দিন বদলায়। পুলিশকর্তার বদলে যান। কিন্তু কনস্টেবলদের বদলি হয় না!
হাওড়া গ্রামীণ এলাকায় ঘটে চলা নানা অপরাধের ময়না-তদন্ত করতে নেমে জেলা পুলিশ কর্তাদের একটা বড় অংশই মেনে নিচ্ছেন, বিভিন্ন থানা এলাকায় কনস্টেবলদের দিনের পর দিন বদলি না-হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রে অপরাধীদের সঙ্গে তাঁদের সখ্যতা গড়ে উঠছে। ধরপাকড়ের পরিকল্পনার কথা আগে থেকে জেনে অপরাধীরা চম্পট দিচ্ছে। অপরাধের কিনারা করতে সমস্যা হচ্ছে।
সব জেনেও জেলা পুলিশের কর্তারা কী করছেন?
জেলা পুলিশের এক কর্তার দাবি, ‘‘কনস্টেবলদের বদলির প্রয়োজনীয়তার কথা জানিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বার বার চিঠি দেওয়া হয়েছে। এখনও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’’ তবে, সমস্যা মিটতে চলেছে বলে রাজ্য পুলিশ সূত্রের খবর। রাজ্য পুলিশের এক পদস্থ কর্তা জানিয়েছেন, শীঘ্রই হাওড়া গ্রামীণ জেলা পুলিশের কনস্টেবলদের বদলি প্রক্রিয়া শুরু হবে।
হাওড়া (গ্রামীণ) জেলা পুলিশের অধীনে ১১টি থানা, চারটি তদন্তকেন্দ্র এবং গোটাচারেক ফাঁড়ি রয়েছে। সব মিলিয়ে কর্মরত রয়েছেন অন্তত হাজার দেড়েক কনস্টেবল। ২০১২ সালে হাওড়া (গ্রামীণ) জেলা পুলিশের সূচনা। তখন থেকে এ পর্যন্ত জেলার কোনও কনস্টেবলকেই বদলি করা হয়নি। অথচ, রাজ্য পুলিশের নিয়ম হল— কোনও পুলিশকর্মী একটি থানায় দু’বছর পর্যন্ত কাজে বহাল থাকতে পারেন। ব্যতিক্রমী ক্ষেত্রে সর্বাধিক তিন বছর। বদলি করা হয় এই কারণে, যাতে দীর্ঘদিন ধরে একটি থানা এলাকায় থাকার সুবাদে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে না পড়েন। কিন্তু হাওড়া গ্রামীণ জেলা পুলিশ এলাকায় অফিসারদের ক্ষেত্রে এই নিয়ম মানা হলেও, কনস্টেবলদের ক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না।
জেলা পুলিশের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, একই থানা এলাকায় বছরের পর বছর ‘পোস্টিং’ থাকার সুবাদে অনেক কনস্টেবল গ্রামবাসীদের ‘আপনজন’ হয়ে উঠেছেন। ফলে, গ্রামবাসীরা পুলিশকে ভয় পাচ্ছেন না। এটা বাহিনীর পক্ষে ক্ষতিকর। গ্রামীণ জেলা পুলিশের কর্তাদের একাংশের অভিযোগ, দুষ্কৃতীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষাকারী কনস্টেবলদের একাংশই আগে-ভাগে খবর পাচার করে দিচ্ছেন। সাম্প্রতিক দু’টি ঘটনায় এই যোগসাজশ আরও স্পষ্ট হয়েছে বলে তাঁদের দাবি। তাঁরা জানান, সম্প্রতি অবৈধ বালি-খাদানে অভিযান চালাতে গিয়ে দেখা যায় কারবারিরা পগার পার। আবার গাদিয়াড়ায় দেহ ব্যবসা রুখতে তল্লাশি চালাতে গিয়েও কাউকে ধরা যায়নি।
মুম্বই রোডে রাতের প্রহরা আবার পুলিশের একাংশের কাছে বেশ ‘লোভনীয়’। ট্রাক-চালকদের কাছ থেকে ‘আদায়’ ভালই হয়। বাগনান, উলুবেড়িয়া, পাঁচলা, সাঁকরাইল এবং ডোমজুড়—এই পাঁচ থানা মুম্বই রোডের প্রহরায় থাকে। এখানে কর্তব্যরত কনস্টেবলদের ‘ঈর্ষার’ চোখে দেখেন অন্য থানা এলাকার কনস্টেবলরা। এর ফলে বাহিনীতে বিভেদ তৈরি হয়।
অন্য ছবিও আছে। গ্রামীণ জেলা পুলিশের অধীনে আছে ভাটোরার মতো প্রত্যন্ত এলাকার তদন্তকেন্দ্র। এখানে যে সব কনস্টেবল আছেন, একঘেঁয়েমি এবং হতাশায় ভুগছেন তাঁরা। তাঁদের নিয়ে কাজ করা অনেক সময় মুশকিল হয়ে দাঁড়ায় বলে জানান জেলা পুলিশ কর্তাদের একাংশ।
কী বলছেন কনস্টেবলরা?
সকলের একই বক্তব্য— ‘‘বদলি করা না হলে আমাদের কী করার আছে?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy