জোর যার: টালার আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয় চত্বরে মিড-ডে মিলের সঙ্গেই চলছে মা ক্যান্টিনের রান্নাও। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী
রান্নার ঝাঁঝে স্কুলে ক্লাস করানোই কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে বলে অভিযোগ। গ্যাস সিলিন্ডার ওঠানো-নামানো, বিশাল হাঁড়ি-কড়াই-খুন্তি নাড়ার আওয়াজ প্রায় সর্বক্ষণ। বেশির ভাগ সময়েই মিলছে না পানীয় জল। থাকছে না শৌচাগারে ব্যবহার করার মতো জলও! ছেলেদের ক্লাস করাতে সমস্যা তো হচ্ছেই, এমন অবস্থার মধ্যেই চালাতে হচ্ছে ছাত্রীদের স্কুলও!
টালার আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভবনের অবস্থা এখন এমনই। কারণ সেখানে বেআইনি ভাবে রাজ্য সরকারের ‘মা ক্যান্টিন’ প্রকল্পের খাবার তৈরি হচ্ছে বলে অভিযোগ। বিভিন্ন স্তরে জানিয়েও সুরাহা হচ্ছে না বলে দাবি স্কুল কর্তৃপক্ষের।
আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রায় ৬৩ বছরের পুরনো। ভোরে এই স্কুলের প্রাক্ প্রাথমিক এবং মেয়েদের শাখার ক্লাস হয়। এই শাখা দু’টির নাম অরবিন্দ শিশু নিকেতন এবং আদর্শ বালিকা বিদ্যালয়। বেলায় উচ্চ মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাশপাশি চলে প্রাক্ প্রাথমিক অরবিন্দ বিদ্যানিকেতন। মধ্য শিক্ষা পর্ষদের অধীন এই স্কুলে সরকারি নিয়ম মেনে প্রাক্ প্রাথমিক থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়াদের মিড-ডে মিল দেওয়া হয়। স্কুলের এক শিক্ষকের দাবি, বছর কয়েক আগে স্থানীয় পুর প্রশাসকের সূত্রে এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা স্কুলে মিড-ডে মিল রান্নার দায়িত্ব পায়। এই খাবার টালা চত্বরের কয়েকটি স্কুলে যেতে শুরু করে। অভিযোগ, ওই সংস্থা পরে স্থানীয় এক নেতা-দাদার আশীর্বাদধন্য হয়ে স্কুল ভবনটি ব্যবহার করেই মা ক্যান্টিনের খাবার তৈরির বরাত পায়।
বর্তমানে ওই স্কুল থেকেই শহরের তিনটি বরো এলাকা মিলিয়ে অন্তত ১৫টি ওয়ার্ডে মা ক্যান্টিনের খাবার যায়। স্কুলের গেটের সামনে দিনভর দাঁড়িয়ে থাকে ছোট ছোট লরি। সেগুলি ব্যবহার করা হয় আনাজ, ডিম, চাল, ডাল, গ্যাস সিলিন্ডার নিয়ে আসার কাজে। কোনওটি ব্যবহার হয় খাবার পাঠানোর জন্য। স্কুলের প্রধান শিক্ষক অনিরুদ্ধপ্রসাদ রাই বললেন, ‘‘ছেলে-মেয়েদের যাতায়াত করার রাস্তা পর্যন্ত থাকে না। রাত তিনটে থেকে রান্না চলে বিকেল পর্যন্ত। স্কুলের জল ওরাই শেষ করে ফেলে। ছাত্ররা তো বটেই, জলের অভাবে ছাত্রীরা শৌচাগার ব্যবহার করতে কী সমস্যায় পড়ে, ভাবা যায় না। অথচ, স্কুলের জন্য বিশেষ জলের লাইন নেওয়া রয়েছে।’’ তাঁর আরও অভিযোগ, ‘‘মা ক্যান্টিনের ব্যবসা চালাতে স্কুলের বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হয়। কিন্তু স্কুলকে খরচ দেওয়া হয় না।ক্যান্টিনে বেঁচে যাওয়া খাবার ছাত্রদের খাওয়ানো হয়। বার বার বলেও মিড-ডে মিল আলাদা তৈরি করাতে পারিনি। মিড-ডে মিলের বাসনও দখল করে নেওয়া হয়েছে।’’
যদিও প্রশাসন সূত্রের খবর, এই ভাবে কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই মা ক্যান্টিনের রান্না হওয়ার কথা নয়। রাজ্য সরকার ২০২১-২২ অর্থবর্ষের বাজেটে মা ক্যান্টিন প্রকল্প ঘোষণা করে। দরপত্র ডেকে বরাত দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। স্বনির্ভর গোষ্ঠী এমন দরপত্রে অংশগ্রহণ করতে পারে। রান্না করার জায়গা এবং পরিকাঠামো রয়েছে, সেই প্রমাণ দিতে পারলে তবেই বরাত পাওয়া যায় বলে খবর। কিন্তু বিষয়টিতে সে ভাবে নজরদারির ব্যবস্থা না থাকায় এখন এমন বহু অভিযোগই সামনে আসছে বলে প্রশাসনিক কর্তাদের একাংশের দাবি।
ওই স্কুলের পরিচালন সমিতির সভাপতি, কলকাতা পুরসভার ১ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান তথা তৃণমূল নেতা তরুণ সাহা বললেন, ‘‘তাড়াহুড়ো করতে গিয়েই এক সময়ে এই মা ক্যান্টিনের বিষয়ে গোলমাল হয়েছে। কিন্তু মানুষের জন্য এটা ভাল কাজ। তবে স্কুলে কোনওমতেই মা ক্যান্টিনের রান্না হওয়ার কথা নয়। ছেলে-মেয়েগুলো জল পর্যন্ত পাচ্ছে না। কিন্তু বার বার বলেও এটা বন্ধ করাতে পারছি না।’’ যে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এই ভাবে রান্না চালাচ্ছে বলে অভিযোগ, তার প্রধান প্রদীপ সরকার বললেন, ‘‘পুরসভার উপরমহলে কথা বলা আছে। বাকি কোথাও জবাব দেব না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy