পায়েল খাতুন
মাস কয়েক আগেও তাঁর পরিচয় ছিল রূপান্তরকামী। সাড়ে সাত মাসের চেষ্টায় অস্ত্রোপচারের পরে এখন তিনি রূপান্তরিত। চিকিৎসকের যাবতীয় সার্টিফিকেট এমনকি আদালতের সিলমোহরেও পায়েল খাতুন এখন শারীরিক ভাবে মহিলা। কিন্তু তাঁর অনড় শ্বশুরবাড়ি সে সবের তোয়াক্কা না করে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, পায়েলের সঙ্গে শুকচাঁদের আর যাই হোক বৈবাহিক সম্পর্ক সম্ভব নয়। এ ব্যাপারে তাই উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হওয়াই স্থির করেছেন নওদার আমতলা গ্রামের পায়েল। তাঁর দাবি, ‘‘রেজিস্ট্রি করা বিয়ে কী করে নাকচ করে শুকচাঁদের পরিবার, এ বার তাই দেখতে চাই!’’
বছর কুড়ির রিন্টু মালিত্যা এ বছরের শুরুতে অস্ত্রোপচার করে মহিলা হয়েছেন। গত এপ্রিলে নওদার সোনাটিকুরি গ্রামের বছর চব্বিশের শুকচাঁদ শেখকে রেজিস্ট্রি বিয়ে করেন পায়েল। পরিযায়ী শ্রমিক শুকচাঁদকে বিয়ে করে বেঙ্গালুরুতে সংসারও পেতেছিলেন তিনি। কিন্তু মাস তিনেক আগে গ্রামে ফেরার পরেই শুকচাঁদকে কার্যত ‘গৃহবন্দি’ করে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন পায়েল। তার পর থেকে শুরু হয়েছে ওই রূপান্তরিত মহিলার লড়াই।
সে লড়াইয়ের প্রথম ধাপে শুকচাঁদের পরিবারের দাবি ছিল—আগে পায়েল প্রমাণ করুক সে সম্পূর্ণ এক মেয়ে। তার পরে তাকে ছেলের বৌ হিসেবে তাঁরা মেনে নেবেন। কিন্তু যাবতীয় নথি দেখেও মন গলছে না সোনাটিকুরির ওই পরিবারের।
পায়েল বলছেন, ‘‘শুকচাঁদকে ভালোবেসেই বিয়ে করেছিলাম। এক সঙ্গে দিব্যি সংসারও পেতেছিলাম আমরা। কিন্তু শুকচাঁদকে ভুলিয়ে-ভালিয়ে গ্রামে ডেকে এনে তাকে বন্দি করে রেখেছে তার পরিবার। আমাদের মধ্যে যোগাযোগ সেই থেকে বন্ধ।’’
পায়েলের দাবি— বেঙ্গালুরু এবং কলকাতার হাসপাতালের সার্টিফিকেট রয়েছে তাঁর কাছে। রয়েছে চিকিৎসকের নথিপত্রও। বুধবার, বহরমপুরের এসডিইএম(এস) আদালতও এফিডেফিট করে তাঁকে মেয়ে বলে ঘোষণা করেছে। তার পরেও সন্দেহ?
শুকচাঁদের পরিবারের পক্ষ থেকে পাল্টা দাবি করা হয়েছে— ওর সার্টিফিকেট যে আসল তার প্রমাণ কী!
পায়েলের স্কুলের নথিপত্র, সচিত্র পরিচয়পত্র সবেই উল্লেখ রয়েছে রিন্টু মালিত্যা। লিঙ্গ, আধার কার্ড, রেশন কার্ড এবং ভোটার কার্ডে লিঙ্গের জায়গায় লেখা রয়েছে ‘পুরুষ’। শুকচাঁদের পরিবারের প্রশ্ন— সেগুলির কী হবে?
পায়েল বলেন, ‘‘আমি মনের দিক থেকে বরাবরই মেয়ে। অস্ত্রোপচারের পর আমি সম্পূর্ণ ভাবে এক জন নারী। এর পরেও নিজেকে নারী হিসেবে প্রমাণ করব কী করে!’’
পায়েলের এই লড়াইয়ে পাশে দাঁড়িয়েছে রূপান্তরকামীদের সংগঠন ‘মধ্য বাংলার সংগ্রাম’। সংগঠনের জেলা সম্পাদক অরুনাভ নাথ বলেন, ‘‘কী অপরাধ পায়েলের, বলতে পারেন? আমরা পায়েলের পাশে রয়েছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy