বিক্রম: ভেঙে দেওয়া হয়েছে গাড়ির কাচ।নিজস্ব চিত্র
‘রোগ’টা সারছে না কিছুতেই।
মধ্যমগ্রাম, ধনেখালির পর এ বার বলাগড়। ফের নিজেকে ‘দণ্ডমুণ্ডের কর্তা’ ভাবা এক সিভিক ভলান্টিয়ারের বিরুদ্ধে এক ট্রাক-চালককে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ উঠল। রণজিৎ নাথ নামে ওই চালককে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হয়। ট্রাকটিতেও ভাঙচুর চালানো হয়েছে।
সোমবার দুপুরে বলাগড়ের শেরপুর মোড়ে ঘটনাটি এতেই থেমে থাকেনি। ওই এলাকায় সিভিক ভলান্টিয়ারদের লরি-ট্রাক থেকে তোলাবাজি নিয়ে স্থানীয়দের অভিযোগ ছিলই। এ দিন ওই ঘটনার পরে এলাকার লোকজন এসে ওই সিভিক ভলান্টিয়ারকে আটকে রাখেন। স্থানীয়দের দাবিমতো চালকের কাছে অভিযুক্তকে ক্ষমা চাইতে হয়। পুলিশ গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে। হুগলি জেলা (গ্রামীণ) পুলিশ সুপার সুকেশ জৈন জানিয়েছেন, ওই সিভিক ভলান্টিয়ারের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
যানজট সামলানো কিংবা দৈনন্দিন আইন-শৃঙ্খলার কাজে পুলিশকে সাহায্য করার উদ্দেশেই সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়োগ। কিন্তু উর্দিধারীদের একাংশের আড়ালে থেকে কখনও লরি আটকে তোলা আদায়, নির্মীয়মাণ বহুতলের কাজ বন্ধের হুমকি দেওয়া— এমন বহু অভিযোগ প্রায়ই ওঠে ওঁদের বিরুদ্ধে। ক’দিন আগে হেলমেট না-পরায় সিভিক ভলান্টিয়ারের হাতে মার খেয়ে এক স্কুটি-চালকের মৃত্যুতে তেতে উঠেছিল মধ্যমগ্রাম। প্রশ্ন উঠেছিল সিভিক ভলান্টিয়ারদের এক্তিয়ার নিয়ে। তার পরে ধনেখালির শিবাইচণ্ডী এলাকায় এক প্রতিবন্ধী যুবক এবং তাঁর ভাইয়ের বচসা থামাতে গিয়েও ‘মাতব্বরি’র অভিযোগ ওঠে এক সিভিক ভলান্টিয়ারের বিরুদ্ধে। দুই ভাইকে মারধরের অভিযোগও ওঠে। এ বার বলাগড়।
ঠিক কী হয়েছিল সোমবার?
কালনার বাসিন্দা রণজিৎ তুষ ভর্তি ট্রাক নিয়ে অসম লিঙ্ক রোড ধরে কলকাতায় যাচ্ছিলেন। বলাগড়ে রাস্তায় গাড়ি পরীক্ষা করছিল পুলিশ। সেখানে ট্রাক দাঁড় করাতে হয় রণজিতকে। গাড়ির নথিপত্র দেখার পরে পুলিশ তাঁর কাছ থেকে ‘তোলা’ চায় বলে রণজিতের অভিযোগ। ১০০ টাকা দিয়ে রণজিৎ ট্রাক নিয়ে রণজিৎ মগরার দিকে এগোন। তখনই সাদা পোশাকে থাকা ওই সিভিক ভলান্টিয়ার মোটরবাইক নিয়ে তাঁকে ধাওয়া করেন বলে অভিযোগ। রণজিৎ জানান, তিনি প্রথমে বুঝতে পারেননি। ওই সিভিক ভলান্টিয়ারকে ছিনতাইকারী ভেবে তিনি গাড়ির গতি বাড়ান। সিভিক ভলান্টিয়ারও বাইকের গতি বাড়িয়ে শেরপুর মোড়ে ট্রাকটিকে ওভারটেক করে থামান।
স্থানীয়দের হাতে ঘেরাও হয়ে থাকা সিভিক ভলান্টিয়ার।
রণজিতের অভিযোগ, রাস্তা থেকে একটি গাছের মোটা ডাল নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন ওই সিভিক ভলান্টিয়ার। তিনি রাস্তার ধারে ট্রাক রাখার সময় ডালটি ট্রাকের দিকে ছোড়েন সিভিক ভলান্টিয়ার। উইন্ডস্ক্রিন ভেঙে কাচ তাঁর চোখ-মুখে লাগে। এরপর ট্রাক থেকে নামিয়ে তাঁকে মারধর করেন ওই সিভিক ভলান্টিয়ার। কিন্তু কেন? ওই ট্রাক-চালক বলেন, ‘‘আমার গাড়ির কাগজপত্র সব ঠিক ছিল। তা সত্ত্বেও চেকিংয়ের জায়গায় ১০০ টাকা দিতে হয়। আরও টাকা চাওয়া হচ্ছিল। আমি না-দিয়ে বেরিয়ে আসি। সে জন্যই ওই সিভিক ভলান্টিয়ার মারধর করলেন।’’
ওই এলাকার বাসিন্দাদের তো বটেই, অনেক ট্রাক-চালকেরও অভিযোগ, বলাগড়ে অসম লিঙ্ক রোডে এখন দিনেরবেলাতেও জোরজুলুম করে টাকা আদায় করছেন সিভিক ভলান্টিয়াররা। এ দিনের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী, ওই এলাকারই বাসিন্দা বিপুল পাত্র বলেন, ‘‘এখানে সিভিক ভলান্টিয়ারদের দাপাদাপি প্রচণ্ড বেড়েছে। আজ যা হল, তাতে বড় কিছু হয়ে যেতে পারত। ওঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।’’
জেলা (গ্রামীণ) পুলিশ সুপার ওই সিভিক ভলান্টিয়ারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিলেও একই সঙ্গে দাবি করেছেন, পথ নিরাপত্তার নিয়ম ভেঙে ট্রাকটি বেশি গতিতে যাচ্ছিল। সেই কারণেই সেটি থামাতে যান সিভিক ভলান্টিয়ার। রাস্তায় চেকিংয়ের নামে ‘তোলাবাজি’র অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে বলেও তিনি জানান।
এত কিছুর পরেও কি সিভিক ভলান্টিয়ারদের হুঁশ ফিরবে? প্রশ্নটা থেকে যাচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy