গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
শিয়ালদহ স্টেশনের ‘অতি সুরক্ষিত’ এক এলাকার ভিতর থেকে বছর তিনেকের এক শিশুকন্যাকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করলেন রেলকর্মীরাই।
শুক্রবার রাতে শিশুটিকে উদ্ধারের পরে তাকে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। প্রাথমিক ভাবে হাসপাতাল জানিয়েছে, বাচ্চাটিকে যৌন নির্যাতন করা হয়েছে। রক্তপাত হওয়ায় তাকে শিশু সার্জারি বিভাগের ‘অবজারভেশন’ ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে। রেল পুলিশ সুপার (শিয়ালদহ) অশেষ বিশ্বাস ঘটনার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘‘যৌন নির্যাতনের একটি অভিযোগ পেয়েছি। তার ভিত্তিতে ভারতীয় দণ্ডবিধি এবং প্রোটেকশন অব চিলড্রেন ফ্রম সেক্সুয়াল অফেন্স (পকসো) আইনে মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে।’’
শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার পাশে বেলেঘাটা ডিজেল শেডের ভিতরে রেলের খালি জায়গা রয়েছে। সেখানে দূরপাল্লার সমস্ত ট্রেনের ইঞ্জিন থাকে। সেখানেই রয়েছে ডিজেলের ভাণ্ডার। শুক্রবার রাতে ওই এলাকায় কর্মরত রেলকর্মীরা আশেপাশেই একটি শিশুর কান্নার আওয়াজ পান। ট্রেনের কামরার ছাদে উঠে টর্চ নিয়ে চার দিকে খুঁজতে থাকেন তাঁরা। তখনই লাইনের পাশে অন্ধকারে একটি শিশুকে বসে কাঁদতে দেখেন। রেলকর্মীরা বাচ্চাটিকে উদ্ধার করে শিয়ালদহ স্টেশনের চাইল্ড লাইনে খবর দেন। রাতেই নীলরতনে ভর্তি করার সময়ে তার পরিচয় জানা যায়নি। ফলে অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবেই ভর্তি করা হয় তাকে। পরে স্টেশনে তার বাবা-মাকে পাওয়া যায়। তাঁরাও খোঁজাখুঁজি শুরু করে দিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন: ১৮ ঘণ্টা ধরে ব্যর্থ বাহিনী, দেহ তুললেন কুয়ো মিস্ত্রি
শনিবার সন্ধ্যায় ওই শিশুর বাবা জানান, তাঁরা গত ছ’মাস ধরে শিয়ালদহ স্টেশনেই থাকেন। তিনি ট্রেনে পার্সেল ওঠানো-নামানোর কাজ করেন। শিয়ালদহ স্টেশনের যে জায়গায় তাঁরা থাকেন, শুক্রবার রাতে সেখানেই ছেলে এবং মেয়েকে স্ত্রীর কাছে রেখে পার্সেলের কাজে তিনি বেরিয়ে যান। রাত ১১টা নাগাদ ফিরে দেখেন, স্ত্রী কান্নাকাটি করছেন। তাঁর থেকে জানেন, মেয়ে খেলছিল। তাকে আর পাওয়া যাচ্ছে না। শিশুটির বাবার কথায়, ‘‘নীচে নেমে স্টেশনের প্ল্যাটফর্মগুলোতে প্রচুর খুঁজেছি। কিন্তু পেলাম না। আজ সকালে জানলাম, ওকে রেল পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি করেছে। বাচ্চাটাকে এ ভাবে কে অত্যাচার করল জানি না। আমার তিন ছেলে ও এক মেয়ে। আমার মেজো ছেলেটাও এই শিয়ালদহ স্টেশনের ভিতর থেকেই নিখোঁজ হয়ে যায়। আজও তাকে পাইনি।’’
প্রশ্ন উঠেছে, শিয়ালদহের মতো প্রথম সারির ব্যস্ত স্টেশনে সিসিটিভি-সহ যাবতীয় নজরদারি এড়িয়ে একটি শিশুকে কেউ এতটা দূরত্বে তুলে নিয়ে গেল কী করে? মায়ের পাশ থেকে অত রাতে নিরাপত্তাবেষ্টিত এলাকায় কে নিয়ে গেল তাকে? আর কেন তা আরপিএফেরও নজরে পড়ল না? রেল পুলিশের কথায়, ‘‘ওই এলাকাটিতে সাধারণ কেউ ঢুকতে পারে না। ওখানে ২৪ ঘণ্টা আরপিএফ থাকার কথা। ওরা ছিল কি না, ওরাই বলতে পারবে।’’
শিয়ালদহ ছাড়াও অন্যান্য স্টেশনে কখনও কখনও থাকে পরিবারটি। শিশুটির মা জানান, তিনি ছেলে আর মেয়েকে নিয়ে শিয়ালদহের দোতলার যেখানে থাকেন, শুক্রবার সেখানেই বসেছিলেন। মেয়ে খেলছিল। হঠাৎ দেখেন মেয়ে নেই। তিনি বলেন, ‘‘নীচেও ওকে পাইনি। কী করব বুঝতে পারছিলাম না। পুলিশের কাছে অত রাতে গেলে যদি পুলিশ কেন স্টেশনে আছি জিজ্ঞাসা করে বার করে দেয়, তাই ভয় পাচ্ছিলাম।’’ আরপিএফের শিয়ালদহ ডিভিশনের শীর্ষ কর্তা এ ইব্রাহিম শেরিফের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা হলেও তিনি ফোন তোলেননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy