মালদহের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত— নিজস্ব চিত্র।
কেন্দ্রের শাসক বিজেপি-র সঙ্গে রাজ্যে ক্ষমতাসীন তৃণমূলের মতপার্থক্য রয়েছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে। সেই রাজনৈতিক বিরোধের প্রতিফলন প্রায়শই মেলে কেন্দ্র-রাজ্য দ্বন্দ্বে । কিন্তু বিরোধের সেই পরম্পরা ধাক্কা খেয়েছে মালদহের আন্তর্জাতিক সীমান্তে। সেখানে পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে দুই সরকারের যৌথ উদ্যোগে কাঁটাতারবিহীন এলাকায় বেড়া বসছে।
মালদহের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটে প্রায়শই। অভিযোগ, জাল টাকা এবং গরু পাচার, বেআইনি অস্ত্র আর মাদক কারবার এমনকি, জঙ্গিদের যাতায়াতের অন্যতম করিডোর এই জেলার সীমান্ত। ভৌগোলিক কারণে এই সীমান্তে বেশ কিছু সুবিধা থাকায় দেশবিরোধী শক্তির কাছে মালদহের সীমান্ত সহজ যাতায়াতের করিডোর। জেলার ১৭২কিলোমিটার সীমান্ত এলাকার মধ্যে প্রায় ৩০ কিলোমিটার নদীপথ। তা ছাড়া জমি সংক্রান্ত জটের জন্য কোনও কাঁটাতার নেই বেশ কিছু এলাকায়।
এই পরিস্থিতিতে সীমান্ত অপরাধ রুখতে সক্রিয় হয় কেন্দ্রীয় সরকার। রাজ্যের কাছে এই সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনাও করে কেন্দ্র। সীমান্তের সুরক্ষা সুনিশ্চিত করতে কেন্দ্রকে সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় রাজ্যের তরফে।
ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে সীমান্ত বরাবর কোথাও যেন কাঁটাতার বিহীন এলাকা না থাকে, তা নিশ্চিত করতে উদ্যোগী হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। সীমান্তের মধ্যে কাঁটাতার নেই মালদহের এমন জায়গাগুলিতে কাঁটাতার বসানোর জন্য রাজ্যের সহায়তায় জমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে। ইতিমধ্যেই বেশ কিছু জায়গায় জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শেষও হয়েছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, যত দ্রুত সম্ভব এই অধিগ্রহণ শেষ করে নির্ধারিত প্রক্রিয়া মেনেই তা সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)-এর হাতে দেওয়া হবে।
মালদহের জেলাশাসক রাজর্ষি মিত্র বলেন, ‘‘কালিয়াচক-৩ ব্লকে এই লক্ষ্যে জমি অধিগ্রহণের কাজ অনেকটাই সম্পন্ন হয়ে গিয়েছে। ওই ব্লকের অন্য জায়গাগুলিতে এবং হবিবপুর ব্লকে নির্দিষ্ট নিয়ম মেনেই অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শেষ করা হবে।’’
জেলা ভূমি রাজস্ব দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ভারত–বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী কালিয়াচক-৩ ব্লকের পারদেওনাপুর–শোভাপুর এলাকায় ১.৭৫ একর জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া ইতিমধ্যেই শেষ হয়েছে। ৩০০ মিটার দীর্ঘ এলাকায় কাঁটাতার বসানোর জন্য ওই অধিগৃহীত জমি ব্যবহার করা হবে। ওই ব্লকেরই সবদলপুর এলাকায় ১.২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এলাকায় কাঁটাতার বসানোর জন্য ৯ একর জমি অধিগৃহীত হয়েছে বলে ভূমি রাজস্ব দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। এখনও পর্যন্ত প্রায় শ’তিনেক পরিবার নির্ধারিত ক্ষতিপূরণের বিনিময়ে ওই জমি তুলে দিয়েছেন। এই জমিগুলির প্রায় পুরোটাই পতিত জমি হওয়ায় অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা হয়নি বলেই জানিয়েছেন দফতরের এক আধিকারিক।
আরও পড়ুন: গালওয়ানে ছক কষেই হামলা চিনের, দাবি আমেরিকার রিপোর্টে
একই সঙ্গে কালিয়াচক-৩ ব্লকের মিলিক সুলতানপুর এলাকাতেও আন্তর্জাতিক সীমান্ত বরাবর কাঁটাতার বসানোর জন্য জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব রয়েছে। ওই এলাকার বিভিন্ন জায়গায় মোট ২.২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ জায়গা বরাবর কাঁটাতার বসানোর জন্য জমি প্রয়োজন। তার জন্য প্রয়োজনীয় নথি রাজ্য মন্ত্রিসভা অনুমোদন করলেই অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরুর সম্ভাবনা রয়েছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে।
এ ছাড়াও মালদহের হবিবপুর ব্লকের তিলাশন থেকে পান্নাপুর পর্যন্ত ২৯ কিলোমিটার দীর্ঘ আন্তর্জাতিক সীমান্ত বরাবর কাঁটাতার বসাতে ২৫০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হতে পারে বলে জানা গিয়েছে ভূমি রাজস্ব দফতর সূত্রে। যে এলাকাগুলিতে দুই দেশের মধ্যে নদী বা জলসীমান্ত রয়েছে সেখানে নদী থেকে প্রায় ১৫০ গজ দূর থেকে কাঁটাতার বসানোর প্রস্তাব রয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
আরও পড়ুন: তিন দশক পর ভারত থেকে চাল আমদানি করছে চিন
সীমান্ত বরাবর কাঁটাতার পুরোপুরি বসানো হয়ে গেলে আন্তর্জাতিক পাচার সংক্রান্ত অপরাধ অনেকটাই কমবে বলে আশাবাদী বিএসএফ কর্তারা। আশাবাদী পুলিশ-প্রশাসন এবং গোয়েন্দা বিভাগের আধিকারিকেরাও। তাঁদের মতে, জলপথে গবাদি পশু পাচার রুখতেও তখন নজরদারি চালানো অনেক সোজা হবে। কমে আসবে সীমান্ত এলাকার অপরাধ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy