বহু প্রতীক্ষিত সেই উড়ালপুল। ছবি: দীপঙ্কর দে।
এলাকার শিল্পের উন্নয়ন নির্ভর করে সেখানকার উন্নত পরিকাঠামোর উপর। ভাল পরিকাঠামোই শিল্পের প্রসারে অন্যতম প্রধান সহায়। হুগলি জেলার শিল্পশহর বলে পরিচিত ডানকুনি এলাকায় বিচ্ছিন্নভাবে কিছু শিল্প গড়ে উঠলেও অভাব রয়েছে পরিকল্পনা মাফিক সার্বিক পরিকাঠামোর। আর তাই শিল্পের পাশাপাশি স্বাস্থ্য থেকে শিক্ষা সব ক্ষেত্রেই যথেষ্ট পিছিয়ে রয়েছে ডানকুনি।
জনবহুল এলাকা হওয়া সত্ত্বেও এই অঞ্চলে স্বাস্থ্য পরিষেবার ন্যূনতম সুযোগ নেই। যা কিছু স্বাস্থ্য বিষয়ক পরিকাঠামো তা এখনও শিশুদের টিকাকরণের ব্যবস্থাতেই সীমাবদ্ধ। অথচ এলাকার বুক চিরে চলে গিয়েছে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের মতো জাতীয় সড়ক। এমন রাস্তার সুবিধা থাকা সত্ত্বেও সরকারি তো দূরঅস্ত কোনও বেসরকারি হাসপাতালও এখানে গড়ে ওঠেনি। সাম্প্রতিক কালে পর পর কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ায় এই এলাকা দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত। অথচ দুর্ঘটনা ঘটলে নেই কোনও অত্যাধুনিক জরুরি চিকিৎসার ব্যবস্থা। বিপদে পড়লে স্থানীয় গুটিকয়েক নার্সিংহোমই ভরসা। যদিও সেইসব নার্সিংহোমগুলির অবস্থাও সরকারি ব্যবস্থার মতোই। পরিকাঠামোর দিক থেকে সেগুলিও বিশেষ উন্নত নয়। তাই দুর্ঘটনায় কেউ আহত হলে হয় উত্তরপাড়া, না হলে চণ্ডীতলা গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়। নিয়ে যাওয়া হয় শ্রীরামপুর ওয়ালশেও। কিন্তু দেখা গিয়েছে, সে ক্ষেত্রেও চিকিৎসার পরিকাঠামোগত নানা সমস্যায় পড়তে হয়। অগত্যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সরাসরি চিকিৎসার জন্য তাই কলকাতাতেই নিয়ে যেতে হয় আহতদের। এই টানাপোড়েনের মাঝে অনেকটা সময় চলে যাওয়ায় অনেক সময় মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে। এ হেন সমস্যার পরেও আজও উন্নত পরিকাঠামোর কোনও হাসপাতাল এখানে গড়ে ওঠেনি।
দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে আহতদের নিয়ে যাওয়ার জন্য এক সময় অত্যাধুনিক একটি অ্যাম্বুল্যান্স ডানকুনিতে রাখার ব্যবস্থা করে জেলা পুলিশ। ঘটা করে তার উদ্বোধনও হয়। কিন্তু পরবর্তী সময় সেই ব্যবস্থা স্থায়ী হয়নি।
স্বাস্থ্যের মতো একই ছবি শিক্ষাক্ষেত্রেও। পরিকাঠামো অভাবে এ ক্ষেত্রেও পিছিয়ে এই এলাকা। মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিকে পড়াশোনার ক্ষেত্রে এলাকায় বেশ কয়েকটি স্কুল রয়েছে। ইংরাজি মাধ্যম বেসরকারি কয়েকটি স্কুলও গড়ে উঠেছে এলাকায়। কিন্তু এ পর্যন্ত স্নাতক স্তরের কোনও কলেজ নেই। ফলে এলাকার ছেলেমেয়েদের শ্রীরামপুর বা উত্তরপাড়ার কলেজে ঠাঁই না হলে যেতে হয় কলকাতায়। সঙ্গত কারণেই এখানে একটি কলেজ তৈরির জন্য বাসিন্দাদের দাবি দীর্ঘদিনের। যা পূরণ হয়নি আজও। ফলে ভুগছেন এখানকার ছেলেমেয়েরা। এক বাসিন্দার কথায়, “পড়াশোনার ক্ষেত্রে ছেলেমেয়েদের দূরে যেতে হলে অনেকটা সময় চলে যায়। এলাকায় কলেজ হলে এখানকার ছেলেমেয়েদের সুবিধা হতো। অথচ প্রশাসনেরকোনও নজরই নেই।” শুধু স্নাতক স্তরেই নয়, ডানকুনি এলাকায় এখনও কোনও সরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজও গড়ে ওঠেনি। তা নিয়েও ক্ষোভ রয়েছে এই এলাকায়। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, যানজট সমস্যার সমাধানে দীর্ঘদিনের আন্দোলনের ফলে অবশেষে উড়ালপুল হয়েছে। কিন্তু ওইটুকুই। উড়ালপুলের সঙ্গেই ইতি ঘটেছে এলাকার উন্নয়নের।
সব মিলিয়ে আধুনিক শিল্পমুখী কোনও শহরের প্রাথমিক পরিকাঠামোর ক্ষেত্রে যে সুবিধাগুলি আবশ্যক তা এখনও অধরাই থেকে গিয়েছে ডানকুনিতে। তাই শিল্প শহরের তকমা বুকে নিয়ে এখনও সাবালক হওয়ার প্রতীক্ষায় দিন গুনছে এই শহর।
(চলবে)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy