শ্রীরামপুর আদালতে বিচারপতি নিশীথা মাত্রে ও বিচারপতি প্রণব চট্টোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার। — নিজস্ব চিত্র।
কঠোর হাতে কর্মবিরতি আন্দোলনের মোকাবিলা করে বিভিন্ন এজলাস চালু রেখেছিল কলকাতা হাইকোর্ট। তারাই ফের কড়া হওয়ায় এ বার এজলাস বয়কটের আন্দোলন তুলে নিলেন শ্রীরামপুর আদালতের আইনজীবীরা। তবে উচ্চ আদালতের দাওয়াইটা এল ওই আন্দোলন ৫১ দিন পার করার পরে!
৭ জানুয়ারি থেকে আন্দোলনকারী আইনজীবীরা ওই আদালতের দেওয়ানি বিচারক (সিনিয়র ডিভিশন) মন্দাক্রান্তা সাহার আদালত বয়কট করছিলেন। আন্দোলনের ৫০ দিন পূর্তি উপলক্ষে আদালতের কাজ ফেলে ক্রিকেট টুর্নামেন্টেরও আয়োজন করেছিলেন ‘সংগ্রামী’ আইনজীবীরা। এবং সেই খেলাটা হচ্ছিল আদালতের মাঠেই। হাইকোর্টের হস্তক্ষেপের পরেও আইনজীবীদের এ-হেন আচরণে আইনজ্ঞেরা সমালোচনায় মুখর হন। হাইকোর্ট কেন কড়া ব্যবস্থা নিচ্ছে না, সেই প্রশ্নও তোলেন তাঁরা।
বৃহস্পতিবার বিচারপতি প্রণব চট্টোপাধ্যায় ও বিচারপতি নিশীথা মাত্রেকে শ্রীরামপুর পাঠান হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুর। দুই বিচারপতির কড়া মনোভাবে বিকেলে বয়কট আন্দোলন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন আন্দোলনকারীরা।
শ্রীরামপুর আদালত সূত্রের খবর, শর্তাধীনে আন্দোলনকারী আইনজীবীরা আজ, শুক্রবার থেকে আবার ওই দেওয়ানি বিচারকের এজলাসে যাবেন। বিচারক সাহার ব্যবহারের উপরে নজর রাখবেন তাঁরা। আইনজীবীরা যদি মনে করেন সব ঠিক চলছে, তবেই তাঁরা স্থায়ী ভাবে আন্দোলন থেকে সরে আসবেন। বিচারক সাহার বিরুদ্ধে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ তুলে তাঁর বদলির দাবিতে ওই এজলাস বয়কট করছিলেন আইনজীবীদের বড় এটা অংশ। আন্দোলনকারীরা অবশ্য সেই দাবি থেকে সরছেন না বলেই বার লাইব্রেরি সূত্রের খবর।
আইনজীবীদের যৌথ সংগ্রাম কমিটির মুখপাত্র রঞ্জন সরকার বলেন, “দুই বিচারপতি সহানুভূতির সঙ্গে আমাদের কথা শুনেছেন। বয়কট তুলে নিতে অনুরোধ করেছেন। ওঁদের সম্মানরক্ষার্থেই আপাতত আন্দোলন স্থগিত রাখা হচ্ছে।” রঞ্জনবাবু যোগ করেন, “কিছু দিন পরিস্থিতি দেখে আমরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব।” সোমবার থেকে এক সপ্তাহ ধরে পুরো শ্রীরামপুর আদালত বয়কটের যে-কর্মসূচি ঠিক হয়েছিল, তা-ও প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে বলে জানান সংগ্রাম কমিটির এক মুখপাত্র।
এ দিন বেলা ৩টে নাগাদ বিচারপতি মাত্রে এবং বিচারপতি চট্টোপাধ্যায় শ্রীরামপুর আদালতে পৌঁছন। বিচারপতি মাত্রে হাইকোর্টের তরফে হুগলির আদালতগুলির দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা ধরে মন্দাক্রান্তাদেবীর সঙ্গে কথা বলেন। পরে তিনি এবং বিচারপতি চট্টোপাধ্যায় বার লাইব্রেরিতে গিয়ে আইনজীবীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন।
শ্রীরামপুর আদালতের এক আইনজীবী বলেন, আইনজীবী হিসেবে হাইকোর্টের মর্যাদা রক্ষা করা তাঁদের কর্তব্য বলে আন্দোলনকারী আইনজীবীদের কাছে স্পষ্ট বার্তা পৌঁছে দেন হাইকোর্টের দুই বিচারপতি। তাঁরা জানিয়ে দেন, হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি চেল্লুর তাঁদের পাঠিয়েছেন। প্রধান বিচারপতির মর্যাদা রক্ষা করা তাঁদের দায়িত্ব। বিচারপতি চট্টোপাধ্যায় আন্দোলনকারীদের বলেন, হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতিদের কাজের বিচারও হয় সুপ্রিম কোর্টে। আইনজীবীদের অভাব-অভিযোগ থাকতেই পারে। তা নিয়ে হাইকোর্ট অবশ্যই চিন্তাভাবনা করবে। কিন্তু এ ভাবে আদালত বয়কট বাঞ্ছনীয় নয়।
আন্দোলন ওঠায় সন্তোষ প্রকাশ করলেও কলকাতা হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি ভগবতীপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় এত দিন ধরে আন্দোলন চলতে দেওয়ার দায় হাইকোর্টের উপরেই চাপিয়েছেন। তিনি বলেন, “হাইকোর্টের দীর্ঘসূত্রতায় অচলাবস্থা কাটাতে অনেক দেরি হয়ে গেল। হাইকোর্টের ঢিলেঢালা মনোভাবে ক্ষতি হয়েছে বিচারপ্রার্থীদেরই।”
বিচারপতি প্রণব চট্টোপাধ্যায় না-গেলে অচলাবস্থা কাটত না বলে মন্তব্য করেন হাইকোর্টের আইনজীবী অরুণাভ ঘোষ। তবে হাইকোর্টের আইনজীবীদের একাংশ মনে করেন, হাইকোর্ট এখনও ঢিলেঢালা ভাবে চলছে। তাঁরা বলেন, এখনও তো আলিপুর আদালতের (ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্রের পক্ষ নিয়ে এজলাসেই বিচারককে শাসিয়েছিলেন এক শ্রেণির আইনজীবী) ঘটনা নিয়ে হাইকোর্ট কোনও পদক্ষেপই করল না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy