ঐক্য: দুর্গাপুজোর প্রস্তুতিতে একজোট গ্রামের হিন্দু-মুসলিম সকলেই। নিজস্ব চিত্র
৪০ বছর পর ঢাক বাজবে গ্রামে—উঠে পড়ে লেগেছেন মঞ্জুর আলম, হারাধন রাইলরা। পুজো এ বার হবেই কানপুর গ্রামে।
১৯৭২ সালে প্রথম দুর্গাপুজো হয়েছিল শ্যামপুরের কানপুরে। তারপর ’৭৮-এর বন্যায় ডুবে গিয়েছিল গোটা গ্রাম। উঠে গিয়েছিল চাষবাস। দুর্গাও আর পা রাখেননি ওই গ্রামে। কৃষি প্রধান কানপুরে হিন্দু-মুসলিমের পাশাপাশি বাস। তবে তাকে ঘিরে রয়েছে যে আটটি গ্রাম, সেখানে বেশির ভাগ পরিবারই মুসলিম। তাই আশপাশের গ্রামেও দুর্গা আবাহনের সুযোগ ছিল না। গত দু’দশকে একটু একটু করে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বিধ্বস্ত গ্রামের অর্থনীতি। এ বছর তাই দুই সম্প্রদায়ের মানুষ ঠিক করেন অনেক কালের পুরনো পুজো আবার শুরু করবেন তাঁরা।
সেই বৈশাখ মাসে কমিটি গড়েছেন তাঁরা। তারপর থেকে চলছে তোড়জোড়। দু’মাস ধরে প্রশাসনের দরজার কড়া নাড়ছেন উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য মঞ্জুর আলম। নতুন পুজোর অনুমতি আদায় করা মুখের কথা নয়। তবু চেষ্টার কসুর করেননি। অবশেষে গত রবিবারই তাঁরা পেয়ে গিয়েছেন সেই অনুমতি। আন্টিলায় তৈরি হচ্ছে প্রতিমা। গ্রামের ভিতর এখন মণ্ডপ তৈরির ব্যস্ততা।
মঞ্জুর বলেন, ‘‘ছোটবেলা থেকে বাবা-কাকাদের মুখে শুনেছি, এখানে পুজো হত। বাবা বলতেন, মুসলিম বলে তাঁরা দূরে থাকেননি কোনও দিন। কিন্তু আমাদের প্রজন্মের কেউ পুজো হতে দেখিনি। ফলে আমাদের খারাপই লাগত। এ বছর আবার সেই আনন্দ।’’
উপদেষ্টা মণ্ডলীর আর এক সদস্য হারাধন রাইল বলেন, ‘‘আমরা সবাই মিলে ঠিক করেছি এ বছর ফের শুরু করব পুজো। এ বিষয়ে মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষরা আমাদের পাশেই আছেন। আমরা তো বরাবর পাশাপাশি বাস করছি। আমাদের সব উৎসবও এক।’’
আরও পড়ুন: হঠাৎ হাজির হনুমান, হুলস্থুল নয়াগ্রামের স্কুলে
কানপুরের গ্রামে দুই সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে কখনও কোনও অশান্তি হয়নি বলে দাবি করেছেন বাসিন্দারা। ইদের দিনেও উৎসব মুখর হয়ে ওঠে গোটা এলাকা। কিন্তু দুর্গাপুজোয় মন খারপ হত মাধুরী পুরকায়স্থ, ময়না পুরকায়স্থদের। তাঁরা বলেন, ‘‘আশপাশের গ্রামেও তো পুজো হত না। অঞ্জলি দিতে বা বরণ করতে এতদিন যেতে হত অনেক দূরে। এ বার আর কোত্থাও যাব না। চারদিন গ্রামের মণ্ডপেই কাটাব।’’
গত কয়েক বছরে অনেকখানি ঘুরে দাঁড়িয়েছে কানপুর। শুরু হয়েছে চাষ। গ্রামের নতুন প্রজন্মের অনেকেই এখন হারাধন, মঞ্জুরের মতো শিক্ষকতা করেন। অনেকের ছোটখাট ব্যবসা, কেউ আবার অন্য চাকরিও করেন। ফলে তিন লক্ষ টাকা চাঁদা তুলে আয়োজন করে ফেলেছেন পুজোর। পরিকল্পনাও তাঁদের অনেক। সকাল বিকেল মণ্ডপের সামনেই থাকছেন তপন পুরকায়স্থ, মৃণাল পুরকায়স্থ, আবদুস সালাম, মসিয়র রহমানেরা। তাঁরাই বললেন, ‘‘গ্রামের ভিতর দিয়ে গিয়েছে বাগনান-শ্যামপুর রাস্তা। সে রাস্তার দু’ধারে আলোর রোশনাই হবে। চারদিন পাত পেড়ে পাশাপাশি বসে খাবে দুই সম্প্রদায়ের মানুষ।’’ মণ্ডপের পাশে ছোট একখানা মঞ্চও তৈরি হবে। গ্রামের কচিকাঁচার নাচবে, গাইবে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের নানা আয়োজনে এখন ব্যস্ত তারাও।
শুধু কি গ্রামের মানুষ? পুজোর আয়োজনে খুশি প্রশাসনও। শ্যামপুর থানার এক পদস্থ কর্তার বলেন, ‘‘প্রায় ফিনিক্স পাখির মতো জেগে উঠেছে এই পুজো। অনুমতি দিয়েছি আমরা। দেব না? সম্প্রতি নতুন বার্তা নিয়ে আসছে বহু বছরের পুরনো এই পুজো। আমরাও খুশি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy