স্কুল স্তরে পাশ-ফেল ফিরবে কি না, ফিরলে কবে ফিরবে, তা নিয়ে টানাপড়েন চলেছেই। এরই মধ্যে আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে পঞ্চম এবং অষ্টম শ্রেণিতেও বোর্ডের পরীক্ষা চালু করছে আইসিএসই। তবে ওই জোড়া পরীক্ষায় পাশ-ফেল থাকবে না। এর সঙ্গে প্রাক্-প্রাথমিক থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রতিটি স্কুলে নতুন পাঠ্যক্রমও আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে বাধ্যতামূলক ভাবে চালু করা হচ্ছে।
সিবিএসই, পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদ-সহ বিভিন্ন বোর্ডের মতো আইসিএসই-তেও এত দিন প্রথম বোর্ড-পরীক্ষা নেওয়া হতো দশম শ্রেণিতে। মাঝখানে কোনও শ্রেণিতেই বোর্ডের তরফে পরীক্ষার ব্যবস্থা ছিল না। তা হলে আইসিএসই বোর্ড হঠাৎ পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে পরীক্ষার বন্দোবস্ত করছে কেন?
আইসিএসই বোর্ড সূত্রের খবর, এই জোড়া পরীক্ষার উদ্দেশ্য মূলত দু’টি। প্রথমত, পড়ুয়াদের সাধারণ বোধবুদ্ধি যাচাই করা এবং কোন বিষয়ে তাদের আন্তরিক আগ্রহ আছে, সেই প্রবণতার খোঁজখবর নেওয়া। যাতে মানস-প্রবণতা অনুযায়ী তাদের ভবিষ্যতের জন্য যথাসম্ভব তৈরি করে দেওয়া যায়। দ্বিতীয়ত, শিক্ষক-শিক্ষিকারা নতুন পাঠ্যক্রম অনুযায়ী পড়ুয়াদের যথাযথ ভাবে এগিয়ে দিতে পারছেন কি না, তার একটা প্রচ্ছন্ন মূল্যায়নও এই পরীক্ষার লক্ষ্য।
আইসিএসই বোর্ডের দাবি, পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে তাদের পরীক্ষার জন্য ছাত্রছাত্রীদের উপরে বাড়তি চাপের প্রশ্নই নেই। কেননা ওই পরীক্ষার জন্য আলাদা প্রস্তুতির প্রয়োজন হবে না বলে আশ্বাস দিয়েছেন আইসিএসই বোর্ডের সচিব জেরি অ্যারাথুন। বুধবার এক সাংবাদিক বৈঠকে তিনি জানান, পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান আর সোশ্যাল স্টাডিজের পরীক্ষায় বসতে হবে পড়ুয়াদের। উত্তর দিতে হবে নিজেদের বোধবুদ্ধির সাহায্যে। তার পরে সেই উত্তরের মূল্যায়ন করে দেখা হবে, কোন ছাত্র বা ছাত্রীর কোথায় খামতি থাকছে। বিস্তারিত ভাবে তা জানিয়ে দেওয়া হবে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক-শিক্ষিকা ও অভিভাবককে।
‘‘প্রস্তুতি ছাড়াই এই দুই শ্রেণির পরীক্ষায় বসে ছাত্রছাত্রীরা নিজেদের সৃষ্টিশীলতার প্রমাণ দিতে পারবে। পাশাপাশি কোন পড়ুয়ার কোন বিষয়ে বিশেষ ঝোঁক, তা-ও বোঝা যাবে,’’ বলছেন অ্যারাথুন। শিক্ষা শিবিরের একাংশের মতে, এই ধরনের পরীক্ষা পাশ-ফেল ব্যবস্থার সম্ভাব্য প্রত্যাবর্তনের জন্য পড়ুয়াদের অনেকাংশে তৈরি করে দিতে পারবে।
চলতি শিক্ষাবর্ষেই নতুন পাঠ্যসূচি চালু করেছে আইসিএসই। কিন্তু সব স্কুল এখনও তা গ্রহণ করেনি। বোর্ড-সচিব এ দিন জানান, ২০১৮-’১৯ শিক্ষাবর্ষ থেকে সব স্কুলকেই তা গ্রহণ করতে হবে। নতুন পাঠ্যক্রম শিক্ষক-শিক্ষিকারা যাতে যথাযথ ভাবে পড়াতে পারেন, তার জন্য তাঁদেরও তালিমের বন্দোবস্ত হয়েছে। আগামী শিক্ষাবর্ষে প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পারফর্মিং আর্টস, যোগ আর শারীরশিক্ষাও চালু করা হচ্ছে। পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণিতে সংস্কৃতকে রাখা হচ্ছে তৃতীয় ভাষা হিসেবে। এই প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গে প্রথম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত বাংলা ভাষা পড়ার সরকারি নির্দেশের কথা ওঠে। বোর্ড-সচিব বলেন, ‘‘পঞ্জাবে অন্য সব বিষয়ের সঙ্গে পঞ্জাবি ভাষাও রাখতে হয়েছে বোর্ড-পরীক্ষায়। পশ্চিমবঙ্গে অবশ্য বোর্ডের পরীক্ষায় বাংলা ভাষার পরীক্ষা দিতে হবে না। ছাত্রছাত্রীদের পক্ষে এটা ভাল খবর।’’
পড়ুয়ারা ভবিষ্যতে কোন বিষয় নিয়ে পড়বে, তা নির্ধারণের জন্য ‘ডিজিটাল সাবজেক্ট সিলেকশন টুল’ চালু করতে চলেছে আইসিএসই বোর্ড। মানসিক প্রবণতা অনুযায়ী কোন পড়ুয়ার কোন বিষয় পড়া উচিত, কোন বিষয় পড়লে ভবিষ্যতে কতটা কী সুযোগ আছে— এই বিশেষ ব্যবস্থায় সবই জানা যাবে।
অ্যারাথুন জানান, কলকাতায় আইসিএসই বোর্ডের পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ভারতের আঞ্চলিক অফিস গড়ে তুলতে রাজারহাটে দুই একর জমি দেওয়ার জন্য বোর্ডের তরফে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy