প্রতীকী চিত্র।
প্রয়োজন ছিল যুদ্ধকালীন তৎপরতার। অজানা কোনও কারণে তা না হওয়ায় ‘হেপাটাইটিস বি’ ও ‘হেপাটাইটিস সি’ রোগীর রক্তের সংস্পর্শে (ব্লাড কনটাক্ট) এসে বিপদ বাড়ল কর্তব্যরত নার্সের। এমনই অভিযোগ উঠেছে মানিকতলার সেন্ট্রাল ব্লাড ব্যাঙ্কের বিরুদ্ধে।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টা নাগাদ ১২ বছরের একটি শিশুকে ব্লাড ব্যাঙ্কের থ্যালাসেমিয়া ইউনিটে রক্ত দেওয়া হচ্ছিল। তখনই শিশুটির শরীরে ব্যবহৃত সুচ ‘দুর্ঘটনাবশত’ নার্সের আঙুলে ফুটে যায়। ওই শিশুটি ‘হেপাটাইটিস বি’ এবং ‘হেপাটাইটিস সি’ রিঅ্যাক্টিভ।
‘হেপাটাইটিস বি’, ‘হেপাটাইটিস সি’ এবং ‘এইচআইভি’— এই তিনটি রোগই রক্তের মাধ্যমে অন্যের শরীরে প্রবেশ করতে পারে। চিকিৎসকদের মতে, ঝুঁকি কমাতে যত দ্রুত সম্ভব ওই নার্সের চিকিৎসা শুরু হওয়া প্রয়োজন ছিল। তা ছাড়া, থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত রোগীকে বারবার রক্ত দিতে হয়। তাই ‘এইচআইভি স্টেটাস’ অজানা হলেও ওই নার্সের পাশাপাশি শিশুটিরও এইচআইভি পরীক্ষা করানো উচিত।
ন্যাকো-র নির্দেশিকা অনুযায়ী, সব চেয়ে ভাল হয় যদি এইচআইভি রোধে ‘পোস্ট এক্সপোজার প্রোফাইলঅ্যাক্সিস’ (পিইপি) প্রতিষেধক দু’ঘণ্টার মধ্যে দেওয়া যায়। ‘হেপাটাইটিস বি’ এবং ‘হেপাটাইটিস সি’র রক্ষাকবচ নেওয়ার প্রশ্নেও দেরি করা উচিত নয়। সেন্ট্রাল ব্লাড ব্যাঙ্কের ঘটনাক্রমে এই তৎপরতা ছিল না বলে অভিযোগ।
স্বাস্থ্য ভবন সূত্রের খবর, সেন্ট্রাল ব্লাড ব্যাঙ্কে পিইপি অমিল ছিল। চিকিৎসার জন্য ওই নার্সকে স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনে পাঠানো হয়। তার জন্য চিঠি তৈরি করতেই অনেকটা সময় নষ্ট হয় বলে অভিযোগ। ওই নার্স ট্রপিক্যালে পৌঁছলেও সে দিন তাঁর চিকিৎসা হয়নি। শুক্রবার বহির্বিভাগের টিকিট কেটে চিকিৎসা যখন শুরু হয়, তত ক্ষণে ২৪ ঘণ্টা পার হয়ে গিয়েছে।
ট্রপিক্যালের অধিকর্তা প্রতীপ কুন্ডু বলেন, ‘‘প্রথম দিন বিকেল পাঁচটায় ওই নার্স এসেছিলেন। তখন এআরটি সেন্টার বন্ধ। আমাদের জরুরি বিভাগও নেই। ওই নার্স এত দেরি করলেন কেন?’’ কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের এক চিকিৎসক বলেন, ‘‘এমন ঘটনা ঘটতেই পারে। সে জন্যই ব্লাড ব্যাঙ্কগুলিকে পিইপি রাখার নির্দেশ দেওয়া রয়েছে।’’
স্বাস্থ্য ভবনের খবর, ট্রপিক্যালের বহির্বিভাগে ওই নার্সকে তাঁর শরীরে অ্যান্টি-এইচবিএস টাইটার (অ্যান্টিবডি) কেমন রয়েছে, তা এবং এইচআইভি পরীক্ষা করানোর কথা বলা হয়েছে।
এসএসকেএমের হেপাটোলজি বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর কৌশিক দাস বলেন, ‘‘ওই নার্স আগে হেপাটাইটিস বি-র প্রতিষেধক নিয়েছিলেন কি না, দেখতে হবে। শরীরে অ্যান্টি এইচবিএস টাইটারের মাত্রা খুব বেশি (ভেরি হাই) হলে চিন্তা নেই। যদি তার চেয়ে কম (হাই) হয়, তা হলে একটি বুস্টার ডোজ় যথেষ্ট। অ্যান্টিবডি দশের নীচে, প্রতিষেধক নেওয়া নেই, এমন হলে টিকাকরণের পাশাপাশি ইমিউনোগ্লোবিউলিন দিতে হবে। সব চেয়ে ভাল হয়, ছ’ঘণ্টার মধ্যে সেটা নিলে। ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত অনুমতিযোগ্য। ২৪ ঘণ্টা হলেও দেওয়া যায়। তবে তাতে ওষুধের কার্যকারিতা কমে যায়।’’
এক স্বাস্থ্য আধিকারিকের মতে, কোনও স্বাস্থ্যকর্মী এ ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হলে কর্তৃপক্ষের উচিত, সর্বতো ভাবে তাঁর পাশে দাঁড়ানো।
অভিযোগ উড়িয়ে সেন্ট্রাল ব্লাড ব্যাঙ্কের অধিকর্তা স্বপন সোরেন দাবি করেছেন, এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থাই নিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy