মৃত: সুদীপ নস্কর। নিজস্ব চিত্র
মায়ের দাবি, আগের দিনই ছেলে ফোন করে তাঁকে বলেছিলেন, ‘‘ওরা আমাকে দু’দিন ধরে খেতে দেয়নি। মারধর করছে। আমি তোমাদের কাছে ফিরে যাব।’’ কিন্তু শেষ পর্যন্ত ছেলে আর ফিরে আসেননি। মঙ্গলবার সকালে শ্বশুরবাড়ি থেকে এল তাঁর মৃত্যুসংবাদ।
বাবা-মায়ের সঙ্গে স্ত্রীর বনিবনা না হওয়ায় গত কয়েক বছর ধরে হাওড়ার ইছাপুরের মাঝেরপাড়ায় শ্বশুরবাড়িতে থাকছিলেন সলপ ষষ্ঠীতলার বাসিন্দা সুদীপ্ত নস্কর (২৫)। দাশনগরের একটি কটন মিলে কাজ করতেন তিনি। পুলিশ জানায়, এ দিন সকালে ওই যুবকের মৃতদেহ উদ্ধার হয় মাঝেরপাড়ার একটি চারতলা আবাসনের ফ্ল্যাট থেকে। মৃত যুবকের শ্বশুরবাড়ির লোকজনের দাবি, ওই যুবক মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন। তাই ছাদে উঠে একটি জলের পাইপের সঙ্গে দড়ি আটকে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। ঘটনাটি জানতে পেরে তাঁরা ছাদ থেকে দেহ নামিয়ে এনে ঘরে শুইয়ে দিয়েছিলেন। তার পরেই ওই যুবকের বাড়িতে ফোন করে মৃত্যুসংবাদ দিয়েছিলেন তাঁরা।
পুলিশ জানায়, ওই যুবকের মৃত্যুর খবর পেয়েই সলপ থেকে তাঁর পরিবারের লোকজন চলে আসেন। দেহটি দেখার পরে তাঁদের অভিযোগ, ওই যুবককে মারধর করে খুন করার পরে দেহটি ছাদে নিয়ে গিয়ে গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। যাতে সকলের মনে হয়, তিনি আত্মহত্যা করেছেন। মৃতের মা সোনা নস্করের অভিযোগ, পুত্রবধূ সোমা ও তাঁর পরিবারের লোকেরা মিলে দীর্ঘদিন ধরেই তাঁর ছেলের উপরে নির্যাতন চালাচ্ছিলেন। মারধর থেকে শুরু করে খেতে না দেওয়া— কিছুই বাদ যায়নি। তিনি বলেন, ‘‘কম টাকা বেতন পেত বলে ওকে মারধর করে সব টাকা কেড়ে নিত। খেতেও দিত না। আগের দিন রাতেই আমাকে ফোন করে বলেছিল, ওকে খেতে দেয়নি। তার উপরে মেরেছে।’’
এ দিন ওই যুবকের মৃত্যুসংবাদ ছড়িয়ে পড়তেই মাঝেরপাড়ার বাসিন্দারা এসে ভিড় করেন ওই আবাসনের নীচে। তাঁরাও ওই যুবকের আত্মহত্যার তত্ত্ব মানতে নারাজ। ওই আবাসনের অন্য বাসিন্দারাও চারতলায় ওই যুবকের শ্বশুরবাড়ির ফ্ল্যাটের সামনে গিয়ে খুনের অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। পরে পুলিশ এসে অভিযুক্ত পাঁচ জনকে তুলে নিয়ে চলে যায়।
ওই আবাসনের বাসিন্দা শ্যামলী দাস বলেন, ‘‘আমি সকালে ছাদে গিয়ে দেখেছি, মৃতদেহটি ছাদে শোয়ানো আছে। ওই দৃশ্য দেখে আমি ওর স্ত্রী সোমাকে খবর দিই। তার পরে আমি আর ঘর থেকে বেরোইনি।’’ আবাসনের বাসিন্দারা জানান, সুদীপ্ত অত্যন্ত ভদ্র মানুষ ছিলেন। কম আয় করতেন বলে তাঁকে প্রায়ই অপমান করা হত। মারধরও চলত।
তবে সঙ্গীতা রাই নামে ওই যুবকের এক শ্যালিকা পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, ‘‘খুনের অভিযোগ পুরোপুরি মিথ্যা। আমরা ওকে মারধর করতাম না। উল্টে ও-ই সবাইকে মারত। এটি আত্মহত্যা ছাড়া কিছু নয়।’’
এ দিনের ঘটনার পরে ওই যুবকের পরিবারের তরফে স্থানীয় জগাছা থানায় খুনের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। মৃতের স্ত্রী, বাবা, মা, শ্যালক ও এক দিদিশাশুড়িকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। হাওড়া সিটি পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘প্রাথমিক ভাবে ঘটনাটি খুন বলে মনে হচ্ছে না। তবে ময়না-তদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পরেই এ ব্যাপারে নিশ্চিত ভাবে বলা যাবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy