এখন কারখানা যে চেহারায়। ছবি: তাপস ঘোষ।
পুজোর আগে হুগলির সাহাগঞ্জের ডানলপ কারখানা খোলার আশ্বাস দিয়েছেন সংস্থার কর্ণধার পবন রুইয়া। কিন্তু সে খবর জানার পরেও রবিবার শ্রমিক মহল্লাায় কোনও খুশির আঁচ টের পাওয়া গেল না। শুধু কয়েক দফয়া শ্রমিকেরা কারখানার গেটের সামনে জড়ো হলেন কর্তৃপক্ষের তরফে কোনও বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে কিনা, জানার জন্য। যথারীতি তাঁরা আগে বকেয়া মেটানোর পুরনো দাবিতেই অনড় রইলেন। কারখানা থেকে গত দু’বছরে যে ভাবে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি এবং বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম চুরি হয়েছে, তাতে কী ভাবে কারখানা চালু করা যাবে, সে প্রশ্নও তুললেন কেউ কেউ। কারও অভিমত, না আঁচালে বিশ্বাস নেই।
দেশের অন্যতম প্রাচীন এই টায়ার কারখানাটি শেষ বার বন্ধ হয় ২০১২ সালে। তার পর থেকে বকেয়ার দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন শ্রমিকেরা। সম্প্রতি শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটকের নেতৃত্বে কারখানা খোলার ব্যাপারে একটি ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হয়। বৈঠকে কর্তৃপক্ষের তরফে মাসে ৫০ লক্ষ টাকা করে শ্রমিকদের বকেয়া মেটানোর আশ্বাস দেওয়া হয়। যদিও রাজ্য সরকারের তরফে তা মাসে ১ কোটি টাকা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। কারণ, তা হলে শ্রমিকদের মোট বকেয়া এক বছরের মধ্যে অনেকটাই মিটিয়ে ফেলা যাবে। কারখানা কর্তৃপক্ষের তরফে আবার কারখানার জমি বিক্রি করে পাওনা মেটানোর জন্য শ্রম দফতরের কাছে প্রস্তাব দেওয়া হয়। এ নিয়ে রাজ্য সরকারের তরফে কর্তৃপক্ষকে কোনও নির্দেশিকা দেওয়া হয়নি। ওই বৈঠকের পরে গত ২৬ জুলাই সংস্থার ফিনান্স ম্যানেজার (এইচআর) সৌমিত্র ঘোষের নেতৃত্বে তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল কারখানার হাল-হকিকৎ খতিয়ে দেখতে যান। সেখানেও শ্রমিকেরা তাঁদের ঘিরে বকেয়ার দাবিতে বিক্ষোভ দেখান।
নেই কোনও আবেগ, উচ্ছ্বাস বা হইচই। শ্রমিক মহল্লা যেন পুরোপুরি নিস্পৃহ।
এর পরে শনিবার পবন রুইয়া ডানলপ খোলার ব্যাপারে আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, “কথাবার্তা অনেকটা এগিয়েছে। সরকারের মধ্যস্থতায় তিন দফা বৈঠক হয়েছে। বিশেষ কোনও বাধা না এলে পুজোর আগে সাহাগঞ্জের ডানলপ কারখানা খুলবে।”
কিন্তু যন্ত্রপাতি যে ভাবে চুরি হয়েছে, তাতে কারখানা চালু করা অত সহজ হবে না বলেই মনে করছেন শ্রমিকেরা। কারখানার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের কর্মী সার্বিক ঘোষ বলেন, “বহু যন্ত্রপাতি নেই। কারখানা কী করে চালু হবে? নতুন যন্ত্রপাতি কিনতে হবে। না হলে উপায় নেই।” ১৯৮০ সালে কারখানার হোস পাইপ বিভাগে যোগ দেন অমর মোদক। তাঁরও বক্তব্য, “যে ভাবে কারখানায় চুরি হয়েছে, তাতে নতুন যন্ত্রপাতি কিনেই কারখানা চালু করতে হবে।”
আর এই পরিস্থিতিতেই আগে বকেয়া মেটানোর দাবি ফের তুলেছেন শ্রমিকেরা। ৪০ বছর ধরে কারখানার হোস-পাইপ বিভাগে কাজ করছিলেন রামেশ্বর সিংহ। তাঁর দাবি, “আমার প্রায় ৪ লক্ষ টাকা পাওনা। কর্তৃপক্ষ আগে পাওনা-গণ্ডা মেটাক। তারপর কারখানা খুলুক।” একই সুরে টায়ার বিভাগের কর্মী সর্বজিৎ তিওয়ারিও বলেন, “কারখানা খোলার ইচ্ছাকে সাধুবাদ। কিন্তু কয়েকশো কোটি টাকা ঢাললে তবেই কারখানা নতুন করে চালু করা যাবে। তাই চাই, আগে বকেয়া মিটিয়ে দেওয়া হোক।” মিল বিভাগের কর্মী প্রসিদ্ধনাথ দুবের অভিযোগ, “কারখানা খোলার আশ্বাস আগেও শোনা গিয়েছে। যত ক্ষণ না খুলছে তত ক্ষণ কোনও আশা নেই।”
শ্রমিকদের এই মনোভাবের কথা অজানা নয় রাজ্যের শ্রম দফতরের পরিষদীয় সচিব তপন দাশগুপ্তের। তিনি বলেন, “আগামী ১৮ অগস্ট ফের ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হবে। কর্তৃপক্ষ কারখানার হাল-হকিকৎ দেখে নেবেন। পুজোর আগে ভাল কিছু আশা করছি। বকেয়া মেটানো নিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছি। এ ক্ষেত্রে সরকার কড়া মনোভাব নেবে।” তবে, কারখানা কর্তৃপক্ষের তরফে ভাইস প্রেসিডেন্ট (কমিউনিকেশন) ধ্রুবজ্যোতি নন্দী এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy