Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Justice Amrita Sinha

বিচারপতি সিংহের স্বামী গেলেন না কণ্ঠস্বরের নমুনা দিতে, একতরফা না শুনে রায় বদলের আর্জি কোর্টে

প্রতাপের কণ্ঠস্বরের নমুনা পরীক্ষা করতে চেয়েছিল সিআইডি। তারা আদালতে আবেদন জানিয়েছিল। সেই আবেদন মেনে মঙ্গলবার বিধাননগরের এসিজেএম আদালতে তাঁর কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহের কথা ছিল।

image of justice amrita sinha

বিচারপতি অমৃতা সিংহ। — ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০২৪ ১৮:৪৪
Share: Save:

কণ্ঠস্বরের নমুনা দেওয়ার জন্য মঙ্গলবার বিধাননগরের অতিরিক্ত মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট (এসিজেএম)-এর আদালতে হাজির হলেন না কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিংহের স্বামী প্রতাপচন্দ্র দে। আবেদনে তিনি জানিয়েছেন, তাঁর তরফের সওয়াল না শুনেই প্রতাপচন্দ্রের কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহের রায় দেওয়া হয়েছিল। তাই তিনি কণ্ঠস্বরের নমুনা দিতে রাজি নন। এই নিয়ে শুনানি শেষ হলেও রায় স্থগিত রেখেছে এসিজেএম আদালত।

প্রতাপের কণ্ঠস্বরের নমুনা পরীক্ষা করতে চেয়েছিল সিআইডি। তারা আদালতে আবেদন জানিয়েছিল। সেই আবেদন মেনে মঙ্গলবার বিধাননগরের এসিজেএম আদালতে তাঁর কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহের কথা ছিল। সেই মতো তাঁকে নোটিসও পাঠানো হয়। তাঁর কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহের জন্য মঙ্গলবার আদালতে উপস্থিত ছিলেন রাজ্য ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরির শীর্ষ আধিকারিক। যদিও প্রতাপ আদালতে উপস্থিত হননি। কেন উপস্থিত হননি তা নিয়ে সিআইডির তদন্তকারী আধিকারিককে কিছু জানাননি। পরে আইনজীবী তাপস মুখোপাধ্যায়ের মাধ্যমে বিধাননগরের আদালতে একটি লিখিত ‘পিটিশন’ জমা করেন তিনি। সেখানে জানান, তাঁর তরফে সওয়াল না শুনেই একতরফা ভাবে কণ্ঠস্বর সংগ্রহের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, কণ্ঠস্বরের নমুনা তিনি দেবেন না।

এর আগে বিচারপতির স্বামীকে ফোন জমা করতে বলেছিল সিআইডি। তিনি ফোন জমা করেননি। প্রতাপের ঘনিষ্ঠ সূত্রে খবর, মোবাইলের বিষয়ে সিআইডি-কে চিঠি লিখে তিনি নিজের অবস্থান জানিয়েছেন। এর আগে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী অর্জুন রাম মেঘওয়াল, রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখে অভিযোগ করেছিলেন প্রতাপ। তিনি জানিয়েছিলেন, একটি মামলার সূত্রে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করে রাজ্যের সিআইডি তাঁকে মানসিক নিগ্রহ করেছে। তাঁর বিচারপতি স্ত্রীর বিরুদ্ধে মিথ্যা বয়ান লেখানোর জন্য চাপ দিয়েছে। তারও আগে সিআইডির বিরুদ্ধে একই অভিযোগ জানিয়ে কলকাতা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের অ্যাসোসিয়েশনকে চিঠি দিয়েছিলেন প্রতাপ।

ক্ষমতার অপব্যবহার করে একটি অপরাধের মামলায় অবৈধ ভাবে হস্তক্ষেপ করার অভিযোগ উঠেছিল বিচারপতি সিংহের স্বামী প্রতাপচন্দ্রের বিরুদ্ধে। ৬৪ বছরের এক বিধবা এবং তাঁর মেয়ের অভিযোগের প্রেক্ষিতে সিআইডি তদন্তের নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। মামলায় সূত্রে গত ১ ডিসেম্বর বিচারপতির স্বামীকে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সিআইডির সদর দফতর ভবানী ভবনে দ্বিতীয় দফার জিজ্ঞাসাবাদ-পর্ব হয়েছিল গত ২২ ডিসেম্বর। সর্বশেষ জিজ্ঞাসাবাদ পর্বে রাত ১১টা পর্যন্ত তাঁকে আটকে রাখা হয়েছিল বলে অভিযোগ করে প্রতাপচন্দ্র তাঁর চিঠিতে লিখেছেন, উপর মহল থেকে নির্দেশ এলে ভুয়ো মামলায় তাঁকে গ্রেফতার করা হবে বলেও সিআইডির অফিসারেরা জানিয়েছিলেন।

সিআইডি সূত্রে খবর, যে মামলায় বিচারপতির স্বামীকে ডেকে পাঠানো হয়েছে, সেটি সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন। অভিযোগ, ক্ষমতার অপব্যবহার করে একটি অপরাধের মামলায় অবৈধ ভাবে হস্তক্ষেপ করেছেন বিচারপতির স্বামী, যিনি পেশায় আইনজীবী। ৬৪ বছরের এক বিধবা এবং তাঁর মেয়ের অভিযোগের প্রেক্ষিতে সিআইডি তদন্তের নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। পরে অবশ্য এই মামলায় বাড়তি পদক্ষেপ করা যাবে না বলে জানায় সুপ্রিম কোর্ট। তবে গত ১ ডিসেম্বর শীর্ষ আদালত জানিয়েছিল, আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ করতে পারবে পুলিশ।

আইন সংক্রান্ত বিষয়ে খবরাখবর পরিবেশনকারী সংবাদমাধ্যম ‘বার অ্যান্ড বেঞ্চ’-এ প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, নভেম্বর মাসের শুনানিতে পশ্চিমবঙ্গের সিআইডিকে ‘ভয়ডরহীন’ ভাবে তদন্ত চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল শীর্ষ আদালতের বিচারপতি সঞ্জীব খন্না এবং বিচারপতি এলভিএন ভাট্টির ডিভিশন বেঞ্চ। পাশাপাশি, কোনও প্রভাব খাটানোর চেষ্টা হলে সেটাও শীর্ষ আদালতকে জানানোর কথা বলা হয়। তদন্ত শেষ করে ডিসেম্বরের মধ্যে মুখবন্ধ খামে তথ্য পেশের নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন অনুযায়ী, একটি জমি সংক্রান্ত বিষয়ে ওই বিধবার সঙ্গে তাঁর কয়েক জন আত্মীয়ের বিরোধ শুরু হয়। মামলা গড়ায় আদালতে। আবেদনকারী সুপ্রিম কোর্টে জানান, পৈতৃক সম্পত্তি থেকে তাঁকে বঞ্চিত করার জন্য বাপের বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন দাদা এবং অন্যান্য আত্মীয়। সুপ্রিম কোর্টে ওই বিধবার আইনজীবী জানান, তাঁর মক্কেলকে একাধিক বার হুমকি দেওয়া হয়েছে। এমনকি, বৃদ্ধাকে যে মারধর করা হয়েছে, তার প্রমাণ রয়েছে সিসি ক্যামেরার ফুটেজে। এর প্রেক্ষিতে ওই বৃদ্ধা আত্মীয়দের বিরুদ্ধে দু’টি ফৌজদারি অভিযোগ করেন।

‘বার অ্যান্ড বেঞ্চ’-এর ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিবাদী পক্ষের আইনজীবী তদন্তকারীদের উপর বেআইনি ভাবে প্রভাব খাটান বলে অভিযোগ করেন বিধবা। অভিযোগ, দু’টি মামলার তদন্ত যাতে বাধাপ্রাপ্ত হয়, তার সব রকম চেষ্টা করেছেন বিচারপতি সিংহের স্বামী। ফলস্বরূপ, ওই দু’টি মামলার তদন্ত প্রক্রিয়াই বাধাপ্রাপ্ত হয়। শুধু তাই নয়, বিচারপতি সিংহের বিরুদ্ধেও অভিযোগ করেন মামলাকারীরা।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন অনুযায়ী, আবেদনকারীরা তার পর সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন। তাঁরা আর্জি জানান, আইনজীবী কিংবা তাঁর বিচারপতি স্ত্রীর প্রভাব ছাড়াই দু’টি ফৌজদারি অভিযোগের যাতে সঠিক ভাবে তদন্ত হয়, তার নির্দেশ দিক শীর্ষ আদালত। তদন্ত নিশ্চিত করার নির্দেশও চেয়েছিলেন। আবেদনে এ-ও অভিযোগ করা হয় যে, ওই দুই মামলার প্রাথমিক তদন্তে এক জন অভিযুক্ত গ্রেফতার হওয়ার পরেও তদন্তের গতি রুদ্ধ হয়েছে। হলফনামায় জানানো হয়েছে, সংশ্লিষ্ট তদন্তকারীকে এক বার ডেকে তিরস্কার এবং ভর্ৎসনা করেছেন বিচারপতি। তিনি নাকি বলেছেন, ওই দু’টি দেওয়ানি মামলায় কেন ফৌজদারি মামলার তদন্ত হচ্ছে? ‘বার অ্যান্ড বেঞ্চ’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, সম্প্রতি মামলাকারীর আবেদনে প্রার্থনা জানানো হয় যে, শীর্ষ আদালত যেন বিচারপতি এবং আইনজীবী স্বামীর ওই কাজের জন্য তদন্তের নির্দেশ দেয়। পাশাপাশি, মামলাকারীরা পর্যাপ্ত পুলিশি সুরক্ষার আবেদন জানিয়েছেন।

অন্য দিকে, রাজ্যের তরফে সুপ্রিম কোর্টে বলা হয়, তদন্তের অবস্থা এবং অভিযোগ সম্পর্কে জানতে আগেই কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতির কাছে একটি রিপোর্ট গিয়েছে। ন্যায়সঙ্গত ভাবেই তদন্ত পরিচালনা হচ্ছে। আবেদনকারীদের সমস্ত অভিযোগ বিবেচনা করে সতর্কতার সঙ্গে তদন্ত হচ্ছে। যদিও তার পরেও এ নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট রিপোর্ট চেয়েছে বলে প্রকাশ ওই প্রতিবেদনে।

অন্য বিষয়গুলি:

Justice Amrita Sinha Calcutta High Court CID
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy