Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

নোটার ফল ভোটারদের কাছে স্পষ্ট করা উচিত

‘নোটা’ নিয়ে প্রচার জরুরি বলে মনে করেন পান্ডুয়ার অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক বিপ্লবকুমার ভাদুড়ি।

 চর্চা: আলোচনার একটি মুহূর্ত। ছবি: সুশান্ত সরকার

চর্চা: আলোচনার একটি মুহূর্ত। ছবি: সুশান্ত সরকার

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়
পান্ডুয়া শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০১৯ ০২:২১
Share: Save:

গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় উৎসব লোকসভা নির্বাচন। ২০১৩ সালে ভারতের নির্বাচন কমিশন প্রথম ঘোষণা করে ‘নোটা’র। সেই ঘোষণার পর ছয় বছর কেটে গিয়েছে। নেহাত কম সময় নয়। গত কয়েকটি নির্বাচনের প্রবণতা বলছে, সারা দেশে ‘নোটা’য় ভোটের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। তাই এখন প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, ‘নোটা’ কী তাহলে প্রাসঙ্গিকতা পাচ্ছে ভোটারদের কাছে? সম্প্রতি পান্ডুয়ায় আনন্দবাজার পত্রিকার তরফে আয়োজিত এক আলোচনাচক্রে এই প্রশ্নই রাখা হয়েছিল শহর ও শহরতলির নানা মানুষের কাছে।

‘নোটা’ নিয়ে প্রচার জরুরি বলে মনে করেন পান্ডুয়ার অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক বিপ্লবকুমার ভাদুড়ি। তিনি বলেন, ‘‘‘নোটা’র প্রচার প্রয়োজন। ‘নোটা’ মানে কিন্তু নির্দল নয়। ‘নোটা’ একটা প্রতিবাদ। গণতন্ত্র রক্ষা করতে গেলে, ‘নোটা’র ফল ভোটারদের কাছে স্পষ্ট করা উচিত।’’

এই ভাবনার ঠিক বিপরীত মেরুর ভাবনা শহরের অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তিনি বলেন, ‘‘আমি ‘নোটা’র বিরুদ্ধে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় যাঁরা ‘নোটা’য় ভোট দেন, তাঁদের চিহ্নিত করা উচিত।’’ পেশায় শিক্ষক ইন্দ্রনাথ বসু-রায়ের কাছে অবশ্য ‘নোটা’র য়োজনীয়তার অন্য ব্যাখা। তিনি বলেন, ‘‘নোটায় কেউ ভোট দিলেন মানে তিনি ক্ষেত্রবিশেষে ছাপ্পা রুখে দিলেন। আবার ভোট না দিতে গেলে চিহ্নিত হয়ে যাওয়ার একটা মস্ত ঝুঁকি থাকে। ‘নোটা’র সুযোগ থাকায় সেটাও এড়ানো গেল।’’

নোটা নিয়ে অন্য স্বপ্ন রয়েছে পেশায় শিক্ষক ভাস্কর মণ্ডলের। তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘নোটা আগামী দিনে নির্ণায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করবে।’’

তবে ‘নোটা’-র প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তরুণ ছাত্র সমর চট্টোপাধ্যায়। ছাত্রী রিঙ্কি মোদক বলেন, ‘‘কেউ চাইলে ‘নোটা’য় ভোট দিতেই পারেন। কিন্তু ভোট দেওয়ার আগে পুরো বিষয়টি নিয়ে তাঁর চিন্তাভাবনার প্রয়োজন আছে।’’ কলেজ ছাত্র অর্ক বৈরাগ্য আবার মনে করেন নোটা প্রাসঙ্গিক। নির্বাচন কমিশনের কাছে তাঁর ভিন্ন আবেদন। তিনি বলেন, ‘‘দেশে প্রতিটি স্তরের ভোটারদের ‘নোটা’ য় ভোট দেওয়ার সুযোগ থাকাটা জরুরি। পঞ্চায়েত ভোটে কিন্তু সেই সুযোগ ছিল না।’’

কলেজ শিক্ষিকা শুক্লা ঘোষ আবার নোটাকে ভিন্ন আঙ্গিকে দেখছেন। তাঁর ব্যাখা, ‘‘ভারতে রাজনৈতিক আবহাওয়া যে দিকে যাচ্ছে তাতে ‘নোটা’ ব্যক্তি স্বাধীনতার ক্ষেত্রে পথ দেখাচ্ছে।’’ পেশায় শিক্ষক গৌতম বিটও ‘নোটা’র প্রাসঙ্গিকতার পক্ষেই সাওয়াল করেন। তিনি বলেন, ‘‘রাজনৈতিক দলগুলিকে ‘নোটা’ ভয় পাইয়ে দিয়েছে। সে ক্ষেত্রে ‘নোটা’য় ভোট বেশি পড়লে উপ-নির্বাচন করা উচিত। তাতে ‘নোটা’র জোরের জায়গাটা আরোও জোরদার হবে।’’

সমাজসেবী অনুদ্যুতি চক্রবর্তী চান, রাজনৈতিক দলগুলি তাঁদের প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে যেন সচেতন হয়। প্রায় একই দাবি তুলেছেন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক জগৎবন্ধু সরকার। তিনি বলেন, ‘‘প্রার্থী তো চলেন দলের অঙ্গুলি হেলনে। নেতাদের মিথ্যা কথায় আমরা ক্লান্ত। ‘নোটা’ বেশি পড়লে বুঝতে হবে মানুষ শিক্ষিত হচ্ছেন।’’

সরকারি কর্মচারী মানস মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ভোটারের আইনি স্বীকৃতি এই ‘নোটা’।’’ বেসরকারি সংস্থার কর্মী কালোবরণ দাস আবার নোটাকে প্রান্তিক মানুষদের পরিস্থিতির নিরিখে ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘প্রান্তিক মানুষ তো জানেন না, ‘নোটা’ কী? তাই নোটার প্রাসঙ্গিকতা বাড়াতে আরও প্রচার হওয়া উচিত।’’

কলেজ শিক্ষিকা সায়ন্তনী চক্রবর্তী আবার বলেন, ‘‘প্রার্থীদের মধ্যে কে ভাল? সেই বিচারও অনেক সময় কঠিন হয়ে পড়ে ভোটারদের ক্ষেত্রে। তাই ‘নোটা’র প্রাসঙ্গিকতাও প্রশ্নাতীত নয়। ‘নোটা’ নিয়ে আরও চিন্তাভাবনার অবকাশ আছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Lok Sabha Election 2019 NOTA None of The Above
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE