—প্রতীকী চিত্র।
রাতে খাওয়াদাওয়ার শেষে ব্লাইন্ড স্কুলের অন্য আবাসিক পড়ুয়াদের সঙ্গে চারতলার ছাদে উঠেছিল নাবালিকা। কিছু ক্ষণ পরে বাকিরা নেমে এলেও সে ছাদে থেকে যায়। বিষয়টি নজরে পড়েনি স্কুল কর্তৃপক্ষেরও। এর পরে ছাদের দরজা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নামতে না পেরে পাঁচিলের ধারে এসে বন্ধুদের ডাকতে যায় ওই বালিকা। তখনই ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে আহত হয় সে।
মঙ্গলবার রাত ১০টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে হরিদেবপুর থানা এলাকার কবরডাঙায় দৃষ্টিহীনদের একটি বিদ্যালয়ে। রাতেই ওই নাবালিকাকে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে এই ঘটনায় প্রশ্নের মুখে স্কুল কর্তৃপক্ষের নজরদারি। বিশেষত, সকলে ছাদ থেকে নেমে এলেও এক জন পড়ুয়া যে নামেনি, সেটা কেন কর্তৃপক্ষের নজর এড়িয়ে গেল, প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়ে। স্কুল কর্তৃপক্ষ অবশ্য নজরদারিতে ঢিলেমির অভিযোগ মানতে চাননি।
জানা গিয়েছে, কবরডাঙায় দৃষ্টিহীনদের ওই আবাসিক বিদ্যালয়ে কয়েকশো পড়ুয়া লেখাপড়া করে। তাদের মধ্যে এই রাজ্যের পড়ুয়াদের পাশাপাশি রয়েছে ভিন্ রাজ্যের পড়ুয়ারাও। আশপাশের এলাকার অনেক দৃষ্টিহীন শিশুও ওই স্কুলে পড়ে। স্কুলের তরফে জানানো হয়েছে, ঝাড়খণ্ডের মধুপুরের বাসিন্দা, বছর দশেকের ওই বালিকা এক বছর আগে ওই স্কুলে আসে। সে ভর্তি হয়েছিল আপার কেজিতে। মঙ্গলবার রাতে খাওয়াদাওয়ার পরে অন্য পড়ুয়াদের সঙ্গে ছাদে গিয়েছিল ওই বালিকা। রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ বাকিরা ছাদ থেকে নেমে এলেও সে ছাদে রয়ে যায়। স্কুলের এক ছাত্রী মঞ্জু পাসোয়ান বলে, ‘‘ও ছোট হওয়ায় আগেই খেয়েদেয়ে ছাদে উঠেছিল। পরে আমাদের খাওয়ার ডাক পড়লে আমরা ছাদ বন্ধ করে নেমে আসি। কিন্তু ও যে ছাদে রয়ে গিয়েছে, সেটা কেউই বুঝতে পারিনি।’’ স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, নীচে নামার আগে কেউ ছাদে রয়ে গিয়েছে কি না জানতে দৃষ্টিহীন পড়ুয়ারা চিৎকার করেছিল। কিন্তু প্রত্যুত্তরে কেউ কোনও আওয়াজ না করায় তারা ছাদের দরজা বন্ধ করে যে যার ঘরে চলে আসে।
এ দিকে, বেশ কিছু ক্ষণ পরে ছাদ থেকে নামতে গিয়ে ওই বালিকা বুঝতে পারে, দরজা বন্ধ। তখন পাঁচিলের ধারে এসে সে অন্য আবাসিকদের ডাকতে যায়। তখনই কোনও ভাবে পড়ে যায় ওই বালিকা। সঙ্গে সঙ্গে স্কুল কর্তৃপক্ষ তাকে উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে ও পরে সেখান থেকে এসএসকেএমে নিয়ে যান। সেখানে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে বুধবার ভোরে ওই ছাত্রীকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
তবে, গোটা ঘটনায় স্কুলের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। দৃষ্টিহীন পড়ুয়ারা ছাদে উঠলে কেন তাদের সঙ্গে স্কুলের কোনও কর্মী ছিলেন না, প্রশ্ন মূলত তা নিয়েই। যদিও কর্তৃপক্ষের দাবি, গরম বলে ইদানীং বাচ্চারা ছাদে যাচ্ছিল। ঘেরা ছাদ থেকে কিছু ক্ষণ পরে নিজেরাই নেমে আসত। স্কুলের প্রিন্সিপাল কাবেরী দাস নজরদারিতে ঢিলেমির অভিযোগ মানতে চাননি। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের এখানে পড়ুয়াদের দেখাশোনা করার জন্য নির্দিষ্ট কর্মীরা আছেন। ২৪ ঘণ্টা তাঁরা তাদের উপরে নজর রাখেন। মঙ্গলবার রাতে কোনও ভাবে ওই বালিকা ছাদ থেকে পড়ে যায়।’’
হরিদেবপুর থানার পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। এক আধিকারিক বলেন, ‘‘এখনও কোনও অভিযোগ জমা পড়েনি। তবে, স্কুল কর্তৃপক্ষের কোনও গাফিলতি ছিল কি না, খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রয়োজনে আইনানুগ পদক্ষেপ করা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy