কুঞ্চিত সর্পিলাকার সাদামাছি। বৈদ্যবাটীতে তোলা ছবি।
রাতের অন্ধকারে পুকুর দেখতে বাগানে গিয়ে নারকেল গাছের পাতায় টর্চের আলো পড়তেই চক্ষু ছানাবড়া বৈদ্যবাটীর নিখিল ঘোষের। পাতা পুরো সাদা! কারণ কিছু খুঁজে না-পেয়ে তিনি নারকেল গাছ ছাড়ানোর লোক ডাকন। শিউলি গোপাল পাত্রও গাছে উঠে অবাক। নিখিলকে তিনি বলেন, "অনেক বাগানেই নারকেল গাছের পাতা সাদা করে দিচ্ছে করোনাভাইরাস!’’
করোনার হানা নারকেল গাছে? বিশ্বাস হয়নি নিখিলের। দ্বারস্থ হন কৃষি বিশেষজ্ঞের। নারকেল গাছের পাতার ছবি তুলে পাঠান তিনি।
কৃষি দফতর জানিয়েছে, এতে চাষিদের ভয়ের কিছু নেই। বিভিন্ন জেলার গ্রামগঞ্জে এ নিয়ে গুজব ছড়াচ্ছে। সম্প্রতি একপ্রকার বিদেশি শত্রুকীটের হানায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাগিচা চাষ। এই পোকা নারকেল গাছ ছাড়াও আম, জামরুল, সুপারি, পান, কলা, কাঁঠাল, লেবু, পেয়ারা প্রভৃতি গাছেও আক্রমণ করছে।
এই বিদেশি কীটশত্রু আসলে কুঞ্চিত সর্পিলাকার সাদা মাছি। যার নাম ‘রুগস স্পাইরালিং হোয়াইটফ্লাই’। যা ভারতীয় সাদা মাছির চেয়ে আকারে আড়াই থেকে তিন গুণ বড়। দয়েপোকা, জাবপোকার প্রজাতির। এই পোকা বছর চারেক আগে এ দেশে প্রথম দেখা যায় কেরল ও তামিলনাড়ুতে। গত বছর রাজ্যের মধ্যে পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দকুমার ও মহিষাদলে প্রথম এই পোকার উপস্থিতি দেখা যায়। বর্তমানে হুগলির বিভিন্ন ব্লকের চাষির বাগানে এই মাছি উপদ্রব দেখা যাচ্ছে। এরা গাছের পাতার কত্ শুষে নেয়।
চুঁচুড়া ধান্য গবেষণা কেন্দ্রের সহকারী কীটতত্ত্ববিদ সীতেশ চট্টোপাধ্যায় বলেন, "আক্রান্ত গাছের পাতার নীচে সাদা রঙের নানা আকারের নকশা দেখা যায়। এই শত্রুকীট গাছের পাতার রস চুষে খায়। ফলে, গাছের পাতার রং বদলে যায়। গাছের খাদ্যের অভাব দেখা দেয়। সাদামাছি পাতায় মিষ্টি বর্জ্য ত্যাগ করে। সেখানে ছত্রাক বাসা বাঁধে। পাতা কালোও হয়ে যায়। পরে পাতা শুকিয়ে ঝুলে যায়। নারকেল গাছের মুচি থেকে ফুল বেরিয়ে শুকিয়ে যায়। ডাব ও নারকেলের ফলন কমে যায়। খুব বেশি আক্রমণ হলে গাছটি মারেও যেতে পারে।’’
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বাগিচা ফসলের গাছ জনবসতি এলাকায় অথবা পুকুরের পাড়ে লাগানো হয়। ফলে, আক্রান্ত গাছে কীটনাশক প্রয়োগ করতে অসুবিধা হয়। কারণ মানুষ, গবাদি পশু ও মাছের ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। তবে এই সাদা মাছি খুব সহজেই দমন করা সম্ভব।
কীটতত্ত্ববিদ সন্তোষকুমার রায় জানান, বাগানে চারাগাছ লাগানোর সময় রোগমুক্ত গাছ লাগাতে হবে। আক্রান্ত গাছের পুরনো ডাল, ডাঁটা ও পাতা কেটে দিতে হবে। প্রয়োজনে ১০০০০ পিপিএমের নিম তেল প্রতি লিটার জলে তিন মিলিলিটার ও তিন গ্রাম গুঁড়ো সাবান একসঙ্গে ভাল করে মিশিয়ে নিতে হবে। ওই মিশ্রণ ফুট স্প্রেয়ার পাম্পের মাধ্যমে আক্রান্ত গাছের পাতার নীচে জোরে স্প্রে করতে হবে। এ ছাড়াও বড় নারকেল গাছের গোড়ার মাটি সরিয়ে দানা কীটনাশক প্রয়োগ করা যায় এবং তরল কীটনাশক নারকেল গাছের শিকড়ের মাধ্যমে প্রয়োগ করা যেতে পারে। তবে কৃষি বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এমন কোনও কীটনাশক স্প্রে করা উচিত নয়, যাতে পরজীবী ও পরভোজী বন্ধুপোকার ক্ষতি হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy