Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Diptangshu Chowdhury

দিদি-ফোনের পরেও সুনীলের বাড়িতে শুভেন্দুর সঙ্গে জিতেন্দ্রর বৈঠক

ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি, শুভেন্দুর সুনীলের বাড়িতে যাত্রা নেহাতই সামাজিক কারণে। এর মধ্যে কোনও রাজনৈতিক অঙ্ক নেই।

বাঁ দিক থেকে কর্নেল দীপ্তাংশু চৌধুরী, শুভেন্দু অধিকারী এবং জীতেন্দ্র তিওয়ারি।

বাঁ দিক থেকে কর্নেল দীপ্তাংশু চৌধুরী, শুভেন্দু অধিকারী এবং জীতেন্দ্র তিওয়ারি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
আসানসোল শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০২০ ২২:০৪
Share: Save:

তাঁর ক্ষোভ প্রশমিত করতে বুধবার দুপুরের কিছু পরে জিতেন্দ্র তিওয়ারিকে ফোন করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেছিলেন, জিতেন্দ্রর বিষয়টি তিনি নিজে দেখছেন। আসানসোল পুরসভার প্রধান প্রশাসক এবং পাণ্ডবেশ্বরের বিধায়ক জিতেন্দ্র তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বৈঠকে বসে পড়লেন শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে। ঘটনাস্থল: তৃণমূলের সাংসদ সুনীল মণ্ডলের বাড়ি। যে সুনীল বুধবার সকালেই দল এবং দলের নিযুক্ত ভোট-কৌশলী প্রশান্ত কিশোর সম্পর্কে তাঁর ‘উষ্মা’ প্রকাশ্যে জানিয়ে দিয়েছেন। সুনীলের বাড়িতে ওই বৈঠকে ছিলেন কালনার বিধায়ক বিশ্বজিৎ কুণ্ডু এবং দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের চেয়ারম্যান দীপ্তাংশু চৌধুরী। ঘটনাচক্রে, দীপ্তাংশু আগে বিজেপি-তে ছিলেন। এখন তিনি তৃণমূলে। সম্প্রতি সরকারি পদও পেয়েছেন।

সুনীলের সম্প্রতি মাতৃবিয়োগ হয়েছে। শুভেন্দুর ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি, সেই কারণেই তাঁকে সমবেদনা জানাতে রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী এবং প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক তাঁর বাড়িতে গিয়েছিলেন। শুভেন্দুর সুনীলের বাড়িতে যাত্রা নেহাতই সামাজিক কারণে। এর মধ্যে কোনও রাজনৈতিক অঙ্ক নেই। বিশ্বজিতের উপস্থিতি নিয়ে কৌতূহল জন্মালেও তৃণমূলের দাবি, তাঁর লোকসভা এলাকার বিধায়ক হিসেবে বিশ্বজিৎ সামাজিক কারণে সুনীলের বাড়িতে গিয়েছিলেন। তৃণমূলের ওই সূত্রেরই আবার দাবি, সুনীলের বাড়িতে সমবেদনা জানাতে গিয়েছিলেন দীপ্তাংশুও। তবে শাসক শিবিরের অন্য একটি সূত্রের অভিমত, সুনীল প্রকাশ্যে ক্ষোভের কথা জানানোর পর দীপ্তাংশু তাঁর সঙ্গে দলের তরফে কথা বলতে গিয়েছিলেন। প্রায় দেড় ঘন্টা তাঁরা সকলেই ওই বাড়িতে ছিলেন। সেখানে তাঁদের সঙ্গে ছিলেন আসানসোল পুরনিগমের বেশ কয়েক জন বিদায়ী কাউন্সিলর-সহ আসানসোল-দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের বেশ কয়েক জন তৃণমূল যুবনেতাও।

বুধবার বিকালে বিধানসভায় ইস্তফাপত্র জমা দিয়ে সেখান থেকেই শুভেন্দু সটান চলে আসেন পশ্চিম বর্ধমান জেলার কাঁকসায় সুনীলের বাড়িতে। তাঁর ঘনিষ্ঠ সূত্রে বলা হয়, সুনীলের মাতৃশ্রাদ্ধে শুভেন্দু আসতে পারেননি। তাই তিনি সহকর্মী সাংসদের সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন। সুনীলের বাড়ি থেকে বেরিয়ে শুভেন্দু গাড়িতে উঠে রওনা হয়ে যান। সংবাদমাধ্যমের কোনও প্রশ্নের জবাব তিনি দেননি। তাই ওই ‘বৈঠক’ নিয়ে জল্পনা আরও বেড়েছে। বিশেষত, জিতেন্দ্রকে নিয়ে। কারণ, বুধবার সকালেই জিতেন্দ্র তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের একটি সভায় বক্তৃতা করতে গিয়ে শুভেন্দুর ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘‘শুভেন্দু অধিকারী গুলির সামনে দাঁড়িয়ে লড়াই করেছেন। উনি নেতা হবেন না তো কে নেতা হবে! যে যা-ই বুক, এটা তো অস্বীকার করার উপায় নেই যে, তৃণমূলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরেই সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা শুভেন্দু অধিকারী।’’

আরও পড়ুন: স্পিকার ডাকলে আবার এসে তাঁর হাতেই ইস্তফা দিয়ে যাবেন ‘মুক্ত’ শুভেন্দু

জিতেন্দ্র যে সভা থেকে ওই কথা বলেছিলেন, সেই সভা থেকেই দলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন দুর্গাপুর পশ্চিমের তৃমমূল বিধায়ক বিশ্বনাথ পরিয়াল। ২০১৬ সালে কংগ্রেসের টিকিটে জিতলেও তিনি তৃণমূলে চলে এসেছিলেন। ওই সভায় জিতেন্দ্রর পরেই বলতে উঠে বিশ্বনাথ বলেছিলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চাইলে আজ রাতের মধ্যে ইস্তফা দিয়ে দিতে পারি।’’ বিশ্বনাথ অবশ্য সুনীলের বাড়ির বৈঠকে ছিলেন না। যাঁরা ছিলেন, তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জল্পনা অবশ্য জিতেন্দ্রকে নিয়েই। বুধবার রাত পর্যন্ত তিনি নীলবাতি লাগানো সরকারি গাড়ি ব্যবহার করেননি। যেখানেই গিয়েছেন, ব্যবহার করেছেন ব্যক্তিগত গাড়ি। তবে মমতার ফোনের পর দৃশ্যতই তাঁকে খানিকটা টেনশুনমুক্ত দেখিয়েছিল। মমতা জিতেন্দ্রকে বলেছিলেন ‘মাথা ঠান্ডা’ রাখতে। তিনি পুরো বিষয়টি দেখে নেবেন। জিতেন্দ্র যেন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস ছাড়া কলকাতায় আর কারও সঙ্গে যেন কথা না বলেন। আগামী শুক্রবার মমতার সঙ্গে জিতেন্দ্রের বৈঠক হওয়ার কথা। তার আগে বুধবার সখালে জিতেন্দ্র ওই সভা থেকে বলেছিলেন, তাঁকে শুক্রবার পর্যন্ত দলের হয়ে কোনও মিটিং-মিছিল করতে বারণ করে বার্তা পাঠানো হয়েছে। সেই প্রেক্ষিতে তিনি জেলা সভাপতির পদ ছাড়ারও হুমকি দিয়েছিলেন।

আরও পড়ুন: ‘নিজের আগুনেই ছাই হবে তৃণমূল’, ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ শুভেন্দুকে শুভেচ্ছা মান্নানের

জিতেন্দ্রের মূল অভিযোগ রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ (ববি) হাকিমের বিরুদ্ধে। ‘নিষেধাজ্ঞা’র বিষয়টি নিয়েও পরোক্ষে তাঁর অভিযোগের তির ছিল ববির দিকেই। ববি যদিও বলেন, তিনি এমন কোনও নিষেধাজ্ঞার কথা জানেন না। ববি বলেন, ‘‘দলের তরফে জিতেন্দ্রকে এমন কোনও বার্তা পাঠানো হয়েছে বলে আমি অন্তত জানি না।’’ পাশাপাশিই তিনি আশা প্রকাশ করেন, আলোচনার মাধ্যমে সমস্ত সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। তবে রাতের শুভেন্দুর সঙ্গে জিতেন্দ্রের বৈঠক আবার নতুন জল্পনার জন্ম দিয়েছে।

আরও পড়ুন: ষড়যন্ত্র হচ্ছে তাঁর বিরুদ্ধে, হস্তক্ষেপ চেয়ে রাজ্যপালকে চিঠি দিলেন শুভেন্দু

অন্য বিষয়গুলি:

Diptangshu Chowdhury Suvendu Adhikari Jitendra Tiwary TMC BJP Asansol
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy