প্রতীকী ছবি।
‘‘দাদাকে খুন করে এসেছি!’’— মঙ্গলবার রাতে থানায় হাজির হয়ে এমনই দাবি করেছিলেন এক ব্যক্তি। যা শুনে স্বভাবতই বিস্মিত হয়ে যান বাঁশদ্রোণী থানার পুলিশকর্মীরা। সেই ব্যক্তি আরও বলেন, ‘‘আমাদের খাওয়ার টাকাই প্রায় নেই। এ দিকে, দাদা খুব অসুস্থ ছিল। আর টানতে না পেরে বালিশ চাপা দিয়ে ওকে মেরে ফেলেছি!’’ প্রাথমিক জেরার পরে সেই ব্যক্তিকে সঙ্গে নিয়েই তাঁর বাড়ি গিয়ে পুলিশ দেখে, বিছানায় পড়ে এক ব্যক্তির দেহ! পাশের একটি বাটিতে জল। মৃতদেহের মাথায় জলপট্টির মতো করে রাখা ভিজে কাপড়। বুধবার ঘটনাস্থলে যান কলকাতা পুলিশের হোমিসাইড শাখা ও ফরেন্সিক আধিকারিকেরা। আপাতত একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে।
জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, মৃত ওই ব্যক্তির নাম দেবাশিস চক্রবর্তী। তাঁর বয়স অনুমানিক ৪৮ বছর। যিনি তাঁকে খুন করেছেন বলে থানায় দাবি করেন, তাঁর নাম শুভাশিস চক্রবর্তী। বছর পঁয়তাল্লিশের ওই ব্যক্তি সম্পর্কে দেবাশিসের নিজের ভাই। কিন্তু এর পরের ঘটনাপ্রবাহ তৈরি করেছে একাধিক রহস্য। বুধবার রাত পর্যন্ত যার সমাধান হয়নি। দেহটি ময়না-তদন্তে পাঠানো হয়েছিল। পুলিশ সূত্রের খবর, প্রাথমিক ভাবে তদন্তকারীরা জেনেছেন, ওই মৃত্যুর কারণ সেরিব্রাল হেমারেজ। তবে সেটি কী ভাবে ঘটেছে, তা নিয়ে ধোঁয়াশা কাটেনি। মৃতের ভাইকে দিনভর জেরা করা হয়েছে। তাঁর মানসিক স্বাস্থ্যের দিকটিও ভাবাচ্ছে পুলিশকে।
পুলিশ সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত তদন্তকারীরা জেনেছেন, বয়স্ক মাকে নিয়ে দুই ভাই, দেবাশিস ও শুভাশিস বাঁশদ্রোণীর নিরঞ্জনপল্লি এলাকায় ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে থাকতেন। ভাইদের কেউই বিয়ে করেননি। তাঁদেরবাবা বেশ কিছু দিন আগে মারা যান। গত ১৬ মে বয়সজনিত কারণে তাঁদের মায়েরও মৃত্যু হয়।
প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, মায়ের মৃত্যুর পরেই পুরনো ফ্ল্যাট ছেড়ে দিতে চান শুভাশিসেরা। তাঁরা দাবি করেন, ওই ফ্ল্যাটের মাসিক ভাড়া সাত হাজার টাকা। যা তাঁদের পক্ষে দেওয়া অসম্ভব। আগে শুভাশিসের মা তাঁর নিজের এবং স্বামীর পেনশনের টাকা পেতেন। দেবাশিস নিজেও চাকরি সূত্রে কিছু টাকা পেনশন পেতেন। মায়ের মৃত্যুর পরে দেবাশিসের একার পেনশনে ওই ভাড়া দেওয়া সম্ভব নয় বলেই জানান শুভাশিস। নিরঞ্জনপল্লিতেই একটি বেড়ার ঘর ভাড়া নিয়ে সেখানে ওঠেন তাঁরা। বাড়িওয়ালি গৌরী ঘোষ জানান, মাসিক দেড় হাজার টাকা ভাড়ায় চলতি মাসের পয়লা তারিখ থেকে ঘরটি নেন শুভাশিসেরা। জিনিসপত্র এনে তাঁরা সেখানে থাকতে শুরু করেন দশ দিন আগে। তার মধ্যেই এই ঘটনা।
গৌরীদেবী বলেন, ‘‘এই পাড়াতেই আমার মেয়ের বাড়ি। আমি বেশির ভাগ সময়ে সেখানেই থাকি। আমার বাড়ির ফাঁকা কিছুটা জায়গায় বেড়ার ঘর করেছি। তারই একটিতে থাকতেন শুভাশিসেরা। দুই ভাইয়ের কখনও ঝামেলা হতে দেখিনি। কারও সঙ্গেই ওঁরা বেশি মিশতেন না। গত চার-পাঁচ দিন ধরে দেবাশিসের পেটের গোলমাল আর জ্বর হয়েছে শুনেছিলাম।’’
তদন্তের দায়িত্বে থাকা এক পুলিশকর্মী বলেন, ‘‘এই ঘটনায় আর্থিক অনটনের একটি দিক উঠে আসছে। তবে ভাইয়ের বক্তব্যের সত্যতা যাচাই না করে কিছু বলা সম্ভব নয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy