বিক্ষোভ: জখম পড়ুয়াকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। নিজস্ব চিত্র
হেলমেটবিহীন এক ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়াকে মারধর করেছে পুলিশ—এই অভিযোগে রবিবার রাতে বৈদ্যবাটিতে দেড় ঘণ্টা ধরে অবরুদ্ধ হয়ে রইল জিটি রোড।
‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ নিয়ে রাজ্য সরকারের লাগাতার প্রচার সত্ত্বেও এখনও হেলমেট ছাড়াই মোটরবাইক চালানোর প্রবণতা বন্ধ হচ্ছে না। দিন কয়েক ধরে শ্রীরামপুর মহকুমার বিভিন্ন প্রান্তে হেলমেটহীন মোটরবাইক আরোহীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার সন্ধ্যা থেকে বৈদ্যবাটিতে জিটি রোডে দু’টি জায়গায় হেলমেটহীন মোটরবাইক আরোহী ধরতে নজরদারি চালাচ্ছিল পুলিশ। রাত ৯টা নাগাদ একটি মোটরবাইকে তিন জন বৈদ্যবাটি থেকে ভদ্রেশ্বরের দিকে যাচ্ছিলেন। কারও হেলমেট ছিল না। বৈদ্যবাটির জোড়া অশ্বত্থতলার কাছে পুলিশ বাইকটি দাঁড় করানোর জন্য হাত দেখালে সেটি উল্টো দিকে ঘুরে পালানোর চেষ্টা করে। পুলিশ বাইকটিকে তাড়া করে। ১১ নম্বর রেলগেটের কাছে সেটিকে ধরা হয়। অভিযোগ, তার পর ওই মোটরবাইক আরোহীদের উপরে লাঠি চালায় পুলিশ। তখন সায়ন্তন গোস্বামী নামে স্থানীয় যুবক ওই জায়গা দিয়েই মোটরবাইক নিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনিও হেলমেট পরেননি। পুলিশ তাঁকেও আটকে মারধর করে বলে অভিযোগ।
ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পড়ুয়া সায়ন্তন এলাকায় ডিওয়াইএফ কর্মী হিসেবে পরিচিত। পুলিশ তাঁর গায়ে হাত দিয়েছে, এই কথা চাউর হতেই লোকজন জড়ো হতে শুরু করেন। রাত ১০টা নাগাদ শেওড়াফুলি ফাঁড়ির একটি ভ্যান ঘটনাস্থলে গেলে স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ সেটিকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান। শুরু হয় অবরোধ। বিক্ষোভকারীরা বলতে থাকেন, ‘নিরীহ’ লোকের গায়ে হাত তুলে পুলিশ অন্যায় করেছে। রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ পুলিশের হস্তক্ষেপে অবরোধ ওঠে।
বৈদ্যবাটি পুরসভার ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর, ফরওয়ার্ড ব্লকের মানোয়ার হোসেন অবরোধে ছিলেন। তাঁর দাবি, ‘‘সায়ন্তন জিটি রোডে ওঠেনি। বিনা কারণে ওকে অমানবিক ভাবে মেরেছে পুলিশ। সেই জন্যই মানুষ খেপে যান। অন্য বাইক আরোহীদের ব্যাপারে তো কিছু বলা হয়নি।’’ রবীন্দ্রনাথ ঘোষ নামে বৈদ্যবাটির এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘মারধরের ঘটনা দুঃখজনক। তবে ধরপাকড় চলুক। পুলিশ সজাগ এবং সচেতন থাকলে, সাধারণ মানুষেরই ভাল হবে।’’
পুলিশ অবশ্য মারধরের কথা স্বীকার করেনি। পুলিশের এক সূত্রের দাবি, গোলমালে দু’টি রাজনৈতিক দল উস্কানি দিয়েছে। চন্দননগর কমিশনারেটের এক কর্তার প্রশ্ন, ‘‘সম্প্রতি বৈদ্যবাটি এবং শ্রীরামপুরে গুলি চলল। দু’টি ক্ষেত্রেই একটি মোটরবাইকে তিন জন ছিল। তাই তিন জন আরোহী-সহ কোনও মোটরবাইক যদি পালায়, পুলিশ ধরবে না?’’ সায়ন্তনকে শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালে পাঠানো হলে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
দুর্ঘটনা ঘটলেই জেলায় পুলিশি ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। রবিবার রাতে বৈদ্যবাটি দেখাল ভিন্ন ছবি। কিন্তু এই ঘটনার সঙ্গেই প্রশ্ন উঠেছে জেলার পথ-শাসনে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও।
দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে-সহ জেলার গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলিতে বাইক দুর্ঘটনা কোনও নতুন ঘটনা নয়। প্রশ্ন ওঠে রাজ্যের পুলিশ প্রশাসনের ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ অভিযান নিয়েও। পুলিশের পক্ষ থেকে হেলমেট বিলি করা হয়। বিনা হেলমেটের বাইক চালকদের পেট্রল পাম্প থেকে তেল বিক্রি নিয়েও নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। কিন্তু এইসব সরকারি নিষেধের বেড়াজাল টপকে মোটরবাইক ও যাত্রীদের নিয়ম ভাঙার প্রবণতায় লাগাম পরানো যায়নি।
জেলা পুলিশে এক পদস্থ কর্তার কথায়, ‘‘পুলিশের পথ শাসন ছাড়া গতি নেই। গাড়ি যত বাড়ছে পাল্লা দিয়ে নিয়ম ভাঙার প্রবণতা। মানুষ আইন না মানলে পুলিশি তৎপরতা ছাড়া ম্যাজিক কিন্তু কিছু নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy