Advertisement
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
দক্ষিণেশ্বর

অবৈধ সিমেন্ট কারখানা জানা ছিল না পুলিশের

রেল লাইনের নিচে পরিত্যক্ত আন্ডারপাস। সেখানেই পলিথিন, দরমা ঘেরা বড় একটা ঘর। অধিকাংশ সময়েই সামনে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা লরি থেকে মালপত্র ওঠানো-নামানো চলত। পাশেই চলছে মেট্রোর কাজ। ফলে ঘরটির ভিতরে কী চলছে, তা জানার উপায় ছিল না সাধারণ মানুষের।

আন্ডারপাসের তলায় সেই কারখানা। — নিজস্ব চিত্র

আন্ডারপাসের তলায় সেই কারখানা। — নিজস্ব চিত্র

শান্তনু ঘোষ
শেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:৫১
Share: Save:

রেল লাইনের নিচে পরিত্যক্ত আন্ডারপাস। সেখানেই পলিথিন, দরমা ঘেরা বড় একটা ঘর। অধিকাংশ সময়েই সামনে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা লরি থেকে মালপত্র ওঠানো-নামানো চলত। পাশেই চলছে মেট্রোর কাজ। ফলে ঘরটির ভিতরে কী চলছে, তা জানার উপায় ছিল না সাধারণ মানুষের। প্রায় তিন বছর ধরে ওই রাস্তা দিয়ে যাতায়াতকারী প্রত্যেকেই ভাবতেন মেট্রোর কাজের জন্য ঘরটি বানিয়েছেন রেল কর্তৃপক্ষ।

ঘটনাস্থল দক্ষিণেশ্বর আইল্যান্ড থেকে বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠার সময় শিয়ালদহ-ডানকুনি রেললাইনের নিচের আন্ডারপাস। সোমবার ব্যারাকপুর সিটি পুলিশের এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চ ও স্থানীয় পুলিশ সেখানে হানা দেওয়ার পরেই ভুল ভাঙল। জানা গেল, ওই ঘরটি ভেজাল সিমেন্ট বানানোর কারখানা। ঘটনাস্থল থেকে গ্রেফতার হয় কাশীপুরের বাসিন্দা ইমতিয়াজ আলি-সহ মোট ১০ জন। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে সাতটি লরি। উদ্ধার হয়েছে বেশ কিছু মালপত্র। এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, ওই কারখানার সামনে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

তদন্তকারীরা জানান, ওই এলাকায় মেট্রোর কাজ শুরু হওয়ার পর থেকেই ওই ব্যবসা চালু হয়েছে। পাশে মেট্রোর কাজ চলায় কেউই ওই ঘরটিকে আলাদা কিছু মনে করতেন না। তবে এক্সপ্রেসওয়ের ধারে দীর্ঘ দিন ধরে সিমেন্ট চুরি ও ভেজাল সিমেন্ট তৈরির কারখানা চললেও পুলিশ এত দিন কিছু টের পেল না কেন তা নিয়েও উঠে‌ছে প্রশ্ন। যদিও ব্যারাকপুর সিটি পুলিশের গোয়েন্দাপ্রধান অজয় ঠাকুর বলেন, ‘‘সকলেই মেট্রোর ঘর ভেবে ভুল করতেন। পুলিশ কিছু করেনি তা নয়। সোমবার পুলিশই জানার পরে নিজে থেকে হানা দিয়েছে।’’

পুলিশ সূত্রে খবর, ধৃতদের জেরায় যে তথ্য উঠে এসেছে তা থেকে বোঝা যাচ্ছে বড় একটি চক্র এর সঙ্গে জড়িত। সেই চক্রে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি থেকে সিন্ডিকেট ব্যবসায়ী-সহ অন্য বেশ কয়েকটি দফতরের ঠিকাদাররাও জড়িত রয়েছেন। তদন্তে পুলিশ জেনেছে, চিনার পার্কের
এক ইমারতি ব্যবসায়ী মূলত এই সিমেন্টের বরাত দিতেন। তা ছাড়াও ওই সিমেন্ট রাজারহাট, নিউ টাউন-সহ শহরের বেশ কিছু সিন্ডিকেটে সরবরাহ করা হত। তদন্তে বেশ
কয়েক জনের নাম উঠে এসেছে বলেও জানান তদন্তকারীরা।

দক্ষিণেশ্বরের কারখানার দেখভাল করতেন জয়ন্ত চৌধুরী ও মামা চৌধুরী নামের দুই যুবক। তাঁরা স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর শঙ্করী ভৌমিকের ভাই। যদিও পুলিশ জানায়, ঘটনার পর থেকেই ওই দু’জন পলাতক। শঙ্করীদেবী বলেন, ‘‘কাউকেই কোনও অন্যায় কাজ করতে সাহায্য করিনি। ভাইয়েরা কী কাজ করে তা আমার জানার কথা নয়। ওই কারখানাটি এক্সপ্রেসওয়ের ধারে। সেখানে কাউন্সিলরের কোনও ভূমিকা নেই। অনিয়ম কিছু হলে তা পুলিশের
দেখার কথা।’’

পুলিশ সূত্রে খবর, কাশীপুর রেল ইয়ার্ডে বিভিন্ন নামী কোম্পানীর সিমেন্টের বস্তা আসার পরে সেগুলি লরিতে করে ইমতিয়াজের নির্দেশ মতো আসত দক্ষিণেশ্বরে। সেখানে বস্তার সেলাই কিছুটা খুলে কয়েক কেজি সিমেন্ট ঢেলে ফের বস্তা আটকে দেওয়া হত। এর পরে ওই সিমেন্টের সঙ্গে ফ্লাই অ্যাশ, মাটির গুঁড়ো, রাসায়নিক মিশিয়ে বিভিন্ন কোম্পানির বস্তায় ভরে চলে যেত বাজারে। মঙ্গলবার ধৃতদের ব্যারাকপুর মহকুমা আদালতে তোলা হলে ইমতিয়াজকে সাত দিনের পুলিশি হেফাজত ও বাকিদের সাত দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cement factory Police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE