌবাজার এলাকা থেকে শিশু চুরির ঘটনার তদন্তে ধৃত মহম্মদ ইউসুফকে জেরা করে এ কথা জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। বৃহস্পতিবার ঝাড়খণ্ডের কোডারমা থানার মারকাচো এলাকা থেকে মহম্মদ ইউসুফকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। উদ্ধার করা হয়েছিল ওই শিশুটিকেও। পুলিশ জানিয়েছে, শনিবার ভোরে ওই অভিযুক্ত এবং শিশুটিকে নিয়ে কলকাতায় ফেরেন তদন্তকারীরা। ধৃতকে এ দিনই ব্যাঙ্কশাল আদালতে তোলা হয়।
তদন্তকারীরা জানান, গত ২৪ জানুয়ারি রাতে বৌবাজার থানা এলাকার চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের ফুটপাত থেকে তিন বছরের ওই শিশুটি নিখোঁজ হয়ে যায় বলে তার বাবা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখে একটি গাড়ি চিহ্নিত করে। ফুটেজে দেখা যায়, ওই গাড়ি থেকে এক জন নেমে এসে শিশুটিকে গাড়িতে তুলে গণেশচন্দ্র অ্যাভিনিউ ধরে মৌলালি বেলেঘাটা হয়ে ই এম বাইপাস হয়ে ডানলপের দিকে চলে যাচ্ছে।
সূত্রের খবর, ওসি-র নির্দেশে ওই থানার দুই অফিসার, নীলাদ্রি বৈদ্য এবং রাজু নন্দী ওই রাস্তার বিভিন্ন সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখেন। তাতেই গাড়ির নম্বর চিহ্নিত করেন তাঁরা। ওই নম্বরের সূত্র ধরে মালিকের খোঁজ শুরু করে পুলিশ। কিন্তু দেখা যায়, ওই মালিক গাড়ি বিক্রি করে দিয়েছেন অন্য এক জনের কাছে। ওই ব্যক্তিকে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করতেই তিনি জানান, গাড়িটি গত ডিসেম্বরে তিনি বিক্রি করেছেন মহম্মদ ইউসুফকে। পুলিশ জানায়, ইউসুফের মোবাইল বন্ধ ছিল। কড়েয়ায় ইউসুফের বাড়িতে গিয়ে পুলিশ গত বুধবার জানতে পারে, সে তিন দিন ধরে বাড়িতে নেই। এর পরেই মোবাইলের সূত্র ধরে তদন্তকারীরা ঝাড়খণ্ডের কোডারমা থানার মারকাচোতে তার একটি বাড়ির সন্ধান পান। বৃহস্পতিবার ওই দুই অফিসার বাহিনী এবং শিশুটির বাবাকে নিয়ে সেখানে হানা দিলে অপহরণে ব্যবহার করা ওই গাড়িটি পেয়ে যান বাড়ির বাইরে। বাড়ির ভিতর থেকে উদ্ধার করা হয় শিশুটিকে।
পুলিশের দাবি, ধৃত জেরায় জানায়, ঘটনার সময়ে তার সঙ্গে ছিল এক জন গাড়িচালক। তার বাড়ি ঝাড়খণ্ডের গিরিডিতে। ঘটনার সময়ে সে-ই চালকের আসনে ছিল। আর গাড়ি থেকে নেমে মায়ের পাশ থেকে শিশুটিকে চুরি করে ইউসুফ। এর পরে তারা গাড়ি নিয়ে সোজা ডানলপে পৌঁছয়। সেখানে ওই চালকের এক আত্মীয় দম্পত্তি অপেক্ষা করছিল। নিঃসন্তান ওই দম্পতিকে বিক্রির জন্যই শিশুটিকে চুরি করেছিল ওই তারা, এমনটাই দাবি ধৃতের।
তদন্তকারীরা জানান, গাড়ি করে ডানলপ থেকে ঝাড়খণ্ডে গেলেও ওই নিঃসন্তান দম্পতির হাতে শিশুটিকে দেয়নি অভিযুক্তেরা। কারণ হিসেবে তারা জানিয়েছে, যে টাকায় ওই শিশুটিকে বিক্রির রফা হয়েছিল, সেই টাকা নাকি ওই দম্পতি দেয়নি। তাই তাদের হাতে শিশুটিকে তুলে না দিয়ে তাকে ইউসুফ নিজের বাড়িতেই রেখে দেয়। পুলিশ ইউসুফের ওই বক্তব্য খতিয়ে দেখছে। সেই সঙ্গে পলাতক চালক এবং ওই নিঃসন্তান দম্পতিরও খোঁজ করছে পুলিশ।
এক তদন্তকারী অফিসার জানান, শিশুটি ইউসুফের বাড়িতে ছিল। তার সন্ধান মেলার পরে শিশুটি নিজের বাবাকে দেখে তার কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ে। শনিবার ওই শিশুর বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, দুষ্কৃতীরা তাঁদের সন্তানকে তাঁদের পাশ থেকে তুলে নিয়ে গেলেও তাঁরা কিছুই টের পাননি। সন্তানকে ফিরে পাওয়ার আশাও প্রায় ছেড়ে দিয়েছিলেন তাঁরা। সন্তানকে ফিরে পেয়ে পুলিশকে ধন্যবাদ জানান ওই দম্পতি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy