Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪
ধূলাগড় আনাজ বাজারে শিকেয় নিরাপত্তা

সংস্কার নেই, তারের জালে লুকিয়ে বিপদ

এক সপ্তাহ আগে পুড়ে গিয়েছিল দমদমের গোরাবাজার। উঠেছিল নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন। সেই ঘটনা থেকে আদৌ কি কোনও শিক্ষা নিয়েছে দুই জেলার বড় বাজারগুলি? ঘুরে দেখল আনন্দবাজার। আজ নজরে ধূলাগড় বাজার।

মিটার বক্সে তার জড়িয়ে এমনই হাল। ছবি: সুব্রত জানা

মিটার বক্সে তার জড়িয়ে এমনই হাল। ছবি: সুব্রত জানা

নুরুল আবসার
সাঁকরাইল শেষ আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০১৮ ০০:৪৪
Share: Save:

চারদিকে দাহ্য জিনিসপত্র। যত্রতত্র বিপজ্জনক ভাবে ঝুলছে বিদ্যুতের তার। তাতেই লাগানো আছে বাল্‌ব। দেওয়ালের যেখানে-সেখানে মিটার-বক্স। কোথাও কোনও অগ্নি নির্বাপণ যন্ত্র নেই। কাছাকাছি নেই কোনও পুকুর বা জলাশয়ও।

এমন অগোছালো অবস্থাতেই দিন কাটছে সাঁকরাইলের ধূলাগড় আনাজ বাজারের। বাজারের ব্যবসায়ীরা মানছেন, সে কোনও সময়ে অগ্নিকাণ্ড ঘটতে পারে। তবু কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। দমদমের গোরাবাজারের অগ্নিকাণ্ডের পরেও হুঁশ ফেরেনি কারও।

গত রবিবার গভীর রাতে গোরাবাজারে আগুন লাগে। পরের দিন দুপুর ১২টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। ততক্ষণে অধিকাংশ দোকানই পুড়ে যায়। নষ্ট হয়ে যায় কয়েক কোটি টাকার সম্পত্তি। ধূলাগড়ের আনাজ বাজারটিরও নামডাক আছে। বছর দশেক আগে গড়ে ওঠা এই পাইকারি আনাজ বাজার ইতিমধ্যে কোলে মার্কেটের সঙ্গে টেক্কা দিচ্ছে। রাজ্যের বিভিন্ন এলাকা থেকে আনাজ নিয়ে ব্যবসায়ীরা এখানে আসেন। তাঁদের কাছ থেকে হাওড়া, হুগলি, পূর্ব মেদিনীপুর, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার খুচরো ব্যবসায়ীরা তা কিনে যান। প্রতিদিন আনাজের কয়েকশো গাড়ি ঢোকে। ক্রেতা-বিক্রেতার ভিড়ে বাজারে হাঁটাই দুষ্কর। বিকিকিনি চলে দুপুর ২টো থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত। কিন্তু কোথায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা?

মিটার-বক্সগুলি থেকে বিদ্যুতের তার কুণ্ডলী পাকিয়ে রয়েছে। দেখেই বোঝা যায়, বহুদিন মিটার-বক্সগুলি সংস্কার হয়নি। অনুপ দাস নামে এক ব্যবসায়ী মানছেন, ‘‘যে কোনও সময় শট সার্কিট হয়ে অগ্নিকাণ্ড ঘটতে পারে।’’

বাজারে পাকা স্টল যেমন আছে, তেমনই রয়েছে টিনের ছাউনি। ব্যবসায়ীদের ভিড় বেশি থাকে ছাউনির নীচে। সেখানে দমবন্ধ করা পরিবেশ। তারই মধ্যে চলে ব্যবসা। ছাউনিগুলির কাঠামো বাঁশ-কাঠের। বাজার এলাকা ভর্তি খড়ে। কুমড়ো, তরমুজের মতো ফল-আনাজ গাড়িতে আনার সময়ে খড় মুড়ে রাখা হয়। পাকা স্টলগুলি সব পাশাপাশি। এই অবস্থায় কোনও কারণে আগুন লাগলে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। দমকল ঢুকলেও তাদের নিজেদের আনা জলেই যে আগুন নোকাবিলা করতে হবে, মানছেন ব্যবসায়ীরা।

কিন্তু কেন এই অবস্থা?

বেসরকারি এই বাজারটি তৈরি করেছে ধূলাগড় ট্রাক টার্মিনাল কর্তৃপক্ষ। তাঁরাই এটি ব্যবসায়ীদের দীর্ঘমেয়াদে ‘লিজ’ দিয়েছেন। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, তাঁদের স্টল বা শেড লিজ দেওয়া হলেও বিদ্যুত সংযোগ নেওয়া আছে ধূলাগড় ট্রাক টার্মিনাল কর্তৃপক্ষের নামে। তাঁদের শুধু একটি করে সাব-মিটার দেওয়া হয়েছে। ব্যবসায়ী সমিতির কর্তা নেপাল মল্লিক জানান, মিটার-বক্সে খোলা তার ঝুললেও তাঁরা নিজেরা কিছু করতে পারেন না। টার্মিনাল কর্তৃপক্ষকে জানাতে হয়। তাঁরা বিদ্যুৎ দফতরকে খবর দিলে তবে মেরামতি হয়।’’ মেরামতির এই প্রক্রিয়ায় দুর্ঘটনার আশঙ্কা যে থাকে, তা স্বীকার করে নেপালবাবু বলেন, ‘‘কী আর করা যাবে। ছোটখাটো কোনও ত্রুটি হলে আমরা নিজেরা মেরামত করে নিই। নিজেদের নামে মিটার থাকলে এই সমস্যা হতো না।’’

ট্রাক টার্মিনাল কর্তৃপক্ষের পাল্টা বক্তব্য, ব্যবসায়ীরা তাঁদের কাছ থেকে স্টল বা ছাউনির জন্য জমি কিনলেও ট্রান্সফর্মার বসানোর জমি কেনেননি। ফলে, তাঁরা নিজেদের নামে বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে চাইলে ট্রান্সফর্মার বসাতে হবে। কিন্তু জমি নেই। বাজারে অগ্নি নির্বাপণ যন্ত্র রাখার দায়ও ব্যবসায়ীদের উপরেই চাপিয়েছেন ট্রাক টার্মিনাল কর্তারা।

কী বলছেন ব্যবসায়ীরা? তাঁদের পক্ষে নেপালবাবু মানছেন, ‘‘আসলে কোনও দিন দুর্ঘটনা ঘটেনি তো, তাই আর অগ্নি নির্বাপণ যন্ত্র বসানো হয়নি।’’ একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘দেখি, ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে ওই যন্ত্র বসাতে হবে।’’

এখন দেখার, কবে অগ্নি-সুরক্ষা ব্যবস্থা চালু হয় ওই বাজারে!

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE