বালির ট্রাক থামিয়ে পরীক্ষা সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের। ছবি: দীপঙ্কর দে।
বেআইনি বালিখাদ নিয়ে নানা অভিযোগ ছিলই। রাজ্যের সেচমন্ত্রী তা রুখতে নিজেই পর্যায়ক্রমে অভিযানে নেমেছেন বিভিন্ন জেলায়। বুধবার তিনি হানা দেন হুগলির চাঁপাডাঙা এলাকায়। মন্ত্রী সরাসরি পুরশুড়ায় দামোদরের চরে বালিখাদে চলে যান। রাস্তায় ওভারলোডিং এবং সঠিক কাগজপত্র না থাকায় মন্ত্রী ব্যবস্থাও নেন বালির ট্রাকচালকদের বিরুদ্ধে। বালিখাদের কাগজপত্র পরীক্ষা করেন তিনি। বৃষ্টি উপেক্ষা করে তারকেশ্বর, অহল্যাবাই রোড, ডানকুনিতে দীর্ঘ সময় ধরে এদিন ওই অভিযান চলে।
বস্তুত দীর্ঘদিন ধরেই হুগলির মুণ্ডেশ্বরী, দ্বারকেশ্বর, দামোদর-সহ কয়েকটি নদীতে বেআইনি বালিখাদ চালানোর অভিযোগ রয়েছে। ওই সব খাদ থেকে সরকার সরাসরি আইনমাফিক রাজস্ব পায় না বলেই অভিযোগ। তার উপর পুলিশ বা সেচ দফতরের কর্মীরা ব্যবস্থা নিতে গেলে নানা রাজনৈতিক চাপ থাকে। তার ফলে সরকারি কর্মীরা দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়েন সেইসব চাপ উপেক্ষা করে আইনভাঙা মানুষজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে।
যদিও সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা কোনও বেআইনি কাজ বরদাস্ত করব না। সরকারি কর্মীদের নজরদারি আছেই। তার উপর আমি রাজ্যের নানা জেলায় নিজে দাঁড়িয়ে থেকে ব্যবস্থা নিচ্ছি নিয়ম ভাঙা বালিখাদ এবং ট্রাকগুলির বিরুদ্ধে। তবে আরামবাগে বিভিন্ন বালির খাদের কাগজপত্র পরীক্ষা করে সে ভাবে অসঙ্গতি কিছু পাইনি। নিয়ম ভাঙা বেশ কিছু ট্রাকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’’
বাম আমলে খানাকুল, পুড়শুড়া, আরামবাগ আর গোঘাটে সিপিএম এবং সিপিআইয়ের মধ্যে বালির খাদের দখল নিয়ে নিত্য রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ লেগেই থাকত। শুধু খুন নয়, পাইপগান, মাসকেট, ভকসল, বোমা নিয়ে সেইসব সংঘর্ষ ঘিরে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়াত গ্রামগুলিতে। পরিস্থিতি কখনও কখনও এমন চেহারা নিত যে পুলিশ পর্যন্ত গ্রামে ঢুকতে সাহস পেত না। অনেক সময় সংঘর্ষে মৃতদের দেহ বালির চরে পুঁতে লোপাট করে দেওয়া হত। আরামবাগের হরিণখোলা ১ ও ২ পঞ্চায়েতে প্রায়ই সংঘর্ষ লেগে থাকত বালির খাদের দখল নিয়ে।
সময় বদলেছে। রাজ্যে বদলেছে শাসকদলওে। কিন্তু বালি খাদ নিয়ে অভিযোগের চেহারা সেই ভাবে বদলায়নি। রাজনৈতিক সংঘর্ষের ঘটনা কমলেও চাপের অভিযোগ আজও একই রকম। তাই এ বার মন্ত্রীই সরাসরিই আসরে। রাজ্যের প্রয়োজনীয় বালির এখন আরামবাগ বড় জোগানোদার। মুণ্ডেশ্বরী, দামোদর ছাড়াও দ্বারকেশ্বরের চর থেকে নিয়ম করে বালি ওঠে। সরকার নিয়ম মাফিক ব্যবসায়ীদের বালির খাদের এলাকা ভিত্তিক রাজস্ব ধার্য করে। কিন্তু প্রায়ই অভিযোগ ওঠে ব্যবসায়ীরা নিয়ম না মেনে অনেক বেশি এলাকার বালি তোলেন। তার উপর ট্রাকগুলি বাড়তি বালি বোঝাই করে ওভারলোডিং করে। সেই সব অভিযোগ খতিয়ে দেখতেই এদিন সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy