Advertisement
০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
West Bengal by election 2024

বিধানসভায় শুভেন্দুর শক্তি থাকবে না কমবে? লোকসভা বিপর্যয়ের পর অক্সিজেন পাওয়ার চ্যালেঞ্জ জুলাইয়ে

গত ৪ জুন লোকসভা নির্বাচনের ফলে হতাশ হয়েছে অনেক বড় স্বপ্ন দেখা বিজেপি। এখন এক মাস পরে হতাশা কাটিয়ে ওঠার সুযোগ আগামী ১৩ জুলাই। তিন আসন নিয়ে আশা তৈরি হলেও চ্যালেঞ্জ উপনির্বাচন বলেই।

BJP is under pressure before by election in four assembly seats

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০২৪ ১১:৫৩
Share: Save:

লোকসভা নির্বাচনের বিপর্যয়ের মধ্যে চারটি বিধানসভা আসনে উপনির্বাচনে লড়তে নামছে বিজেপি। যার তিনটি আসনে ২০২১ সালের নীলবাড়ির লড়াইয়ে জিতেছিল তারা। এখন দেখার, সদ্যসমাপ্ত লোকসভা ভোটে পরাজয়ের রেশ কাটিয়ে কি তারা ওই তিনটি আসন ধরে রাখতে পারবে?

ঘটনাচক্রে, লোকসভা ভোটে ওই আসনগুলিতে ‘স্বস্তিজনক’ ভোটে এগিয়ে রয়েছে পদ্মশিবির। কিন্তু ইতিহাস বলছে, উপনির্বাচনে সাধারণত শাসকদল এগিয়ে থাকে। যদিও সাম্প্রতিক কালে সাগরদিঘিতে তার ব্যতিক্রম দেখা গিয়েছিল।

মাস কয়েক আগে জেতা আসন ধূপগুড়ি উপনির্বাচনে হেরেছে বিজেপি। তার পরে পদ্মশিবির থেকে তৃণমূলে যাওয়া তিন বিধায়ক ইস্তফা দিয়েছেন। ফলে বিজেপির আসনসংখ্যা এখন ৭১। সেটি কমপক্ষে ৭৪ করাই বিজেপি এবং বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর কাছে চ্যালেঞ্জ। প্রসঙ্গত, দলের আরও তিন বিধায়ক এখনও তৃণমূল শিবিরে। যদিও এই উপনির্বাচনকে আদৌ ‘চ্যালেঞ্জ’ মনে করছেন না দলের রাজ্য সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার। তাঁর কথায়, ‘‘যে ভাবে ভোট হওয়া উচিত, তেমন হলে তিনটি আসনেই আমাদের জয় নিশ্চিত। মানিকতলাতেও আমরা লড়াই দেব। কিন্তু অতীত অভিজ্ঞতায় তো স্বাভাবিক ভোট হওয়ার নজিরই নেই!’’

পর পর ছ’জন বিধায়ক তৃণমূলে চলে যাওয়ায় বিধানসভায় বিজেপির শক্তি কমে ৬৮ হয়ে গিয়েছে। বিজেপির টিকিটে বিধায়ক মুকুল রায়, হরকালী প্রতিহার এবং সুমন কাঞ্জিলাল এখনও মনেপ্রাণে তৃণমূল। উপনির্বাচনে ৬৮-কে ৭১ করার সুযোগ পাচ্ছে বিজেপি। তেমন হলে তারা খানিকটা মানরক্ষা করতে পারবে।

২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পরে পরেই সেই ভোটে জয়ী দুই বিজেপি সাংসদ জগন্নাথ সরকার এবং নিশীথ অধিকারী বিধায়ক পদ ছেড়ে দিয়েছিলেন। অল্প কিছু দিনের ব্যবধানে তাঁদের শান্তিপুর ও দিনহাটা আসনে বিজেপি বিপুল ভোটে হারে তৃণমূলের কাছে। আবার সাগরদিঘি উপনির্বাচনে জিতেছিলেন বাম-কংগ্রেসের প্রার্থী বায়রন বিশ্বাস। তিনি অবশ্য পরে তৃণমূলে চলে গিয়েছেন।

বিধানসভা ভোটে বিজেপির টিকিটে জিতলেও রায়গঞ্জের কৃষ্ণ কল্যাণী, রানাঘাট দক্ষিণের মুকুটমণি অধিকারী এবং বাগদার বিশ্বজিৎ দাস তৃণমূলে যোগ দেন। তিন জনই সদ্যসমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী হন বিধায়ক পদ ছেড়ে। তিন জনই হেরেছেন। কিন্তু তাঁদের খালি তিনটি বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন হচ্ছে। মানিকতলা কেন্দ্রের ভোট হচ্ছে তৃণমূল বিধায়ক সাধন পাণ্ডের মৃত্যুর কারণে।

BJP is under pressure before by election in four assembly seats

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

সুকান্ত যে সম্ভাবনা ও লড়াইয়ের কথা বলেছেন, তার কারণ অঙ্ক। রায়গঞ্জ, রানাঘাট এবং বনগাঁ লোকসভা আসনে জিতেছে বিজেপি। ওই তিন আসনের অন্তর্গত রায়গঞ্জ, রানাঘাট দক্ষিণ এবং বাগদা বিধানসভা এলাকায় ভাল ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছে পদ্মশিবির। মানিকতলাতেও ২০২১ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে ভোটপ্রাপ্তি বেড়েছে।

তৃণমূল তিনটি আসনের মধ্যে দু’টিতে পুরনো বিধায়কদেরই মনোনয়ন দিয়েছে। তবে বনগাঁয় পরাজিত বিশ্বজিৎ আর বাগদায় প্রার্থী হননি। সেখানে তৃণমূলের প্রার্থী দলের রাজ্যসভার সাংসদ মমতাবালা ঠাকুরের কন্যা মধুপর্ণা ঠাকুর। মতুয়া সম্প্রদায়ের ভরকেন্দ্র ঠাকুরবাড়ির মেয়ের হয়ে মূল লড়াই অবশ্য করবেন তৃণমূলের সাংগঠনিক বনগাঁ জেলার সভাপতি বিশ্বজিৎই। অন্য দিকে, বাগদায় বিজেপি প্রার্থী করেছে সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরের ‘ঘনিষ্ঠ’ বিনয় বিশ্বাসকে। ফলে লড়াই শান্তনুরই। বাকি দুই জেতা আসনেও বিজেপি সংশ্লিষ্ট লোকসভার সাংসদের ‘ঘনিষ্ঠ’দেরই প্রার্থী করেছে। রানাঘাট দক্ষিণে প্রার্থী সাংসদ জগন্নাথের ‘অনুগামী’ হিসাবে পরিচিত মনোজ বিশ্বাসকে। রায়গঞ্জে সাংসদ কার্তিক পালের ‘ঘনিষ্ঠ’ মানস ঘোষকে। তিন জনেই ভোট রাজনীতিতে নতুন। ফলে তিনটি আসনেই প্রার্থীদের জেতানোর মূল লড়াই সাংসদদের।

তবে কলকাতার মানিকলায় বিজেপি নতুন মুখ খোঁজেনি। অতীতে কৃষ্ণনগর লোকসভায় তৃণমূলের মহুয়া মৈত্রের কাছে ও পরে মানিকতলা বিধানসভায় পরাজিত কল্যাণ চৌবেকেই প্রার্থী করেছে তারা। প্রাক্তন ফুটবলার তথা অধুনা ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি কল্যাণের প্রতিপক্ষ সাধন-জায়া সুপ্তি পাণ্ডে। জয় নিয়ে তৃণমূল নিশ্চিত। কিন্তু কল্যাণ আশাবাদী হতে পারেন ভোটের অঙ্ক নিয়ে। ২০২১ সালে ওই আসনে কল্যাণ পেয়েছিলেন ৪৭ হাজারের মতো ভোট। লোকসভা ভোটে তা বেড়ে হয়েছে ৬৩ হাজারের বেশি। তবে মানিকতলা যে লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত, সেখানে জিতেছে তৃণমূল। যদিও শহরাঞ্চলে তৃণমূলের ভোট কমেছে সামগ্রিক ভাবে। ১০ জুলাই ভোটগ্রহণ। গণনা ১৩ জুলাই। সে দিনই জানা যাবে বিধানসভায় হৃতশক্তি কতটা ফেরাতে পারে বিজেপি। বোঝা যাবে, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু বিধানসভায় তাঁর শক্তি একই রাখতে পারলেন, না কি কমে গেল তাঁর ক্ষমতা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE