ধুলোয় ঢাকা কারখানায় মিষ্টিমুখ কর্মীদের। তবে জেসপের ভবিষ্যৎ ততটা মিষ্টি হবে কি না, সেই প্রশ্ন থাকছেই। ছবি: শৌভিক দে
ওয়াগন তৈরির কারখানা জেসপ খুলল শনিবার। পুজোর আগে নিজের গোষ্ঠীর অন্য কারখানা সাহাগঞ্জের ডানলপও খোলার আশ্বাস দিলেন সংস্থার কর্ণধার পবন রুইয়া। কিন্তু মান্ধাতার আমলের যন্ত্রপাতি ও পরিচালন ব্যবস্থা নিয়ে জেসপ অথবা ডানলপ আদৌ কত দিন চলবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েই গিয়েছে।
দমদমের জেসপ কারখানা এ যাত্রায় বন্ধ ছিল ৮৬ দিন। এই সময়ের মধ্যে রাতের অন্ধকারে কারখানার ভিতর থেকে বহু যন্ত্রপাতি বাইরে চলে গিয়েছে। এই নিয়ে মালিকপক্ষের দাবি ছিল, কারখানার গেট ভেঙে মালপত্র চুরি হয়েছে। অন্য দিকে কারখানার শ্রমিকরা অভিযোগ করেছিলেন, মালিকপক্ষই কৌশলে গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রপাতি সরিয়ে নিয়েছে।
এ দিন কারখানার দরজা খুলতে সেই হতশ্রী চেরাহাটাই দেখতে পেলেন সকলে। রোড রোলার ডিভিশনের কর্মী তপন বাগাল জানান, দেখে মনে হচ্ছে ডাকাতি হয়েছে। ক্রেন চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় তামার কেবল লাইনের বেশির ভাগই উধাও। গোটা ইউনিটে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। যে ট্র্যাকের ওপর দিয়ে ক্রেন যায়, সেটাও চুরি হয়ে গিয়েছে। তাঁর কথায়, “দু’মাসের মধ্যে কারখানার উৎপাদন চালু করতে গেলে মালিককে অনেক টাকা ঢালতে হবে।” আর এক কর্মী নেপাল দাসের দাবি, লোহার হুকও খুলে নিয়ে গিয়েছে। রোড রোলার ডিভিশনে ৫৮টি ক্রেনের মধ্যে মাত্র কয়েকটির মোটর ঠিক আছে। সব মিলিয়ে তাই কারখানা খোলার চাপা আনন্দের মধ্যেও সংশয়ের সুর অনেকের মধ্যে। যদিও উৎপাদন চালু করার জন্য দু’মাস সময় চেয়েছেন মালিকপক্ষ।
জেসপের সিটু ইউনিয়নের নেতা অসিত সেন এবং ইনটাকের সমীর মুখোপাধ্যায় উৎপাদন বাড়াতে সব রকম সহযোগিতা আশ্বাস দিলেও ইএমইউ কোচ বিভাগের কর্মী পার্থপ্রতিম চৌধুরীর প্রশ্ন, “২০০৩ সালে জেসপ হাতে নেওয়ার পর কর্তৃপক্ষ কারখানার আধুনিকীকরণের ব্যাপারে আদৌ উদ্যোগী হননি। বর্তমানে তীব্র প্রতিযোগিতার বাজারে পুরনো মেশিনপত্র নিয়ে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারবে তো জেসপ?” বস্তুত, এই প্রশ্নটাই এ দিন ঘুরেফিরে বেড়িয়েছে। শ্রমিক-কর্মীদের বকেয়া মেটানোর আশ্বাস দিয়ে গেট খুললেও বর্তমান পরিকাঠামো নিয়ে এই কারখানা লাভের মুখ দেখা সম্ভব কি না, সেই প্রশ্ন উঠেছে। পবন রুইয়া এ দিন বলেছেন, “উৎপাদনশীতা লক্ষ্যমাত্রা ছাড়ালে কর্মীরা মুনাফার ভাগ পাবেন।” কিন্তু উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর জন্য সংস্থার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী, প্রতিযোগিতার বাজারে কারখানার আধুনিকীকরণের জন্য তিনি কী পদক্ষেপ করছেন তা নিয়ে কিছুই বলেননি রুইয়া।
তবু কারখানা খোলায় খুশি রাজ্য সরকার। এ দিন সকালে রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটকের বাড়িতে জেসপ খোলার জন্য ত্রিপাক্ষিক চুক্তি হয়। পরে কারখানা খোলার অনুষ্ঠানে মলয়বাবু ছাড়াও হাজির ছিলেন শিল্পমন্ত্রী অমিত মিত্র, স্থানীয় সাংসদ সৌগত রায়রা মন্ত্রীরা কারখানায় শান্তি বজায় রাখার আবেদন জানান। অমিত মিত্র বলেন, “দাবিদাওয়া নিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে শ্রমিকদের মতভেদ হতে পারে। দেখতে হবে, এতে যেন কারখানা বন্ধ না হয়।” মলয়বাবু বলেন, “কারখানা বেঁচে থাকলে তবেই কর্মীরা বাঁচবেন। তাই কারখানা চালু রেখে তাঁকে লাভজনক করে তোলার জন্য কর্মীদের সদর্থক ভূমিকা নিতে হবে।”
এ দিন কর্মীদের এক কিস্তি বকেয়া বেতন দেওয়া হয়েছে। তবে জেসপ কোম্পানি লিমিটেড ওয়াকার্স অ্যান্ড এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সম্পাদক শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেন, বকেয়া বেতনের টাকা এসেছে অন্য একটি সংস্থা থেকে। তাঁর আরও অভিযোগ, কারখানা ভেঙে জমি বিক্রির চেষ্টা করেছিলেন রুইয়া। এখন কারখানা খোলায় খুশি হলেও দেখতে হবে চুক্তি মতো সব কিছু দেওয়া হচ্ছে কি না। কারখানার ৬৫০ জন স্থায়ী কর্মীকে দু’মাসের মধ্যে কাজে ফেরানোর আশ্বাস দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।
ডানলপ খোলার ব্যাপারে পবন রুইয়া বলেন, “কথাবার্তা অনেকটা এগিয়েছে। সরকারের মধ্যস্থতায় তিন দফা বৈঠক হয়েছে। বিশেষ কোনও বাধা না এলে পুজোর আগে ডানলপের সাহাগঞ্জ কারখানা খুলে যাবে।” শ্রমমন্ত্রী বলেন, “ডানলপ নিয়ে আমি বিশেষ আশাবাদী। বৈঠকগুলি সদর্থক হয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy