—প্রতীকী চিত্র।
ঘরের মধ্যে পুরু ধুলোর আস্তরণ। তার মধ্যে খাটের ঠিক পাশে, মেঝের উপরে চিত হয়ে পড়ে রয়েছে একটি কঙ্কাল। সেটির পরনে পোশাক ছিল কি না, তা বোঝা না গেলেও পায়ে রয়েছে চটি। কঙ্কালের উপরেও একই রকম ধুলোর স্তর।
পুজোর মণ্ডপ তৈরির জন্য কাজ করতে উঠে একটি বাড়ির দোতলার বাইরে থেকে জানলা দিয়ে এমনই দৃশ্য থেকে আঁতকে উঠেছিলেন এক শ্রমিক। সোমবার এই ঘটনা ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়ায় লেক টাউনের বি ব্লকে।
প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের ধারণা, কঙ্কালটি যাঁর, তিনি অন্তত দু’বছর আগে মারা গিয়েছেন। কঙ্কালের হাড়েও ক্ষয় ধরতে শুরু করেছে। পুলিশ সূত্রের খবর, ওই বাড়িতে থাকতেন রাজীব বড়াল (৪০) নামে এক যুবক। বাবার মৃত্যুর পরে তিনি মায়ের সঙ্গে থাকতেন। কয়েক বছর আগে রাজীবের মা-ও মারা যান। তার পরে ওই যুবককে খুব কমই রাস্তায় দেখা যেত বলে স্থানীয়েরা জানিয়েছেন। মৃতের সামান্য মানসিক সমস্যা ছিল বলেও জানতে পেরেছে পুলিশ। তাঁকে দীর্ঘদিন এলাকায় দেখা যায়নি বলেও জানা গিয়েছে।
প্রাথমিক ভাবে পুলিশের ধারণা, কঙ্কালটি রাজীবেরই। কোভিডের সময়ে বাড়ির মধ্য়ে অসুস্থ হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে। কঙ্কালটি ময়না তদন্তে পাঠানো হয়েছে। এই ময়না তদন্ত করে লিঙ্গ, মৃত্যুর সময়ে বয়স, উচ্চতা এবং কত দিন আগে তা কঙ্কাল হয়েছে, সে সব জানা সম্ভব বলে জানাচ্ছেন বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজের ফরেন্সিক মেডিসিনের বিভাগীয় প্রধান সোমনাথ দাস। তিনি বলেন, ‘‘দেহে কোনও আঘাত থাকলে এবং তা হাড় পর্যন্ত পৌঁছে থাকলে সেটিও ময়না তদন্তে জানা সম্ভব। আবার যদি বিষক্রিয়ায় মৃত্যু হয়, সেটাও বোঝা যেতে পারে। তবে কয়েকটি অসুখ ছাড়া অন্য কোনও রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হলে সাধারণত বোঝা যায় না।’’ হাড়ের অস্থিমজ্জার ডিএনএ পরীক্ষা করে যেমন পরিচয় জানা সম্ভব, তেমনই মাথার খুলি যদি পুরো অক্ষত থাকে, তা হলে সুপার ইম্পোজিশন করেও পরিচয় জানা সম্ভব বলে জানাচ্ছেন ওই চিকিৎসক।
এ দিন ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তে ওই বাড়ির সামনে ভিড় জমে যায়। প্রতিবেশীরা জানান, রাজীবকে দীর্ঘ দিন তাঁরা দেখেননি। যদিও বাড়ি ভিতর থেকে বন্ধ রয়েছে দেখে অনেকে নানা সময়ে বিভিন্ন রকম সন্দেহ করেছেন। রাজীবের বাড়ির পাশেই একটি খাবারের দোকান রয়েছে বীথি ঘোষ নামে এক মহিলার। তিনি পাতিপুকুরের বাসিন্দা। বীথি বলেন, ‘‘করোনার সময়ে আমি ওই ব্যক্তিকে দেখেছি মাস্ক পরে উদ্ভ্রান্তের মতো ঘুরতে। দু’-এক বার চাল-আলু নিয়েও বাড়িতে ঢুকতে দেখেছি। তত দিনে ওঁর মা মারা গিয়েছেন। উনি কারও সঙ্গে কথা বলতেন না। বাড়িতেও কেউ আসতেন না।’’
এ দিন ওই শ্রমিক মণ্ডপ বাঁধতে উঠে কঙ্কালটি দেখতে পাওয়ার পরে স্থানীয়েরা লেক টাউন থানায় খবর দেন। পুলিশ গিয়ে বাড়ির দরজা ভেঙে কঙ্কালটি উদ্ধার করে। পুলিশের ধারণা, যে ঘরে কঙ্কালটি ছিল, সেটি এমনই জায়গায় যে কোনও দুর্গন্ধ বাড়ির ভিতর থেকে বাইরে আসেনি। তদন্তকারীরা জানান, এ দিন তাঁরা ঘরের ভিতরে যতটুকু দেখার সুযোগ পেয়েছেন, তাতে দেখা গিয়েছে রান্নাঘরে খাওয়ার সামগ্রী ছিল। ফলে না খেতে পেয়ে রাজীব মারা গিয়েছেন, এমন তত্ত্ব প্রাথমিক ভাবে উড়িয়ে দিয়েছে পুলিশ।
বিধানননগর কমিশনারেটের এক পদস্থ আধিকারিক জানান, রাজীবের বাবা সরকারি চাকরি করতেন। তাঁর মৃত্যুর পরে রাজীবের মা পেনশন পেতেন। বাড়িতে পাওয়া নথি থেকে ব্যাঙ্কে টাকা থাকার তথ্যও পেয়েছে পুলিশ। সব দিক খতিয়ে দেখে তদন্ত করা হচ্ছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy