সাফল্য: মায়েদের সঙ্গে নিশাত মুনির (বাঁ দিকে) এবং মহম্মদ সইফ। শুক্রবার। —নিজস্ব চিত্র
মালালা ইউসুফজাইয়ের সঙ্গে তাঁর পরিচয় নেই। কিন্তু তালিবানি শক্তির বিরুদ্ধে গিয়ে মহিলাদের শিক্ষার অধিকার নিয়ে লড়াই করা মালালার দেখানো পথেই চলতে চান হাওড়ার শিবপুরের ঘিঞ্জি বস্তির মেয়ে নিশাত মুনির। উর্দু মাধ্যমে উচ্চ মাধ্যমিকে রাজ্যের মধ্যে প্রথম হওয়া নিশাত চান দেশের কোনও মহিলা বা শিশু যাতে অশিক্ষার অন্ধকারে না থাকে।
শিবপুরের চড়া বস্তির তস্য গলির ভিতরে ইটের পাঁজর বের করা চারতলা বিল্ডিংয়ের দোতলায় আট বাই দশ বর্গফুটের ঘরে বাবা, মা ও বোনের সঙ্গে থাকেন নিশাত। ওই ঘিঞ্জি ঘরের ভিতরে চলে রান্নাবান্না। তার সামনেই খাটে বসেই পড়াশোনা হাওড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের কলা বিভাগের ওই ছাত্রীর।
উর্দু মাধ্যমে রাজ্যে দ্বিতীয় তথা ছেলেদের মধ্যে প্রথম হওয়া মোমিন উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র মহম্মদ সইফের অবশ্য দিনভর পড়াশোনা করাই পছন্দ। মাঝেমধ্যে শিয়ালদহের মাঠে বন্ধুদের সঙ্গে ফুটবল খেলতেন বাণিজ্য বিভাগের ওই ছাত্র। প্রিয় খেলোয়াড় পর্তুগালের রোনাল্ডো, তবে বিশ্বকাপে সইফের পছন্দ ব্রাজিল।
নিশাত ভালবাসেন ছক্কা হাঁকাতে। মহেন্দ্র সিংহ ধোনি পছন্দের ক্রিকেটার। মেয়ের খেলা দেখার আবদার মেটাতে কষ্টেসৃষ্টে টিভিও কিনেছেন বাবা মুনির আলম। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘মেয়েটা যত দূর পড়তে চায়, পড়াব। তাতে যত কষ্টই হোক না কেন।’’
কলকাতার একটি ওষুধের দোকানের কর্মী মুনির আলম ও তাঁর স্ত্রী সাইদা মুনির চান না ছোট বয়সে মেয়ের বিয়ে দিতে। তাই নিশাতের উপরেই তাঁর ভবিষ্যতের ভার ছেড়ে
দিয়েছেন বাবা-মা।
৪৬৭ নম্বর পাওয়া সইফের সাফল্যই এ বার ইদের সব থেকে বড় উপহার বলে মত তাঁর মা শবনম খাতুনের। ছেলের ফল জেনে তিনি বলেন, ‘‘এর থেকে বড় উপহার আর কী হতে পারে বলুন।’’ সইফের বাবা মহম্মদ শাকির বলেন, ‘‘আজ মহল্লার সকলকে নিয়ে ইফতার করব।’’
হাওড়ার নিশাত এবং নারকেলডাঙার সইফ— দু’জনের পড়াশোনায় বড় ভূমিকা রয়েছে তাঁদের মায়েদের। সংসার সামলে, সেলাই মেশিনে বসেই শবনম চোখ রাখতেন ছেলের পড়াশোনার দিকে। আবার মেয়েকে কখনওই রান্নাঘরের দিকে যেতে দেননি সাইদা। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত নিজেই পড়িয়েছেন। উচ্চ মাধ্যমিকের জন্য স্থানীয় কোচিংয়ে পড়ে নিশাত পেয়েছে ৪৬৮ নম্বর। আর সইফের ভরসা ছিল স্কুল। তাঁর কথায়, ‘‘স্কুলের স্যরেরা যা পড়াতেন, তাই বাড়িতে এসে দেখতাম। পাড়ার এক দাদাও পড়াতেন।’’
হিসাব শাস্ত্র পছন্দের বিষয়। ভবিষ্যতে অডিটর হতে চান সইফ। অবসর সময়ে ইন্টারনেটে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এপিজে আব্দুল কালামের লেখা আত্মজীবনী পড়তে ভালবাসেন নিশাত। ইচ্ছা ডব্লিউবিসিএস অফিসার হওয়া। তাঁর কথায়, ‘‘আমার কাছে যা আছে, সবই সমাজকে দিতে চাই।’’
ওঁদের ইচ্ছাতে ভর করেই এ দিন শিবপুর ও নারকেলডাঙার ঘুপচি ঘরে পৌঁছেছে সূর্যের আলো।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy