ঘুসুড়ির ঘুষ-কাণ্ডে বালি পুরসভার সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার প্রণব অধিকারীর ঘনিষ্ঠ কয়েক জন স্থানীয় প্রোমোটার ও ঠিকাদারকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে রাজ্য দুর্নীতিদমন শাখা। তদন্তে জানা গিয়েছে, বালি পুর-এলাকায় একের পর এক বেআইনি বহুতল তৈরির পিছনে এক দল প্রোমোটার সিন্ডিকেট তৈরি করেছিলেন। আর তাতেই মদত দিতে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় নেমেছিলেন প্রণববাবু।
দুর্নীতিদমন শাখা সূত্রের খবর, প্রণবের বাড়ি থেকে কিছু নথি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। যা থেকে কয়েক জন প্রোমোটার, ঠিকাদারের নাম মিলেছে। ওই প্রোমোটারদের সঙ্গে দীর্ঘ দিন ধরে লেনদেনের সম্পর্ক ছিল বলে ওই ইঞ্জিনিয়ার জানিয়েছেন। তদন্তকারীদের দাবি, মাসখানেক আগে পুরসভার চার জন ঠিকাদারের কাছে মোটা টাকা ঘুষ নিয়েছিলেন বলে কবুল করেছেন প্রণব। ওই ঠিকাদারদের নামও জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা।
ইতিমধ্যেই বালি-বেলুড়-লিলুয়া এলাকার বিভিন্ন নির্মীয়মাণ বহুতলের প্রোমোটার, ঠিকাদারের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে। তবে তাঁদের অধিকাংশই গা-ঢাকা দিয়েছেন বলে পুলিশ সূত্রের খবর। অন্য দিকে আত্মপ্রকাশ সিংহ নামে যে প্রোমোটারের অভিযোগের ভিত্তিতে প্রণব ধরা পড়লেন, এ দিন সেই প্রোমোটারকে এক জন কাউন্সিলর ফোনে হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ। মঙ্গলবার প্রণবের বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া ২১ কোটি টাকা রিজার্ভ ব্যাঙ্কে জমা দিয়েছে রাজ্য দুর্নীতিদমন শাখা। তার ভিত্তিতে মঙ্গলবার রাতেই ওই ইঞ্জিনিয়ারের বিরুদ্ধে আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন সম্পত্তির মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রণব এবং তাঁর স্ত্রী কৃষ্ণাদেবীর নামেও আলাদা একটি মামলা দায়ের হয়েছে। কৃষ্ণাদেবীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠানো হবে।
রাজ্য দুর্নীতিদমন শাখা সূত্রে খবর, ১৯৯৫ সালে বালি পুরসভায় কাজে যোগ দেওয়ার আগে সিপিএম ঘনিষ্ঠ হাওড়ার এক শিল্পপতির কাছে ইঞ্জিনিয়ার ও নির্মাণ ব্যবসার ম্যানেজার হিসেবে চাকরি করতেন প্রণব। কোনা, সালকিয়া, বেলুড় এলাকায় ওই শিল্পপতির বিভিন্ন নির্মাণের প্রধান কারিগর ছিলেন তিনি। ওই শিল্পপতির হাত ধরেই হাওড়া পুরসভার এক শীর্ষ কর্তা তথা সিপিএমের হেভিওয়েট নেতার সঙ্গে পরিচয় হয় তাঁর। ওই নেতার নির্দেশেই সিপিএমের আর এক শ্রমিক নেতার হস্তক্ষেপে ১৯৯৬ সালে বালি পুরসভায় সার্ভেয়ার হিসেবে কাজে যোগ দেন প্রণব। একই সঙ্গে ওই পদে ঢুকেছিলেন বাসুদেব দাসও। ২০০৫ নাগাদ সার্ভেয়ার থেকে তাঁরা সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার হন। প্রণবকে দায়িত্ব দেওয়া হয় লিলুয়ার, আর বাসুদেবকে বালির দায়িত্ব পান। তাঁর বাড়িতেও ইতিমধ্যেই তল্লাশি চালিয়েছেন গোয়েন্দারা।
তদন্তকারীরা আরও জেনেছেন, মূলত সেই সময় থেকেই বেআইনি নির্মাণে মদত দিতে শুরু করে ছিলেন প্রণব-সহ বালির ইঞ্জিনিয়ারদের একাংশ। তদন্তে জানা গিয়েছে সেই সময় থেকেই এখন পর্যন্ত প্রতি বছরে বালি পুর এলাকায় ৪০০ থেকে ৫০০ নির্মাণ হত। এর ৭০ শতাংশই ছিল বহুতল। আরও জানা গিয়েছে, বালি পুর এলাকায় খাতায় কলমে ২৮ জন এলবিএস (লাইসেন্সড বিল্ডিং সার্ভেয়ার) থাকলেও সমস্ত নির্মাণের সাইট প্ল্যান করতেন মূলত পাঁচ–ছ’জন। আর এঁদের কয়েক জন ছিলেন নিজেরাই প্রোমোটার। আবার পুরসভার খাতায় রাস্তা তৈরির ঠিকাদার হিসেবে পরিচয় থাকলেও ছয়-সাত জন স্থানীয় যুবক আদপে ছিলেন প্রোমোটার। তদন্তকারীরা জেনেছেন, এই সব প্রোমোটার মিলেই তৈরি করেন সিন্ডিকেট। প্রণববাবু জেরায় জানিয়েছেন, এদের সঙ্গে যোগ ছিল নেতা থেকে শুরু করে বালি-উত্তরপাড়া এলাকার কুখ্যাত দুষ্কৃতীদের। এই নেতা-দুষ্কৃতীদের একাংশ নির্মাণকাজে টাকাও বিনিয়োগ করতেন বলে প্রণববাবু জানিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy