Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

আট আসনের পুলকার ছুটল ২৬ জনকে নিয়ে

সোমবার সকালে উলুবেড়িয়ায় ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে তীব্র গতিতে ছুটতে দেখা গেল ওই পুলকারকে। গন্তব্য তাঁতিবেড়িয়ার একটি বেসরকারি স্কুল।

ঘিঞ্জি: এভাবেই পুলকারে গাদাগাদি করে স্কুলের পথে। নিজস্ব চিত্র।

ঘিঞ্জি: এভাবেই পুলকারে গাদাগাদি করে স্কুলের পথে। নিজস্ব চিত্র।

সুব্রত জানা
উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০২:০৮
Share: Save:

ছোট পুলকার। আসনসংখ্যা ৮। তাতে ২৬ জন খুদে পড়ুয়া!

সোমবার সকালে উলুবেড়িয়ায় ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে তীব্র গতিতে ছুটতে দেখা গেল ওই পুলকারকে। গন্তব্য তাঁতিবেড়িয়ার একটি বেসরকারি স্কুল।

পাশের জেলা হুগলির পোলবায় পুলকার দুর্ঘটনার আতঙ্ক এখনও কাটেনি তাতে থাকা খুদে পড়ুয়াদের। ওই দুর্ঘটনায় জখমদের মধ্যে দু’জনের অবস্থা এখনও আশঙ্কাজনক। কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে তাদের চিকিৎসা চলছে। আরও এক জন ভর্তি চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে। পুলকার-চালকের দায়িত্ববোধ নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন।

এই অবস্থায় হুগলিতে পুলকার দুর্ঘটনা এড়াতে নানা ব্যবস্থা নিচ্ছে পুলিশ। কিন্তু উলুবেড়িয়ায় কোথায় পুলিশের নজর? এ দিন সকালে শুধু ওই একটি পুলকারই নয়, ওই স্কুলের আরও গাড়িতেও দেখা গেল প্রায় একই ছবি। অন্য বহু স্কুলের গাড়িও অতিরিক্ত পড়ুয়া নিয়ে যাতায়াত করে, এমন অভিযোগও শোনা গিয়েছে।

এ দিন ওই পুলকারটি যখন স্কুলে পৌঁছল, দেখা গেল চালকের পাশে হেল্পারের সিটে বসে পাঁচ খুদে! বাকিরা ভিতরে, গাদাগাদি করে রয়েছে। স্কুলবাসে যেখানে ৪৫ জনের বসার কথা, সেখানে এসেছে ৭০-৭৫ জন পড়ুয়া। আসতে সমস্যা হয়, মানছে ওই পড়ুয়ারা। কিন্তু কী করবে, তাদের জানা নেই। এক ছাত্রীর কথায়, ‘‘গাড়িতে বসার জায়গা থাকে না বলে দাঁড়িয়েই আসি। ড্রাইভার-কাকুকে বললেও শোনে না।’’

কেন এই অব্যবস্থা?

স্কুলের প্রধান শিক্ষক অনিল কাঁড়ার দায় চাপিয়েছেন অভিভাবকদের উপরে। তাঁর দাবি, ‘‘ওই সব পুলকার অভিভাবকেরা ঠিক করেছেন। তবে পুলকারে অতিরিক্ত পড়ুয়া নেওয়া হয় না।’’ কিন্তু প্রধান শিক্ষকের এই দাবি মানতে চাননি অভিভাবকেরা। তাঁদেরই একজন বলেন, ‘‘ছেলেমেয়েদের ভর্তি করানোর সময়ে স্কুল থেকেই গাড়ির ব্যবস্থা করে দেয়। এ জন্য মাসে মাসে স্কুলকেই টাকা দিই। তা হলে আমরা ঠিক করলাম কোথায়?’’ আর এক অভিভাবক বিপদের আশঙ্কায় সন্তানকে পুলকারে পাঠানো বন্ধ করে নিজেই দিয়ে যান বলে জানান। অন্য আর এক জনের অভিযোগ, ‘‘প্রতিদিন ভয়ে ভয়ে থাকি। বাধ্য হয়ে ছেলেকে পুলকারে পাঠাতে হয়। পুলকারে বেশি পড়ুয়া না তোলার জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষকে বারে বারে বলেছি। কোনও কাজ হয়নি।’’ পুলকারটির চালক স্বপন মণ্ডলও বলেন, ‘‘গাড়ি স্কুলেরই। স্কুল কর্তৃপক্ষই নির্দেশ দেন, কোথা থেকে পড়ুয়া আনতে হবে।’’

হুগলিতে পুলকার দুর্ঘটনার পরে তিন দিন পেরিয়ে গেলেও নজরদারির প্রশ্নে উলুবেড়িয়ায় পুলিশ কী করছে?

অনেক অভিভাবকেরই অভিযোগ, ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ কর্মসূচিতে জেলার আনাচে-কানাচে, গ্রামের রাস্তায় পুলিশের ‘চেকিং’ চলে। বিনা হেলমেটে মোটরবাইক চালাতে দেখলে জরিমানা করা হয়। কিন্তু পুলকারে নজর নেই। অতিরিক্ত ছাত্রছাত্রী নিয়ে পুলকারগুলি জাতীয় সড়কে পুলিশের সামনে দিয়েই যাতায়াত করে। এই অভিযোগ নিয়ে জেলা (গ্রামীণ) পুলিশ সুপার সৌম্য রায় বলেন, ‘‘শীঘ্রই স্কুল কর্তৃপক্ষগুলিকে নিয়ে বৈঠক করব। সবাইকে সতর্ক করা হবে। তারপরেও চললে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

গ্রামীণ হাওড়ায় পুলকারে নজরদারি কবে শুরু হয়, সেটাই দেখার।

অন্য বিষয়গুলি:

Pool Car Traffic Violation Tantberia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy