জার্মান কনসাল জেনারেল টমাস শ্রডের (বাঁ দিকে) সঙ্গে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও সুমন মুখোপাধ্যায়। রবিবার, ম্যাক্স মুলার ভবনে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী
আদিগঙ্গার বুকে নোংরা। পূতিগন্ধময় জলাশয় থেকে কংক্রিটের গ্রাসে পূর্ব কলকাতার জলাভূমি। কিংবা বড়বাজার, কলেজ স্ট্রিট, রিপন স্ট্রিট, শ্যামবাজারের ঘিঞ্জি, জঞ্জালময় মহানগর— পর পর উঠে আসছে কলকাতার নাগরিক-জীবনের ছবি। সৌজন্য, শহরের জার্মান কনস্যুলেট।
সুমন মুখোপাধ্যায়ের পরিচালনায় আধ ঘণ্টার পরিসরে তথ্যচিত্রটি মেলে ধরল, কলকাতার জীবনযাত্রা ও জলবায়ুর ক্রমপরিবর্তনের পটভূমিতে শহরের ভবিষ্যৎ নিয়ে অশনিসঙ্কেত। বিভিন্ন দেশের বিশেষজ্ঞদের মঞ্চ ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ (আইপিসিসি)-এর তরফে গবেষণায় ইতিমধ্যেই উঠে এসেছে, ২০৭০ সালের মধ্যে দুনিয়ার বিপন্নতম শহরগুলির একটি হয়ে উঠতে পারে কলকাতা। সেই সঙ্গে বলা হয়েছে, সুন্দরবনের বাদাবন কী ভাবে কলকাতার রক্ষাকবচের ভূমিকা পালন করছে। এখনও পর্যন্ত প্রকৃতির বড় মাপের রোষের অভিঘাতের আশঙ্কায় এশিয়ায় মুম্বই, ঢাকা বা সাংহাই— কলকাতার থেকে বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, সুন্দরবনের বাদাবন (ম্যানগ্রোভ) না-থাকলে তীব্র ঝড় বা বন্যার অভিঘাতে কলকাতা আগামী ৪০-৫০ বছরে কার্যত মহাপ্রলয়ের শিকার হতে পারে।
২০০৯-এর আয়লাতেই কলকাতা নাকাল হয়েছিল। তার থেকে বেশি জোরালো ঝড় হওয়া বিচিত্র নয় বলে বিজ্ঞানীরা বার বার জানিয়েছেন। তাঁদের মতে, এখনই সতর্ক না-হলে বড় বিপদ অপেক্ষা করছে। একটি ব্রিটিশ সংস্থারও দাবি, বায়ুদূষণের নিরিখেও এশিয়ার ৪০টি শহরের মধ্যে সব থেকে বিপজ্জনক দশায় রয়েছে কলকাতা। বিজ্ঞানীদের অনুসন্ধান ও তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিই তথ্যচিত্রটির পটভূমি তৈরি করেছে।
ছবিটির নাম, ‘কলকাতা ২০৭০’। ভাবী কালের শহরের ছবিটা কী হতে পারে, তা মেলে ধরেই শহরের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম থেকে শুরু করে পুর প্রশাসনের মাথাদের সজাগ করতে চায় জার্মান কনস্যুলেট। খানিকটা পরাবাস্তবের মিশেলে ছবির প্রথম দৃশ্যেই যেন ঘোর বিপর্যয়ের জলের নীচে ডুবে রয়েছে কলকাতা।
শহরের একটি সাহিত্য উৎসবের আসরে ম্যাক্স মুলার ভবনে রবিবার দুপুরে ছবিটি দেখানো হয়েছে। শহরের জার্মান কনসাল জেনারেল টমাস শ্রডের কথায়, ‘‘এই মাসের শেষেই আমরা কলকাতার পুর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসব।পরিবেশ রক্ষায় বা শহরকে প্রকৃতির রোষ থেকে বাঁচাতে নীতি নির্ধারণে আমরাও প্রশাসনের শরিক হতে চাই।’’
সুমনও বলছিলেন, ‘‘আতঙ্ক ছড়াতে নয়, বিপদের মোকাবিলা কী ভাবে করতে হবে তার পথ দেখাতেই ছবিটি তৈরি করা হয়েছে।’’
পরিবেশ সচেতনতা থেকেই তথ্যচিত্রটি প্রযোজন করেছে জার্মান কনস্যুলেট।
কনসাল জেনারেল বলছিলেন, ‘‘ইংরেজি ও বাংলা— দু’ভাবেই রয়েছে তথ্যচিত্রটি। শহরের স্কুল-কলেজের ছেলেমেয়েদের বার বার ছবিটি আমরা দেখাতে চাই!’’ সবুজ রক্ষা, বায়ুদূষণ, যত্রতত্র প্লাস্টিকের ব্যবহার, জঞ্জাল ফেলার প্রবণতা বা জল নষ্ট করার দিকগুলি নিয়ে বার্তা দিতে ছবির প্রধান চরিত্র হিসেবে পর্দায় সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের উপস্থিতিটুকু ব্যবহার করা হয়েছে। প্রকৃতির খেয়ালে বিপদের দিক ছাড়াও জার্মান কনসাল জেনারেল বলছিলেন, প্লাস্টিক বা জঞ্জাল ফেলার সমস্যাগুলি ইউরোপে কখনওই থাবা বসায়নি, এমন ভাবা ভুল হবে। কিন্তু নাগরিকদের সু-অভ্যাস গড়ে তুলতে আইনের কড়াকড়ি ও সুচিন্তিত নীতি সেখানে রক্ষাকবচ।
পরিবেশকর্মী তথা সাংবাদিক জয়ন্ত বসু তথ্যচিত্রটির গবেষণার কাজ করেছেন। প্রথম বার ছবির প্রদর্শনের পরেই দর্শকদের মধ্যে শহরের দু’টি প্রথম সারির স্কুলের পড়ুয়া ক্লাস ইলেভেনের নবনীতা সাহা, ক্লাস ফাইভের নিখিলেশ মুখোপাধ্যায়রা বলছিল, ছবিটির বার্তা কী ভাবে জনে জনে পৌঁছে দেওয়া যাবে!
অনেক পড়ুয়াই মনে করে, তাদের স্কুলের বিভিন্ন প্রকৃতি-সংক্রান্ত ক্লাবের মধ্যে দিয়ে অনেকের চোখ খোলা সম্ভব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy