সাধারণ মানুষের প্রশ্নের জবাবে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে আমি কোনও মন্তব্য করব না।’’ — ফাইল ছবি।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে তিনি কোনও ‘খারাপ কথা’ বলতে চান না। এজলাসে বসে এমন কথা আগেও বলেছেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। মঙ্গলবারও তিনি একই কথা বললেন। এজলাসে বসেই জানালেন, মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে তিনি কোনও মন্তব্য করবেন না। মঙ্গলবার এজলাসে বসেছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। তখনই কয়েক জন সাধারণ মানুষ এগিয়ে এসে কথা বলেন তাঁর সঙ্গে। তখনই তাঁদের এক জন মুখ্যমন্ত্রী সম্পর্কে প্রশ্ন করেন। জবাবে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় ওই ব্যক্তিকে রাজনৈতিক কথা বল তে বারণ করেন। একই সঙ্গে জানান, তিনি মুখ্যমন্ত্রী সম্পর্কে কোনও মন্তব্য করবে না।
গত ডিসেম্বর মাসে একটি মামলার শুনানির সময় রাজ্যের আইনজীবী ভাস্করপ্রসাদ বৈশ্যকে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, মুখ্যমন্ত্রী ভাল কাজ করছেন। তিনি বলেছিলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী ভাল কাজ করছেন। আমি কেন খারাপ কথা বলব? আমাকে বলতে বাধ্য করা হচ্ছে।’’ মঙ্গলবার আদালতে সেই একই কথা জানালেন তিনি। পাশাপাশিই, তাঁর ইস্তফা দেওয়ার প্রসঙ্গ উড়িয়ে দিয়েছেন। জানিয়েছেন, ইস্তফা দেওয়ার কোনও প্রশ্নই নেই।
মঙ্গলবার এজলাসে বসেছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। তখনই কয়েক জন সাধারণ মানুষ এগিয়ে এসে কথা বলেন তাঁর সঙ্গে। সেই কথোপকথন যেমন ছিল—
বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়: দেখতে পাচ্ছি অনেকে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। অনেকের মুখ শুকনো হয়ে গিয়েছে। কী হয়েছে? কী মামলা রয়েছে?
এক ব্যক্তি হাতজোড় করে: শুনলাম। আপনি চলে যাচ্ছেন।
বিচারপতি: আমি চলে যাচ্ছি? আমি কোথাও যাচ্ছি না! তবে হ্যাঁ, এক দিন তো সবাইকে চলে যেতেই হবে। এই সব বাদ দিন। এখানে কোনও মামলা থাকলে বলুন।
ওই ব্যক্তি: যা শুনছি, তা থেকেই বলছি। যোগ্যরা যোগ্য স্থান পান না। আপনি আমাদের কাছে স্বয়ং ঈশ্বর ধর্মাবতার।
এক মহিলা সামনে এগিয়ে এসে: ধর্মাবতার, আপনিই আমাদের কাছে ভগবান। আপনি চলে গেলে কী হবে? আপনাকে ঈশ্বর পাঠিয়েছেন আমাদের মতো মানুষের সুফল দেওয়ার জন্য।
বিচারপতি: এই সব কথা ছাড়ুন। মামলার বিষয়ে কথা বলুন। তা ছাড়া আমি তো এত দিন ছিলাম না। আমার পরে অন্য কেউ আসবেন। আর ঈশ্বর আমাদের সবাইকে পাঠিয়েছেন। ঈশ্বরের উপর ভরসা রাখুন।
ওই মহিলা: সাংবিধানিক পদে থেকে মুখ্যমন্ত্রী কী ভাবে এই সব বেআইনি নিয়োগ নিয়ে কথা বলছেন? যোগ্যরা কি বঞ্চিত হয়েই থাকবে?
বিচারপতি: রাজনৈতিক কথা বলবেন না। মুখ্যমন্ত্রী নিয়ে আমি কোনও মন্তব্য করব না।
আর এক ব্যক্তি (লাঠি ধরে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে) এগিয়ে এসে: ধর্মাবতার, আমি এক জন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি। আমার মামলা তালিকায় রয়েছে।
বিচারপতি: আপনার মামলা আজকেই আমি শুনব। দয়া করে একটু ধৈর্য ধরুন।
বিচারপতি: মামলা ডাকা হোক।
শুনানি শুরু।
বেশ কিছু দিন আগে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় এবিপি আনন্দকে একান্ত সাক্ষাৎকার দেন। সেখানে তিনি বিভিন্ন বিষয়ে মন্তব্য করেন। এই সাক্ষাৎকার দেওয়া নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়। সম্প্রতি এ নিয়ে হলফনামা জমা দিতে বলে সুপ্রিম কোর্ট। শুধু তাই নয়, গত পনেরো দিনে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের বেশ কয়েকটি নির্দেশের কিছু অংশে স্থগিতাদেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। এই পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার প্রথমার্ধে এজলাসে বসেননি বিচারপতি। তার জেরেই জল্পনা শুরু হয় যে, তিনি ইস্তফা দিতে চাইছেন। পরে এজলাসে আসার সময় অন্যদের সঙ্গে আলাপচারিতায় নিজের মত ব্যক্ত করেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়।
তবে তিনি মুখ্যমন্ত্রী সম্পর্কে কোনও মন্তব্য করতে না চাইলেও, তৃণমূল কিন্তু বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের বিভিন্ন ভূমিকায় ‘সন্তুষ্ট’ নয়। সম্প্রতি দলের মুখপাত্র তথা রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষ তাঁকে ‘সরাসরি রাজনীতিতে নামা’র কথা বলেন। তাঁর অভিযোগ, রাজনৈতিক নায়ক হওয়ার জন্য এক্তিয়ার-বহির্ভূত কাজ করছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘‘বিরোধী দল কংগ্রেস, সিপিএম এবং বিজেপির মদতে ঠান্ডা মাথায় অভিষেকের চরিত্রহনন করছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়।’’ বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যাযের সঙ্গে সম্প্রতি কুণালের দেখাও হয় আনন্দবাজার অনলাইনের ‘বছরের বেস্ট’ অনুষ্ঠানে। মুখোমুখি দেখা হওয়ায় উভয়েই সৌজন্য দেখান একে অপরের প্রতি।
এই আবহেই মুখ্যমন্ত্রী সম্পর্কে তিনি কোনও মন্তব্য করতে চান না বলেই জানালেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy