জেলা নেতৃত্বের হুঁশিয়ারি এবং নির্দেশই সার। গোঘাটে দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এমনই জায়গায় পৌঁছেছে যে তৃণমূল পরিচালিত গোঘাট ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির বিরুদ্ধে ফের অনস্থা প্রস্তাব এনে মহকুমাশাসকের দফতরে চিঠি পাঠালেন পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যরা। প্রসঙ্গত, এর আগেও দুবার অনাস্থা এনেছিলেন তাঁরা। কিন্তু তা খারিজ হয়ে যায়। তারপর এ ধরনের ঘটনা যাতে আর না ঘটে সে জন্য জেলা নেতৃত্ব স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সতর্ক করে। কিন্তু তাতে যে কাজ হয়নি গত শুক্রবার ফের অনাস্থা প্রস্তাব আনার ঘটনাই তার প্রমাণ।
অনাস্থার চিঠির প্রাপ্তি স্বীকার করে মহকুমা প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, বিষয়টি খতিয়ে দেখে পঞ্চায়েত আইনানুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বার বার এই পরিস্থিতিতে অস্বস্তিতে জেলা নেতৃত্বও। স্থানীয় তৃণমূল সূত্রে খবর জেলা সভাপতি তপন দাশগুপ্ত বিষয়টি মেটানোর জন্য স্থানীয় বিধায়ক মানস মজুমদারকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন। যদিও মানসবাবুর দাবি, ‘‘বিষয়টা আমার স্তরে নেই। পুরো বিষয়টা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ দলের শীর্ষ নেতৃত্ব দেখছেন। তাঁরা দিল্লি থেকে ফিরে এই নিয়ে আলোচনায় বসবেন বলে জানিয়েছেন।”
একাধিক বার অনাস্থা আনার ডামাডোলে পঞ্চায়েত সমিতি এবং তার অধীন ৯টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়েছে। পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষরা অধিকাংশই দফতরে আসছেন না। চলতি মাসে পঞ্চায়েত সমিতিতে উন্নয়ন সংক্রান্ত সাধারণ সভা ডাকার কথা থাকলেও তা ডাকতে পারেনি ব্লক প্রশাসন। পঞ্চায়েত সমিতির এমন অবস্থায় ক্ষুব্ধ গ্রামের মানুষ। তাঁদের অভিযোগ, “দলের মধ্যে গোলমালে শৌচাগার নির্মাণ থেকে রাস্তা সংস্কার, ইন্দিরা আবাস যোজনা, পানীয় জলের কল মেরামত প্রভৃতি কাজ আটকে আছে।” যদিও গোঘাট ২-এর বিডিও ইশতিয়াক আহমেদ খানের দাবি, “আগের কাজগুলিই চালু থাকায় উন্নয়নের ক্ষেত্রে এখনই কোনও সমস্যা হচ্ছে না।’’
ব্লক প্রশাসন সূত্রে খবর, গোঘাট ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তথা দলের ব্লক সভাপতি তপন মণ্ডলের বিরুদ্ধে দুর্নীতি-স্বজনপোষণের অভিযোগ এনে ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে প্রথম অনাস্থা প্রস্তাব আনেন দলের আর এক নেতা তথা পঞ্চায়েত সমিতির কৃষি কর্মাধ্যক্ষ আতাউল হক-সহ ১৪ জন সদস্য। সেই সময় দলের আপত্তির পাশাপাশি আইনগত ত্রুটি থাকায় মহকুমাশাসক তা বাতিল করেন। এর পর পঞ্চায়েত ত্রিস্তরে বোর্ড গঠনের পর আড়াই বছরের মধ্যে অনাস্থা আনা যাবে না বলে রাজ্য সরকার আইন করে। সেই সময়সীমা পার হলেই চলতি বছরের ১১ জুলাই ফের ওই সদস্যরা অনাস্থা আনেন। কিন্তু পঞ্চায়েত আইনের ১৮ (২) ধারা অনুযায়ী যাঁরা অনাস্থা আনতে চান তাঁরা কোনও দলের সদস্য নাকি নির্দল, চিঠিতে তার উল্লেখ না থাকায় সেই অনাস্থা প্রস্তাবও বাতিল হয়ে যায়।
প্রসঙ্গত, তৃণমূলে দ্বন্দ্বের শুরু পঞ্চায়েত ভোটের পর সভাপতি নির্বাচনের সময় থেকেই। তপন মণ্ডল ১৪-১১ ভোটে দলেরই পুরনো নেতা আতাউল গোষ্টীকে হারিয়ে গোঘাট-২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সেদিনই পঞ্চায়েত সমিতির অফিস থেকে কয়েক হাত দূরে দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষ হয়। তার জের এখনও চলছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy