বিক্ষোভ: রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিল ভেঙে দেওয়ার দাবিতে অবস্থান চিকিৎসকদের। বৃহস্পতিবার, কাউন্সিলের সামনে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।
দাবি আগে থেকেই ছিল। রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে দুর্নীতিমুক্ত করার সেই দাবি আরও জোরালো হয়েছে আর জি করের ঘটনার পর থেকে। দুর্নীতির আঁতুড়ঘর বলে পরিচিত রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিল কেন ভেঙে দেওয়া হচ্ছে না, সেই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন চিকিৎসক মহলের বড় অংশ। সেই লক্ষ্যেই বৃহস্পতিবার রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিল অভিযান করল চিকিৎসকদের তিনটি সংগঠন। ‘জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অব ডক্টর্স’, ‘ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন’ (আইএমএ)-এর রাজ্য শাখা এবং ‘প্রোটেক্ট দ্য ওয়ারিয়র্স’-এর কয়েকশো সদস্য এ দিন অবস্থান-বিক্ষোভ করেন কাউন্সিলের অফিসের সামনে। পরে তিন সংগঠনের প্রতিনিধিরা মিলে রেজিস্ট্রার মানস চক্রবর্তীর কাছে স্মারকলিপি জমা দেন।
উল্লেখ্য, ডাক্তারি পাশ করার পরে পড়ুয়াদের রেজিস্ট্রেশন দেওয়া থেকে শুরু করে চিকিৎসায় গাফিলতিতে কারও মৃত্যুর অভিযোগের তদন্ত-সহ চিকিৎসকদের বিভিন্ন বিষয় নিয়ন্ত্রণ করে থাকে রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিল। কোনও অপরাধে অভিযুক্ত চিকিৎসকের ডাক্তারি করার লাইসেন্সও বাতিলের ক্ষমতা রয়েছে তাদের হাতে। কিন্তু সেই কাউন্সিলই দিনের পর দিন বিভিন্ন অনৈতিক কাজে অভিযুক্ত হয়ে পড়ায় হতাশ চিকিৎসকেরা। আর জি করের ঘটনার পরে কাউন্সিলের কয়েক জন সদস্য পদত্যাগ করেছেন বলে খবর। তাঁরা কারা এবং তাঁদের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হয়েছে কিনা, তা জানাতে হবে বলেও এ দিন দাবি তোলেন সিনিয়র চিকিৎসকেরা।
তবে, এ দিন কাউন্সিলের এক সদস্য, প্রবীণ চিকিৎসক হিরণ্ময় সাহা জানান, গত ৫ সেপ্টেম্বর তিনি একটি চিঠি পাঠিয়ে দাবি করেছিলেন, আর জি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করা হোক এবং উত্তরবঙ্গ লবির লোকজনকে সদস্যপদ থেকে সরানো হোক। তা না হলে ওই চিঠিকে যেন তাঁর পদত্যাগপত্র হিসাবে গ্রহণ করা হয়।
হিরণ্ময় বলেন, ‘‘আমি কাউন্সিলের সভাপতি সুদীপ্ত রায়কে শুধু চিনতাম। বাকি কাউকে আগে কখনও দেখিনি। যে পাহাড়প্রমাণ দুর্নীতির কথা সামনে আসছে, তাতে অবশ্যই এই কাউন্সিল ভেঙে দেওয়া উচিত।’’ তিনি আরও অভিযোগ করেন, গত ৯ অগস্ট কাউন্সিলের বৈঠকে কখনওই সিদ্ধান্ত হয়নি যে, আর জি করে প্রতিনিধিদল পাঠানো হবে। অথচ, সদস্যদের একাংশ সেই মিথ্যা কথা প্রচার করছেন। উল্লেখ্য, মেডিক্যাল কাউন্সিলের সভাপতি সুদীপ্ত রায়কে ইতিমধ্যেই জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে সিবিআই।
এ দিন আইএমএ-র তরফে সৌরভ দত্ত বলেন, ‘‘আমরা কেউ রেজিস্ট্রেশন নবীকরণ করব না। দুর্নীতিতে অভিযুক্ত সভাপতি যদি গ্রেফতার হন, তা হলে তাঁর সইয়ের তো কোনও বৈধতাই নেই।’’ তিনি আরও অভিযোগ করেন, মেডিক্যাল কাউন্সিলের নিয়মে না থাকা সত্ত্বেও গত মার্চ থেকে তিন জন সদস্য মাসে ৫০ হাজার টাকা করে ভাতা নিচ্ছেন। এথিক্স ও পেনাল কমিটির সদস্যেরা বৈঠকে হাজির হলেই এক হাজার টাকা ভাতা পেতেন।
এ দিন রেজিস্ট্রারের কাছে স্মারকলিপি দিয়ে বেরিয়ে এসে ‘জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অব ডক্টর্স’-এর তরফে উৎপল বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেন, বছরকয়েক আগে অবসর নেওয়ার পরে ছ’মাসের জন্য মেয়াদ বৃদ্ধি হয়েছিল মানস চক্রবর্তীর। সেই সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার পরে আর মেয়াদ বৃদ্ধি না হলেও তিনি এখনও রেজিস্ট্রার পদে আছেন।
আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের রেজিস্ট্রেশন বাতিলের নির্দেশিকা এ দিন জারি করেছে কাউন্সিল। নিয়মমাফিক সেটি অবৈধ বলেও দাবি করেন উৎপল। কারণ, এমন সিদ্ধান্ত নিতে হলে সদস্যদের সর্বসম্মত মতামত নিতে হয়। কিন্তু শেষ এক মাসে কাউন্সিলের বৈঠক হয়নি। সুদীপ্তর মৌখিক নির্দেশে সন্দীপের রেজিস্ট্রেশন বাতিল হয়েছে বলে দাবি করেছেন মানস।
কাউন্সিলের সদস্যদের বড় অংশের বিরুদ্ধে মেডিক্যাল কলেজে ভয়ের পরিবেশ তৈরির অভিযোগও রয়েছে। সেই সদস্যেরা, সুদীপ্ত এবং কাউন্সিলের সহ-সভাপতি তথা উত্তরবঙ্গ লবির মেজোকর্তা বলে পরিচিত সুশান্ত রায়কে পদ থেকে সরানোরও দাবি ওঠে। ২০২২-এ কাউন্সিলের নির্বাচনে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে হাই কোর্টে মামলা করেছিল ‘সার্ভিস ডক্টর্স ফোরাম’। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সজল বিশ্বাস বলেন, ‘‘সেই মামলার দ্রুত শুনানির জন্য প্রধান বিচারপতির হস্তক্ষেপ চাইছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy