Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

জনতাকে পথে বসিয়ে বাসের দাদাগিরি

সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা। বেলুড় মঠ বাসস্ট্যান্ডে সারি সারি মিনিবাস দাঁড়িয়ে। মঠের উত্‌সব-ফেরত মানুষ কাতারে কাতারে ভিড় করছেন বাসের জন্য। কিন্তু একটি বাসও ছাড়ছে না। অধীর যাত্রীরা বারবার প্রশ্ন করছেন, বাস ছাড়ছে না কেন? কখন ছাড়বে? জবাব এল: বাস ছাড়বে না। আজ আর কোনও বাস যাবে না। পূর্ব ঘোষণা নেই। বঞ্চনার অভিযোগ তুলে দাবিদাওয়ার স্লোগান নেই। স্রেফ দাদাগিরি। হতভম্ব যাত্রীদের আতান্তরে ফেলে জিতে গেল বাসকর্মীদের দাদাগিরিই। রবিবার সন্ধ্যায় বেলুড় বাসস্ট্যান্ড থেকে কোনও বাসকেই নড়াতে পারল না এমনকী পুলিশ-প্রশাসনও!

শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণের জন্ম মহোত্‌সবে বেলুড়ে আতসবাজি। দীপঙ্কর মজুমদারের তোলা ছবি।

শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণের জন্ম মহোত্‌সবে বেলুড়ে আতসবাজি। দীপঙ্কর মজুমদারের তোলা ছবি।

শান্তনু ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০১৫ ০২:৪৪
Share: Save:

সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা। বেলুড় মঠ বাসস্ট্যান্ডে সারি সারি মিনিবাস দাঁড়িয়ে। মঠের উত্‌সব-ফেরত মানুষ কাতারে কাতারে ভিড় করছেন বাসের জন্য। কিন্তু একটি বাসও ছাড়ছে না। অধীর যাত্রীরা বারবার প্রশ্ন করছেন, বাস ছাড়ছে না কেন? কখন ছাড়বে?

জবাব এল: বাস ছাড়বে না। আজ আর কোনও বাস যাবে না।

পূর্ব ঘোষণা নেই। বঞ্চনার অভিযোগ তুলে দাবিদাওয়ার স্লোগান নেই। স্রেফ দাদাগিরি। হতভম্ব যাত্রীদের আতান্তরে ফেলে জিতে গেল বাসকর্মীদের দাদাগিরিই। রবিবার সন্ধ্যায় বেলুড় বাসস্ট্যান্ড থেকে কোনও বাসকেই নড়াতে পারল না এমনকী পুলিশ-প্রশাসনও!

বেলুড় মঠ-ধর্মতলা রুটের মিনিবাস পরিষেবা আচমকাই বন্ধ হয়ে যাওয়ায় হাজারো যাত্রী বিপাকে পড়েন। পুলিশের শত অনুরোধেও চালু হল না বাস। বেয়াড়া বাসকর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ শুরু হল সোমবার। কিন্তু ছুটির সন্ধ্যায় পথে বেরিয়ে যাত্রীদের যে-দুর্গতি হল, তার ক্ষতিপূরণ কে দেবে, সেই প্রশ্নের জবাব মিলছে না। প্রশাসন শুধু বলছে, যে-সব বাস ওই সন্ধ্যায় দাদাগিরি দেখিয়ে যাত্রী নেয়নি, তাদের পারমিট বাতিল করার জন্য হাওড়া সিটি পুলিশের তরফে জেলাশাসকের কাছে আবেদন জানানো হচ্ছে।

ঠিক কী হয়েছিল?

শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণের আবির্ভাব তিথির মহোত্‌সব উপলক্ষে রবিবার প্রচুর দর্শনার্থীর সমাগম হয়েছিল বেলুড় মঠে। সন্ধ্যায় আতসবাজির প্রদর্শনী থাকায় বিকেলে ভিড় বাড়ে। ভিড় সামলাতে বাড়তি লঞ্চ, নৌকার ব্যবস্থা ছিল। পুলিশ জানায়, সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ অনুষ্ঠান সাঙ্গ হতেই হাজার দশেক দর্শনার্থী বেলুড় মঠ বাসস্ট্যান্ডে ভিড় করেন। কিন্তু ধর্মতলা যাওয়ার জন্য স্ট্যান্ড থেকে কোনও মিনিবাস ছাড়ছিল না। ফলে হাওড়া স্টেশন ও ধর্মতলার দিকে যাওয়ার যাত্রীরা সমস্যায় পড়েন। এক পুলিশ অফিসার বলেন, “বেলুড় মঠের ভিড়ের জন্য জিটি রোডেও যানজট ছিল। ফলে বালি খাল থেকে হাওড়া বা ধর্মতলার বাস আসতেও সময় লাগছিল।”

বাসকর্মীরা বেঁকে বসলেন কেন?

সদুত্তর নেই পুলিশের কাছেও। যাত্রীর ভিড় সত্ত্বেও বাস না-ছাড়ায় অবাক হয়ে যান ট্রাফিক-কর্মীরাও। তাঁরা দেখলেন, সারি সারি দাঁড়ানো মিনিবাসের সামনে গল্পগুজবে ব্যস্ত চালক-কর্মীরা। পুলিশকর্মীরা জানতে চান, বাস ছাড়ছে না কেন?

জবাব আসে: ‘আমাদের রাজত্ব চলছে। যার যা করার আছে, করে নিতে পারেন। আমাদের ইচ্ছে। তাই আজ আর বাস চলবে না!’

কাদের রাজত্বের কথা বলা হচ্ছে? কোন রাজত্বেই বা পূর্ব ঘোষণা ছাড়া এ ভাবে বাস বন্ধ করে দেওয়ার তুঘলকি সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়?

জবাবদিহির দায়িত্ব নেয়নি কেউ। পুলিশ-প্রশাসনও সেই সন্ধ্যায় হঠাত্‌ নীরব-নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। কেন? বাস চালাতে পুলিশ বাধ্য করাল না কেন?

পুলিশের বক্তব্য, পরিস্থিতি এমনই ঘোরালো হয়ে উঠেছিল যে, বাসের কর্মীদের সঙ্গে বাদানুবাদে না-গিয়ে যাত্রীদের ফেরার ব্যবস্থা করাটাকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।

আর তৃণমূল পরিচালিত বেলুড় মঠ-ধর্মতলা মিনিবাস কর্মী সংগঠনের কার্যনির্বাহী সভাপতি কার্তিক দাস বলেন, “প্রতিদিনই সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বাস গ্যারাজ করা শুরু হয়ে যায়। ওই দিনও হয়েছে। অন্য কিছু নয়।” তিনি স্বীকার করেন, ওই দিন কিছুটা বেশি সময় বাস চালানো উচিত ছিল। সেই সঙ্গেই তাঁর অনুযোগ, উত্‌সবের ব্যাপারে তাঁদের আগাম কিছু জানানো হয়নি। “বিষয়টি জানতে পারি রাত ৯টায়,” বললেন কার্তিকবাবু।

কার্তিকবাবুর এই বক্তব্য মানতে রাজি নন এলাকার বাসিন্দা ও ট্রাফিক-কর্মীরা। তাঁদের মতে, বেলুড়ে এই উত্‌সব প্রতি বছরই হয়। গত বছরও মিনিবাস পরিষেবা ছিল। ওই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগেও বাস-মালিকদের সঙ্গে পুলিশের আলোচনা হয়েছিল। তবু নাকাল হলেন যাত্রীরা।

পুলিশ জানায়, ভিড় সামলাতে রাত পৌনে ৮টা নাগাদ অতিরিক্ত ‘টোটো’র ব্যবস্থা করা হয়। টোটোয় যাত্রীদের বেলুড় স্টেশনে পাঠানো হয় হাওড়ার ট্রেন ধরতে। বেয়াড়া বাসের শাস্তি হবে কি? পুলিশের এক কর্তা বলেন, “যে-সব বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছিল, সেগুলির নম্বর দিয়ে পারমিট বাতিলের জন্য আবেদন জানানো হচ্ছে জেলাশাসকের কাছে।”

সোমবার হাওড়া সিটি পুলিশের তরফে মোট ১০টি বাসের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। হাওড়ার জেলাশাসক শুভাঞ্জন দাশ বলেন, “এটা কোনও ভাবেই উচিত হয়নি। কেন আচমকা বাস পরিষেবা বন্ধ করা হল, তা দেখতে হবে। পুলিশের তরফে অভিযোগ এলে নিশ্চয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

অন্য বিষয়গুলি:

belur bus problem shantanu ghosh bus strike
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE