Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪

পার্থ-সৌম্যজিত খুনে হাত নেই, বলছেন রঞ্জিত

অযোধ্যা পাহাড়ে স্কুলশিক্ষক সৌম্যজিত বসু ও পুলিশ ইনস্পেক্টর পার্থ বিশ্বাসকে খুনের ঘটনায় তাঁর হাত নেই বলে দাবি করেছেন আত্মসমর্পণকারী মাওবাদী নেতা রঞ্জিত পাল। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, জেরায় রঞ্জিত পাল বলেছেন, সৌম্যজিতকে তো বটেই, পার্থকেও ছেড়ে দেওয়ার পক্ষপাতী ছিলেন তিনি।

সুরবেক বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:১৭
Share: Save:

অযোধ্যা পাহাড়ে স্কুলশিক্ষক সৌম্যজিত বসু ও পুলিশ ইনস্পেক্টর পার্থ বিশ্বাসকে খুনের ঘটনায় তাঁর হাত নেই বলে দাবি করেছেন আত্মসমর্পণকারী মাওবাদী নেতা রঞ্জিত পাল। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, জেরায় রঞ্জিত পাল বলেছেন, সৌম্যজিতকে তো বটেই, পার্থকেও ছেড়ে দেওয়ার পক্ষপাতী ছিলেন তিনি।

প্রায় সাত বছর পর সম্প্রতি পার্থর স্ত্রী বর্ণালি মেনে নিয়েছেন, তাঁর স্বামী মৃত। কাকতালীয় ভাবে প্রায় একই সময়ে, ২৫ জানুয়ারি ধরা দিয়েছেন রঞ্জিত। যে মাওবাদী নেতার ভূমিকার কথা পার্থ-সৌম্যজিতের হত্যাকাণ্ডে বার বার ঘুরেফিরে এসেছে।

কিন্তু রঞ্জিতের হাত না থাকলে কার নির্দেশে খুন করা হল অপহৃত ওই দু’জনকে?

গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, এ ক্ষেত্রে রঞ্জিত সমস্ত দায় চাপিয়ে দিয়েছেন দলের রাজ্য কমিটির তদানীন্তন সদস্য ও অযোধ্যা পাহাড়ের শীর্ষনেতা অণর্ব দাম ওরফে বিক্রমের উপর। রঞ্জিতের দাবি, তাঁর কথায় আমল না দিয়ে অর্ণবই ওই দু’জনকে হত্যার নির্দেশ দেন, যা কার্যকর করে গণ মিলিশিয়ার সদস্যেরা। সেটা ছিল ২০১০ সালের ২২ অক্টোবর, লক্ষ্মীপুজোর রাত।

অর্ণব অবশ্য ২০১২-র জুলাইয়ে ধরা পড়ার পর গোয়েন্দাদের জেরায় অন্য কথা জানিয়েছিলেন। তাঁর বক্তব্য ছিল, পার্থ বিশ্বাসের পেশাগত পরিচয় তাঁরা জানেন শোনার পরেই প্রাণভিক্ষা চেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন ওই পুলিশ ইন্সপেক্টর। কিন্তু রঞ্জিত তাতে রাজি ছিলেন না। তখন রঞ্জিতের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতেই তিনি ওই দু’জনকে হত্যার নির্দেশ দেন। রঞ্জিতকেই ওই নির্দেশ কার্যকর করতে বলা হয়। অর্ণব তখন আরও জানিয়েছিলেন, রঞ্জিত ও কয়েক জন স্কোয়াড সদস্য ওই দু’জনকে কাছের জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করে দেহ মাটিতে পুঁতে দেয়।

এখন রঞ্জিত বলছেন, গণ মিলিশিয়ার সদস্যদের হাতে ওই দু’জনকে তুলে দেওয়ার পর তিনি আর কিছু জানতেন না।

রঞ্জিতের বক্তব্য এখনই বিশ্বাস করছেন না গোয়েন্দারা। তাঁদের বক্তব্য, ওই খুনের মামলার হাত থেকে বাঁচতে রঞ্জিত মিথ্যা বলছেন কি না খতিয়ে দেখতে হবে। জিজ্ঞাসাবাদের সময়ে রঞ্জিত সশস্ত্র আন্দোলনের প্রতি তাঁর অনাস্থা এবং দলের নেতৃত্বের একাংশের তীব্র সমালোচনা করেন বলে দাবি গোয়েন্দাদের।

বিভিন্ন সময় রাজ্যে সক্রিয় মাওবাদীদের সম্পর্কে জেরায় অনেক কথা বলেছেন রঞ্জিত। যেমন, মহিলাদের প্রতি আসক্তিই মাওবাদী শীর্ষনেতা কিষেণজির কাল হয়েছে। সুচিত্রা মাহাতোর সঙ্গে কিষেণজির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল, বহু সময়ে ওঁরা দু’জন কোনও গ্রামের এক ঘরে রাত কাটিয়েছেন। কিষেণজি নিরাপত্তার তোয়াক্কা করতেন না বলে দাবি করে রঞ্জিত জানিয়েছেন, পলিটব্যুরোর সদস্য হিসাবে কিষেণজির নিরাপত্তায় এক প্ল্যাটুন (অন্তত ২৬ জন), নিদেনপক্ষে একটি আস্ত স্কোয়াড (১০-১২জন) থাকার কথা। অথচ কিষেণজি যখন নিহত হলেন, তখন সুচিত্রা আর মাত্র দু’জন দেহরক্ষী ছাড়া কেউ ছিলেন না! জঙ্গলমহলে দলের কাজকর্ম নিয়েও সমালোচনা শোনা গিয়েছে আত্মসমর্পণকারী এই নেতার মুখে। গোয়েন্দাদের তিনি জানিয়েছেন, জঙ্গলমহলের জনগণকে রাজনৈতিক ভাবে প্রস্তুত না করেই তাঁদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে সশস্ত্র বিপ্লবের স্বপ্ন দেখানো হয়েছিল। যার পরিণতিতে কেবল নির্বিচারে মানুষ হত্যাই হয়েছে। রঞ্জিত মনে করেন, এই রাজ্যে মাওবাদীদের আপাতত কোনও ভবিষ্যৎ নেই।

গোয়েন্দাদের রঞ্জিত জানিয়েছেন, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর ও বীরভূম জেলার পুরুষ-মহিলা মিলিয়ে ছ’-সাত জন এখনও ঝাড়খণ্ডের মাওবাদী স্কোয়াডে সক্রিয়। পূর্ব সিংভূম জেলায় ‘রাহুল’ নামে পরিচিত রঞ্জিতের কাছ থেকে এমন তথ্য পেয়ে ওই স্কোয়াড-সদস্যদের সন্ধানে নেমেছে পুলিশ।

রঞ্জিতের স্ত্রী, নন্দীগ্রামের সোনাচূড়ার মেয়ে ঝর্ণা গিরি ওরফে অনিতাও তাঁর সঙ্গে দলমা স্কোয়াডে ছিলেন। রঞ্জিতের সঙ্গে অনিতাও ধরা দেন। তবে ঝাড়খণ্ডে রঞ্জিতের জন্য ৩৫ লক্ষ টাকা ইনাম ছিল। ঝাড়খণ্ড পুলিশ প্রস্তাবও দিয়েছিল, আত্মসমর্পণ করলে রঞ্জিতকে এই টাকা দেওয়া হবে। তা হলে রঞ্জিত পশ্চিমবঙ্গে আত্মসমর্পণ করতে গেলেন কেন? এক গোয়েন্দা অফিসার বলেন, ‘‘ঝাড়খণ্ড পুলিশকে রঞ্জিত বিশ্বাস করতে পারেনি। ওর মনে হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের পুনর্বাসন প্যাকেজই ভাল।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Maoist Leader Ranjit Pal Murder School Teachers
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE