Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
এক বিচারে পৃথক মত

তাপস-মামলা যাচ্ছে প্রধান বিচারপতির কাছে

ডিভিশন বেঞ্চের দুই বিচারপতি ভিন্নমত পোষণ করায় বুধবার তাপস পাল মামলার রায় ঘোষণা হল না। বিরল এই ঘটনার সাক্ষী হয়ে রইল কলকাতা হাইকোর্টের ৪ নম্বর আদালত কক্ষ। এ দিন মামলার রায় ঘোষণা করতে গিয়ে ডিভিশন বেঞ্চের বিচারপতি গিরীশচন্দ্র গুপ্ত বলেন, সিঙ্গল বেঞ্চের (বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তের) রায় তিনি খারিজ করে দিচ্ছেন। ফলে খারিজ হয়ে যাচ্ছে সিআইডি তদন্তের নির্দেশও। পরিবর্তে রাজ্য সরকার এবং তাপস পালের পক্ষ থেকে আলাদা ভাবে যে দুই আবেদন করা হয়েছিল, তাকেই গ্রহণ করছেন তিনি। এবং পুলিশকে নির্দেশ দিচ্ছেন ঘটনার তদন্ত করতে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০১৪ ০৩:৪৭
Share: Save:

ডিভিশন বেঞ্চের দুই বিচারপতি ভিন্নমত পোষণ করায় বুধবার তাপস পাল মামলার রায় ঘোষণা হল না। বিরল এই ঘটনার সাক্ষী হয়ে রইল কলকাতা হাইকোর্টের ৪ নম্বর আদালত কক্ষ।

এ দিন মামলার রায় ঘোষণা করতে গিয়ে ডিভিশন বেঞ্চের বিচারপতি গিরীশচন্দ্র গুপ্ত বলেন, সিঙ্গল বেঞ্চের (বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তের) রায় তিনি খারিজ করে দিচ্ছেন। ফলে খারিজ হয়ে যাচ্ছে সিআইডি তদন্তের নির্দেশও। পরিবর্তে রাজ্য সরকার এবং তাপস পালের পক্ষ থেকে আলাদা ভাবে যে দুই আবেদন করা হয়েছিল, তাকেই গ্রহণ করছেন তিনি। এবং পুলিশকে নির্দেশ দিচ্ছেন ঘটনার তদন্ত করতে।

ডিভিশন বেঞ্চের অন্য বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী ঘোষণা করেন, তিনি রাজ্য সরকার এবং তাপস পালের দায়ের করা আবেদন ‘ডিসমিস’ করে দিয়ে বিচারপতি দত্তের সিঙ্গল বেঞ্চ যে নির্দেশ দিয়েছিল, তা বহাল রাখছেন।

সবিস্তার জানতে ক্লিক করুন।

লোকসভা ভোটের আগে নদিয়ার নাকাশিপাড়া থানা এলাকায় দলীয় জনসভায় উস্কানিমূলক (হেট স্পিচ) বক্তব্য পেশ করেছিলেন কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ তাপস পাল। সেই বক্তব্য সম্প্রতি টিভি চ্যানেল এবং খবরের কাগজে সম্প্রচারিত ও প্রকাশিত হওয়ার পরে রাজ্য জুড়ে শোরগোল পড়ে যায়। তাপস পালের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে পুলিশ নিষ্ক্রিয় এই অভিযোগ তুলে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের হয়। গত ২৮ জুলাই বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত রাজ্য পুলিশের ডিজি-কে নির্দেশ দেন, ৭২ ঘণ্টার মধ্যে তাপস পালের বিরুদ্ধে নাকাশিপাড়া থানায় এফআইআর করা হোক। হাইকোর্টের তত্ত্বাবধানে ঘটনার তদন্ত করবে সিআইডি। তাঁর এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে বিচারপতি গিরীশচন্দ্র গুপ্ত এবং বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর ডিভিশন বেঞ্চে আপিল মামলাটি করা হয়। এ দিন সেই রায় দিতে গিয়ে দুই বিচারপতির মধ্যে মতভেদ দেখা যায়।

তা হলে এই মামলার নিষ্পত্তি কী ভাবে হবে?

হাইকোর্টের আইনজীবীদের অনেকেই জানান, ডিভিশন বেঞ্চের দুই বিচারপতি মামলাটি হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির আদালতে পাঠাবেন। তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন, কার বেঞ্চে মামলাটি যাবে। পরের শুনানি হবে সেই বেঞ্চে।

আইনজীবীরা বলছেন, কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের দুই বিচারপতির মধ্যে এই ধরনের মতভেদের ঘটনা বিরল হলেও নতুন নয়। এমনকী, প্রধান বিচারপতির সঙ্গে অন্য বিচারপতির মত না মেলার ঘটনাও রয়েছে। সেই মামলা তৃতীয় বিচারপতির এজলাসে গেলে চূড়ান্ত রায় প্রধান বিচারপতির মতের বিরুদ্ধেই গিয়েছিল এবং বহালও থেকেছিল।

কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী অরুণাভ ঘোষ জানান, বিচারপতি অশোক মাথুর যখন এখানে প্রধান বিচারপতি, সে সময় তাঁর ডিভিশন বেঞ্চে অ্যান্ড্রু ইউলের একটি মামলা চলছিল। বিচারপতি শুভ্রকমল মুখোপাধ্যায় ছিলেন দ্বিতীয় বিচারপতি। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটিকে কেন্দ্র করে ওই মামলায় বিচার্য বিষয় ছিল, সংবিধানের ২২৬ ধারা প্রয়োগ করা হবে কি না। বিচারপতি মুখোপাধ্যায় ২২৬ নম্বর ধারা প্রয়োগের পক্ষে ছিলেন, আর বিপক্ষে প্রধান বিচারপতি। মামলাটি সিঙ্গল বেঞ্চে পাঠান প্রধান বিচারপতি। ওই বেঞ্চ ২২৬ নম্বর ধারা প্রয়োগের পক্ষেই মত দেয়। সেই রায়ই শেষ পর্যন্ত কার্যকর হয়।

অরুণাভবাবু বলেন, “ব্রিটেন হলে এ দিনই কিন্তু এই মামলার নিষ্পত্তি হয়ে যেত। সিঙ্গল বেঞ্চের বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত যে রায় দিয়েছিলেন, ডিভিশন বেঞ্চের এক জন বিচারপতি তা মেনে নেওয়ায় বিচারপতি দত্তের রায়ই বহাল থাকত। কিন্তু এখানে আইন আলাদা। চূড়ান্ত নিষ্পত্তির জন্য এখন অন্য একটি বেঞ্চের রায়ের উপরে নির্ভর করতে হবে।”

কলকাতা হাইকোর্টের অন্য এক আইনজীবী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, “বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ডিভিশন বেঞ্চ সিঙ্গল বেঞ্চের মতোই কাজ করে। সে ক্ষেত্রে যিনি সিনিয়র সদস্য, তাঁর সিদ্ধান্তই সাধারণত বেঞ্চের সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু এই গুরুত্বপূর্ণ মামলায় বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর পর্যবেক্ষণ দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।”

এ দিন ডিভিশন বেঞ্চ কী রায় দেয়, তা জানতে কৌতূহল ছিল আইনজীবীদের মধ্যে। বুধবার বেলা দু’টো নাগাদ রায় দেওয়ার কথা ছিল। তার আগেই এজলাস ভর্তি হয়ে যায়। দুই বিচারপতি বেলা ২টো ২০ মিনিটে এজলাসে আসেন। প্রথমে বিচারপতি গুপ্ত বক্তব্য পেশ করেন। বিচারপতি চক্রবর্তী পরে জানান, তাঁর মত ভিন্ন। তখনই পরিষ্কার হয়ে যায়, মামলাটি প্রধান বিচারপতির কাছে যাবে।

এই সময় রাজ্যের কৌঁসুলি কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, তাপস পালের আইনজীবী রাজদীপ মজুমদার ও মামলাকারীর আইনজীবী অনিরুদ্ধ চট্টোপাধ্যায় ডিভিশন বেঞ্চের কাছে জানতে চান, সে ক্ষেত্রে সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশের (তাপস পালের বিরুদ্ধে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে এফআইআর দায়ের করে সিআইডি তদন্ত শুরু) কী হবে? আজ, বৃহস্পতিবার ১৪ অগস্ট পর্যন্ত ওই নির্দেশে স্থগিতাদেশ জারি করেছিল ডিভিশন বেঞ্চ। জবাবে দুই বিচারপতিই জানান, ওই নির্দেশের উপর আগামী তিন সপ্তাহ স্থগিতাদেশ থাকবে।

এর আগে গত ৩০ জুলাই ডিভিশন বেঞ্চ প্রশ্ন তুলেছিল, তাপস পালের উস্কানিমূলক (হেট স্পিচ) বক্তব্যের অভিযোগ পেয়ে নাকাশিপাড়া থানা যদি জেনারেল ডায়েরি করেই থাকে, তা হলে বিচারপতি দত্তের আদালতে তা জানানো হয়নি কেন?

ডিভিশন বেঞ্চে রাজ্য জানায়, তাপস পালের ওই বক্তব্যের ভিডিও ফুটেজ পুলিশ টিভি চ্যানেলের কাছে ইতিমধ্যেই চেয়ে পাঠিয়েছে। তদন্তও শুরু করেছে। তখন বিচারপতি গুপ্ত সরকারি কৌঁসুলিকে প্রশ্ন করেন, কেন সেই তথ্য বিচারপতি দত্তের আদালতে আগে পেশ করা হয়নি? পরে সরকারি আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে তিনি প্রশ্ন করেন, “আপনিও তো এক জন সাংসদ। সাংসদ তাপস পালের ওই বক্তব্য সম্পর্কে আপনার বক্তব্য কী?” ওই দিনই ডিভিশন বেঞ্চের দুই বিচারপতি তাপস পালের উস্কানিমূলক বক্তব্যের সিডি-টি আদালতে ল্যাপটপে চালিয়ে দেখেছিলেন, ঠিক যে ভাবে দেখেছিলেন বিচারপতি দত্ত।

অন্য বিষয়গুলি:

tapas pal case judges differ
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE