(বাঁ দিক থেকে) তারকেশ্বর চক্রবর্তী, সুব্রত বক্সী, স্বরাজ মণ্ডল। —ফাইল চিত্র।
যাদবপুর-পাটুলি এলাকায় গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ঘটনায় দলের দুই কাউন্সিলরকে শোকজ় করেছিল তৃণমূল। তাঁদের এক জনের জবাব পৌঁছে গেল রাজ্যের দলীয় শীর্ষনেতার কাছে।
দুই গোষ্ঠীর মধ্যে মারপিটের জেরে, গত শুক্রবার কলকাতা পুরসভার ১১০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর স্বরাজ মণ্ডল এবং ১০৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তারকেশ্বর চক্রবর্তীকে শোকজ়ের চিঠি পাঠান তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী। শোকজ়ের জবাব দেওয়ার জন্য দু’জনকেই সাত দিন সময় দেওয়া হয়। সময় শেষ হওয়ার আগেই মঙ্গলবার রাজ্য সভাপতির ভবানীপুরের প্রিয়নাথ মল্লিক রোডের অফিসে নিজের জবাব পৌঁছে দিয়েছেন তৃণমূল কাউন্সিলর স্বরাজ। তিনি নিজে অবশ্য এ প্রসঙ্গে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চাননি। অপর দিকে, কলকাতা পুরসভার ১০৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা ১১ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান তারকেশ্বর বর্তমানে পুরীতে রয়েছেন। বৃহস্পতিবার তাঁর শহরে ফেরার কথা। ফিরেই তিনি রাজ্য সভাপতিকে শোকজ়ের জবাব দেবেন বলে তৃণমূল সূত্রে খবর।
দক্ষিণ কলকাতা জেলা তৃণমূল সূত্রে খবর, শোকজ়ের জবাবে কাউন্সিলর স্বরাজ সেই দিনের ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে দায়ী করেছেন তারকেশ্বরকেই। ঘটনার জন্য যে তিনি নিজে কোনও ভাবে দায়ী নন, তা-ও আত্মপক্ষ সমর্থন করে লিখেছেন তিনি। এ প্রসঙ্গে জানতে কাউন্সিলর তারকেশ্বরের মোবাইলে ফোন করা হয়। কিন্তু তাঁর ফোন বন্ধ ছিল। তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব স্বরাজের জবাবে সন্তুষ্ট কি না, তা জানা যায়নি। দক্ষিণ কলকাতা জেলা তৃণমূলের এক নেতার কথায়, ‘‘একতরফা ভাবে দল বিচার করবে না। স্বরাজ যেমন নিজের কথা রাজ্য সভাপতিকে জানিয়েছেন, তেমনই তারকেশ্বরকেও আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। তাঁর চিঠি পেলে, দু’জনের শোকজ়ের জবাব খতিয়ে দেখেই রাজ্য সভাপতি তাঁদের দলের অবস্থান জানিয়ে দেবেন।’’
তৃণমূলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, শহর কলকাতায় কাউন্সিলরদের এ ভাবে পরস্পরের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ার ঘটনা ভাল চোখে দেখছেন না তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব। তাই প্রথম থেকেই বিষয়টি নিয়ে কড়া পদক্ষেপ করা হয়েছে। যে হেতু ঘটনায় অভিযুক্ত দু’জনেই কলকাতা পুরসভার কাউন্সিলর, তাই মেয়র ফিরহাদ হাকিমের সঙ্গে আলোচনার পরে তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি শোকজ়ের চিঠি পাঠিয়েছিলেন বলে ওই সূত্রের দাবি।
শোকজ়ের চিঠি পাঠানোর পাশাপাশি রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী তথা টালিগঞ্জের বিধায়ক অরূপ বিশ্বাসকে দুই কাউন্সিলরের মধ্যে চলা বিবাদ থামাতে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। দু’জন কাউন্সিলরকে নিয়ে বৈঠক করে, এই বিবাদ যাতে বেশি দূর না গড়ায়, সে বিষয়ে উদ্যোগী হতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। দক্ষিণ কলকাতা জেলা তৃণমূল সূত্রে খবর, শেষ পর্যন্ত এই বৈঠক সম্ভব হয়নি। তাই এখন কাউন্সিলরদের জবাব দেওয়ার পরেই এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ করতে পারেন রাজ্য সভাপতি বক্সী।
১১০ নম্বর ওয়ার্ডের দলীয় দফতরে বসতে যাওয়া নিয়ে দু’পক্ষের গোলমালের সূত্রপাত। ১৮ জুন সন্ধ্যায় স্বরাজ পাটুলি এলাকার পার্টি অফিসে বসতে গেলে তারকেশ্বরের অনুগামীরা আপত্তি জানান বলে অভিয়োগ। অভিযোগ, তারকেশ্বরের অনুগামীরা জানান, ওই পার্টি অফিসের চেয়ারে স্বরাজকে বসতে দেওয়া হবে না। এ নিয়ে প্রথমে ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়। তার পর হাতাহাতি। ঘুষি মেরে স্বরাজের কান ফাটিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় আহত কাউন্সিলরকে। স্বরাজের অভিযোগ ছিল, ১০৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা ১১ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান তারকেশ্বর এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত। তৃণমূলের ওই দফতরে সপ্তাহে অন্তত এক দিন বসেন যাদবপুরের বিধায়ক দেবব্রত মজুমদার। আর বাকি দিন বসেন কাউন্সিলর স্বরাজ। ওই দিন বিবাদের ঘটনা জানতেই প্রকাশ্যে কাউন্সিলরদের নিন্দা করেন মেয়র। তার পর রাজ্য সভাপতির সঙ্গে কথা বলে তাঁদের শোকজ়ের সিদ্ধান্ত হয়। আপাতত জগন্নাথ দর্শন করে ফিরে তারকেশ্বর রাজ্য সভাপতিকে কি জবাব দেন, সে দিকেই তাকিয়ে কলকাতা পুরসভার তৃণমূল কাউন্সিলরেরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy