আটকে পড়া যাত্রীদের উদ্ধার করা হচ্ছে । নিজস্ব চিত্র
মৃত্যুভয় কী?
কোমর জাপ্টে রয়েছে সাত বছরের ছেলে। এসি মেট্রোর কামরায় দাঁড়িয়ে দেখছি, দু’দিকেই জানলার বাইরে আগুনের আভাস! জানলা ভাঙা যাচ্ছে না। হঠাৎই ঢুকতে শুরু করল কালো ধোঁয়া। দমবন্ধ হয়ে না কি আগুনে পুড়ে মরে যাব সকলে?
বৃহস্পতিবার এসি রেকের প্রথম কামরায় উঠেছিলাম রবীন্দ্র সদন থেকে। বিকেল ৪টে ৫৫ মিনিটের মেট্রো। ভিড় ছিল বেশ। টানেলে ঢোকার পরে মিনিটখানেকও হয়নি, বিকট আওয়াজ। হঠাৎ দেখি, দু’দিকেই কাচের বাইরে লাল হলকা। কেউ বললেন, কামরার তলা থেকে আগুনের শিখা বেরিয়ে ওপর দিকে উঠছে। তখনই থমকে গেল ট্রেনটা। প্রায় সব আলো দপ করে নিভে জ্বলে উঠল এমার্জেন্সি ল্যাম্প। কামরায় প্রবল চিৎকার, কান্নাকাটি।
মুহূর্তের মধ্যে দ্বিতীয় কামরা থেকে সহযাত্রীরা চেষ্টা শুরু করলেন আমাদের কামরায় চলে আসার। কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। ছেলে জাপ্টে ধরে জিজ্ঞেস করেই চলেছে, ‘‘কী হবে বাবা?’’ ড্রাইভারকে উদ্দেশ্য করে কেউ চিৎকার করলেন, ‘‘দরজা খুলে দিন, গ্যাস ঢুকছে।’’ কালো ধোঁয়া তখন ঢুকতে শুরু করেছে। উৎকট গন্ধ। দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল।
জানলা ভাঙার মরিয়া চেষ্টা শুরু হল। কিন্তু কী দিয়ে ভাঙা হবে? সিটের নীচে অগ্নিনির্বাপক সিলিন্ডার থাকে। ভিড়ের মধ্যে হাতড়ে সিলিন্ডার পাওয়া গেল না। অগত্যা কয়েকজন মিলে ‘ওয়ান, টু, থ্রি, ফোর’ বলে পরপর লাথি জানলার কাচে। বিকেল ৫টা ১৩ মিনিট নাগাদ মহিলা আসনের ওপরে জানলার কাচ ভাঙা গেল। বাইরে তো আরেকটা কাচ। তখন সেটায় ধাক্কা। কোনওক্রমে সেটাও ভাঙা গেল। সিটে কাচ ছড়ানো। জানলার ওই ফাঁক দিয়েই লাফ মারা শুরু। জানলা থেকে লাইন অনেকটাই নীচে। নামতে গিয়ে মুখ থুবড়ে পড়লেন কেউ কেউ। যাঁরা আগে নামলেন, তাঁদের কোলে দেওয়া হল বাচ্চাদের। গোটা সুড়ঙ্গ অন্ধকার। কামরার নীচে আগুনের আভাস।
আরও পড়ুন: আতঙ্ক-যানে এক বিকেল, মেট্রোর বন্ধ কামরায় অসহায় যাত্রীদের হুড়োহুড়ি
লাইনে নামার পর ড্রাইভারের কামরায় গিয়ে আমরা দেখি, উনি সেখানে নেই। আমাদের কামরা এবং তাঁর কামরার সংযোগকারী দরজাটা ‘লক’ করা। মেট্রোর কোনও কর্মীকে তখনও আমাদের চোখে পড়েনি। লাইন ধরে এগোতে শুরু করি নিজেরাই। হাতে ছেলের হাত। তার তখন শ্বাসকষ্ট শুরু হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy