Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪

ইস্ট-ওয়েস্টের জট ছাড়াতে পূর্ণ উদ্যমে ‘হাফ মন্ত্রী’

এলেন, দেখলেন, দত্তাবাদের বাসিন্দাদের কথা উঠোনে বসে মন দিয়ে শুনলেন। প্রতিশ্রুতি দিলেন, “এখানে এসেছি সমস্যার সমাধান করতে। কাউকে উচ্ছেদ করতে নয়। যদি সমাধান করতে না পারি, তা হলে আপনারা আমার গান শোনা ছেড়ে দেবেন।” মঙ্গলবার দুপুরে কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী তথা আসানসোলের সাংসদ বাবুল সুপ্রিয় এসেছিলেন দত্তাবাদে। তাঁর এই প্রতিশ্রুতি শুনে হাততালি পড়ল। তবে তাঁর সাফ কথা, “আগে সমস্যার সমাধান হোক। তার পরে হাততালি দেবেন। যত দ্রুত সম্ভব দত্তাবাদের ৬০টি পরিবারের পুনর্বাসনের জট কাটিয়ে থমকে থাকা ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজ শুরু করতে হবে।”

দত্তাবাদে বাসিন্দাদের সঙ্গে বাবুল সুপ্রিয়। মঙ্গলবার।  নিজস্ব চিত্র

দত্তাবাদে বাসিন্দাদের সঙ্গে বাবুল সুপ্রিয়। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:৩৩
Share: Save:

এলেন, দেখলেন, দত্তাবাদের বাসিন্দাদের কথা উঠোনে বসে মন দিয়ে শুনলেন। প্রতিশ্রুতি দিলেন, “এখানে এসেছি সমস্যার সমাধান করতে। কাউকে উচ্ছেদ করতে নয়। যদি সমাধান করতে না পারি, তা হলে আপনারা আমার গান শোনা ছেড়ে দেবেন।”

মঙ্গলবার দুপুরে কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী তথা আসানসোলের সাংসদ বাবুল সুপ্রিয় এসেছিলেন দত্তাবাদে। তাঁর এই প্রতিশ্রুতি শুনে হাততালি পড়ল। তবে তাঁর সাফ কথা, “আগে সমস্যার সমাধান হোক। তার পরে হাততালি দেবেন। যত দ্রুত সম্ভব দত্তাবাদের ৬০টি পরিবারের পুনর্বাসনের জট কাটিয়ে থমকে থাকা ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজ শুরু করতে হবে।”

কিন্তু বাবুলের এ দিনের কয়েক ঘণ্টার সফরে সত্যিই কি জট খুলবে? জট খুলুক বা না খুলুক, দত্তাবাদ বস্তির গলি, তস্য গলির ভিতরে তাঁকে পেয়ে বাসিন্দারা খুশি। এমনকী, তিনি যখন গৌতম বর নামে দত্তাবাদের এক বাসিন্দার উঠোনে বসে বস্তির মহিলাদের বক্তব্য মন দিয়ে শুনছিলেন, তখন বাসিন্দারা জানালেন, তাঁরা স্থানীয় বিধায়ক, পুরসভার চেয়ারপার্সন বা ভাইস চেয়ারম্যানকেও এ ভাবে আন্তরিক হয়ে ঘরে বসে কথা বলতে দেখেননি। উল্টে বছরের গোড়ায় দত্তাবাদের সমস্যার সমাধান করতে এলাকার বিধায়ক সুজিত বসু ও সল্টলেকের বিধায়ক সব্যসাচী দত্তের মধ্যে প্রকাশ্য বিবাদ দেখেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। দেখেছেন তাঁদের অনুগামীদের মধ্যে মারপিটও।

বাবুলকে বাসিন্দারা জানালেন, দত্তাবাদের পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে মূল সমস্যা বাড়িওয়ালা-ভাড়াটে নিয়ে। এখানে ২০ ঘর বাড়িওয়ালা ও ৪০ ঘর ভাড়াটে। দত্তাবাদের যেখানে পুনর্বাসন হচ্ছে, সেখানে বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটে দু’জনেই ঘর পাচ্ছেন। গৌতম বর নামে ওই বাসিন্দা বাড়িওয়ালাদের তরফে দাবি করেন, “যদি বাড়িওয়ালাদের সঙ্গে ভাড়াটেদেরও পুনর্বাসন দেওয়া হয়, তা হলে বাড়িওয়ালারা তাঁদের ভাড়ার টাকা হারাবেন। এখানে অনেক বাড়িওয়ালা আছেন, যাঁদের সংসারই চলে বাড়িভাড়া থেকে।” বাড়িওয়ালার কথা শুনে যখন বাবুল খাতায় নোট নিচ্ছেন, তখন আবার এক মহিলা চেঁচিয়ে বললেন, “দাদা, শুধু বাড়িওয়ালাদের কথা শুনলে চলবে না, ভাড়াটেদের কথাও শুনতে হবে।” নগরোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী নোটবই থেকে মুখ তুলে ওই মহিলাকে কাছে ডেকে শুনতে চাইলেন তাঁর সমস্যার কথা। ওই মহিলা বললেন, “সরকারের পুনর্বাসন প্যাকেজের নতুন বাড়িতে আমাদের ভাড়া দিতে হবে কেন?”

দত্তাবাদের ওই বস্তির কাছেই অবশ্য পুনর্বাসনের জন্য ৬০টি ছোট টিনের চালের অস্থায়ী পাকা ঘর তৈরি হয়ে গিয়েছে। তবে তা তৈরি হলেও কেউ যাননি ওখানে। এমনকী, ওই ছোট অস্থায়ী ঘরের পাশে ওই বস্তির বাসিন্দাদের জন্য তৈরি হচ্ছে স্থায়ী বড় বহুতলও। এক বছরের মধ্যে সেটিও তৈরি হয়ে যাবে দাবি করলেন বাবুলের সঙ্গে থাকা মেট্রোর আধিকারিকেরা। তবে বাসিন্দাদের দাবি, পুনর্বাসন নিয়ে এই বাড়িওয়ালা-ভাড়াটে সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা ওখানে যাবেন না। সেই সঙ্গে তাঁদের অভিযোগ, ঘরগুলি এত ছোট যে, একটি খাট ও আলমারি ঢুকলেই আর হাঁটাচলার জায়গা থাকে না। বাবুল বলেন, “ছোট ঘর তো কয়েক মাসের জন্য। যখন প্রথম মুম্বই যাই, তখন এর থেকেও ছোট ঘরে ছিলাম আমি।”

বেশ কিছুক্ষণ দত্তাবাদের বস্তিতে কাটিয়ে তিনি চলে আসেন যেখানে পুনর্বাসনের জন্য ঘর তৈরি হয়েছে সেখানে। কাগজ-কলম নিয়ে প্রত্যেক বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটের নাম লেখেন। বাড়িওয়ালারা তাঁকে প্রস্তাব দেন, তাঁরা যদি নতুন জায়গায় এসে ভাড়া না পান, তা হলে তাঁদের ক্ষতিপূরণ বা রেলে চাকরি দেওয়া হোক। বাবুল বলেন, “বেশ কিছু জটিল সমস্যা রয়েছে। কোন কোন বাড়িতে বাড়িওয়ালা থাকেন আর কোন বাড়ি ভাড়াটের, তা ঠিক মতো চিহ্নিতকরণ হয়নি। এটা ভাল করে দেখতে হবে।”

এ দিন বাবুলের এই সফরে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে অবশ্য প্রথমে কেউ ছিলেন না। পরে রাজ্যের নগরোন্নয়ন দফতরের এক আধিকারিক আসেন। বাবুল জানান, তিনি এলাকার বিধায়ক সুজিত বসুকে ফোন করেছিলেন। কিন্তু তিনি জানান, তাঁর অন্য একটি অনুষ্ঠান রয়েছে। তবে বাবুল জানান, দত্তাবাদের পুনর্বাসনের জন্য রাজ্য সরকারি যে কমিটি হয়েছে, তার সঙ্গে আলোচনা করেই তিনি এই সমস্যার সমাধান করতে চান।

উন্নয়নের জন্য আলোচনা করতে আপত্তি নেই বলে জানান এলাকার বিধায়ক সুজিত বসু ও সল্টলেকের বিধায়ক সব্যসাচী দত্তও। সব্যসাচীবাবু বলেন, “দত্তাবাদের মানুষের জন্য সুষ্ঠু পুনর্বাসন ও সুষ্ঠু প্যাকেজ দরকার। আমি সল্টলেকের মানুষ। সল্টলেকের উন্নয়নের জন্য আমাদের দত্তাবাদের কমিটির অন্য নেতারা যদি বসেন, তা হলে আমারও বসতে কোনও আপত্তি নেই।” প্রায় একই বক্তব্য সুজিতবাবুরও। তিনি বলেন, “আমাকে বাবুল ফোন করেছিলেন। ব্যস্ত ছিলাম বলে আসতে পারিনি। তবে পরে এ নিয়ে কোনও রকম আলোচনা হলে আমাদের আপত্তি নেই।”

কিন্তু তিনি কি প্রয়োজনে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবেন? বাবুল বলেন, “এ নিয়ে তো মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার তেমন প্রয়োজন নেই। তবে দরকার হলে নিশ্চয়ই যাব। এঁদের আবার অনেক সময়ে ‘হাফ মন্ত্রীদের’ সঙ্গে দেখা করার ক্ষেত্রে সমস্যা থাকে। কিন্তু ‘হাফ মন্ত্রী’ হলেও আমার উদ্যোগে কোনও খামতি নেই।”

অন্য বিষয়গুলি:

babul supriyo east west metro duttabad
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE