ধৃত সিমসন। ছবি: তাপস ঘোষ
ফের হুগলির গুড়াপে বেসরকারি হোমে এক নাবালিকাকে টানা ধর্ষণের অভিযোগ উঠল অন্যতম কর্ণধারের বিরুদ্ধে। দু’বছর বাদে আবার বোঝা গেল, পরিস্থিতি এক চুলও বদলায়নি।
অভিযোগ পেয়ে পুলিশ ইতিমধ্যে সিমসন ইসলাম নামে বছর পঁয়ত্রিশের ওই যুবককে গ্রেফতার করেছে। সে জেরায় অপরাধ কবুলও করেছে বলে পুলিশের দাবি। বুধবার হুগলির চুঁচুড়া আদালতে তোলা হলে সিজেএম রানা দাম তাকে ১৪ দিন জেল হাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
কিন্তু নজরদারি কমিটির দৃষ্টি এড়িয়ে এই ঘটনা ঘটল কী করে, সেই প্রশ্নই বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ বছর দুই আগে এই গুড়াপেরই হোমে একাধিক আবাসিককে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ নিয়ে রাজ্য জুড়ে তোলপাড় হয়ে গিয়েছিল। হোমের পিছনে মাটি খুঁড়ে পাওয়া গিয়েছিল গুড়িয়া নামে মানসিক ভারসাম্যহীন এক তরুণীর দেহ। পরে বর্ধমানের জামালপুরে দামোদরের চর থেকে আরও কয়েকটি মৃতদেহ মেলে। হোমগুলিকে কড়া নজরদারিতে রাখার জন্য সেই সময়েই নজরদারি কমিটি গড়া হয়। কিন্তু তাতে যে কাজের কাজ কিছু হয়নি, এ বারের ঘটনা সেটাই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গুড়াপের ভাস্তারা রথতলা এলাকায় বাসরাস্তার ধারে বছর তিনেক আগে ‘ভাস্তারা খ্রিস্টান সেন্টার’ নামে ওই হোমটি তৈরি হয়। এখন সেখানে জনা পনেরো আবাসিক থাকে। তাদের মধ্যে নির্যাতিতা ও আর একটি মেয়ে বাদে সকলেরই বয়স দশের কম। বালক এবং কিশোরদের জন্য পৃথক বন্দোবস্ত রয়েছে। হোমের পাশেই একটি গির্জা। চার দশকেরও বেশি আগে সিমসনের বাবা সাইমন ইসলাম সেটি তৈরি করিয়েছিলেন। মালদহেও তাঁদের হোম রয়েছে। সিমসনের মা শান্তাদেবী সেটি দেখাশোনা করেন। পেশায় নার্স স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে সিমসন হোমের বাড়িতে থাকত। মাছের ব্যবসা করত।
জেলা প্রশাসন ও হোম সূত্রের খবর, মেয়েটির বাড়ি বর্ধমানের আসানসোল। তার ডান হাত-পা কিছুটা কমজোরি। বছরখানেক আগে এক পিসি এসে তাকে গুড়াপের ওই হোমে রেখে যান। স্থানীয় ষষ্ঠীবালা হাইস্কুলে নবম শ্রেণিতে ভর্তিও করিয়ে দেওয়া হয়েছিল তাকে। মঙ্গলবার সকালে স্কুলে যাওয়ার নাম করে হোম থেকে বেরিয়ে সে জেলার চাইল্ড হেল্পলাইনে যোগাযোগ করে। চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির সদস্যেরা তাকে গুড়াপ থানায় নিয়ে যান। সেখানে সে জানায়, গত এক মাস ধরে সিমসন তার উপরে নির্যাতন করেছে। চাইল্ড হেল্পলাইনের কমর্ীর্ সুজাতা দাস সিমসনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। সন্ধ্যায় হোম থেকেই তাকে গ্রেফতার করা হয়। নাবালিকা ও ধৃত দু’জনেরই ডাক্তারি পরীক্ষা করানো হয়েছে। মেয়েটিকে আপাতত কোন্নগরে একটি বেসরকারি হোমে রাখা হয়েছে।
এ দিন হুগলি জেলার সমাজকল্যাণ আধিকারিক প্রফুল্লকুমার দে, চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির সদস্যেরা এবং ধনেখালি ব্লক প্রশাসনের প্রতিনিধিরা গিয়ে হোমের আবাসিকদের সঙ্গে কথা বলেন। জেলা সমাজকল্যাণ দফতরের দাবি, ওই হোমটি তাদের তালিকাভুক্ত নয়। সেটির যা রেজিস্ট্রেশন নম্বর (এস/৭১৬৬৩ কলকাতা), তাতে জেলায় নয়, সেটি নথিভুক্ত হয়েছে কলকাতায়। কিন্তু জেলা প্রশাসনের ছাড়পত্র ছাড়াই কী ভাবে চলছিল হোমটি? কেন আগে কারও নজরে পড়েনি? এর উত্তর মেলেনি। প্রফুল্লবাবু বলেন, “গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি দেখছি। যদি দেখা যায় আবাসিকদের থাকার সমস্যা হচ্ছে, তাদের অন্য হোমে পাঠানো হবে। সমস্যা যদি না-ও হয়, তাও পর্যবেক্ষক নিয়োগ করা হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy