Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

কারও ঘরে টানা কাশির শব্দ পেলেই ওঁরা হাজির

কেউ কোনও ক্লাবের সদস্য, কেউ স্বনির্ভর গোষ্ঠীর, কেউ বা স্কুল পড়ুয়া। ওঁদের কাজ সেই রোগী সম্পর্কে স্বাস্থ্যকর্মীদের জানানো বা সরাসরি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া। যক্ষ্মা নির্মূল করতে হুগলির গ্রামে গ্রামে এ ভাবেই ‘নেটওয়ার্ক’ তৈরিতে উদ্যোগী হয়েছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর।

পীযূষ নন্দী
আরামবাগ শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০১৭ ০১:৩৯
Share: Save:

পাড়ায় টানা কয়েক দিন কারও কাশির আওয়াজ পেলেই সেই ঘরে ওঁরা হাজির! কেউ কোনও ক্লাবের সদস্য, কেউ স্বনির্ভর গোষ্ঠীর, কেউ বা স্কুল পড়ুয়া।

ওঁদের কাজ সেই রোগী সম্পর্কে স্বাস্থ্যকর্মীদের জানানো বা সরাসরি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া। যক্ষ্মা নির্মূল করতে হুগলির গ্রামে গ্রামে এ ভাবেই ‘নেটওয়ার্ক’ তৈরিতে উদ্যোগী হয়েছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। ইতিমধ্যে আরামবাগ, তারকেশ্বর, ধনেখালি, বলাগড়, পুরশুড়া, গোঘাট, খানাকুলের মতো কিছু এলাকায় শ’দেড়েক ক্লাব এবং গ্রামবাসীকে ওই উদ্যোগে সামিল করা হয়েছে।

কিছুদিন আগেই আরামবাগের একটি ক্লাবের সদস্য সুভাষ কুণ্ডু, সত্য কুণ্ডুরা এলাকার ৫-৬টি গ্রামের ১২ জন রোগীকে আরামবাগ হাসপাতালে নিয়ে যান। তাঁদের মধ্যে মোবারকপুর গ্রামের আলপনা দাসের যক্ষ্মা ধরা পড়ে। তাঁর চিকিৎসাও শুরু হয়। আলপনার স্বামী মহাদেব দাস বলেন, ‘‘ক্লাবের ছেলেরা ভাল কাজ করছে। গ্রামবাসীরা যক্ষ্মা নিয়ে সচেতনও হচ্ছেন।”

জেলা যক্ষ্মা আধিকারিক প্রকাশচন্দ্র বাগ বলেন, “দ্রুত যক্ষ্মা চিহ্নিত করা এবং ওষুধ প্রয়োগের জন্যই এই উদ্যোগ। জেলা জুড়ে নেটওয়ার্ক গড়া হচ্ছে। চিকিৎসা পরিকাঠামোরও উন্নতি করা হচ্ছে।’’

জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, গত বছর জেলায় সরকারি হিসেবে প্রায় ৪,৮০০ জন নতুন যক্ষ্মা রোগীর সন্ধান মিলেছিল। এ বছর অক্টোবর পর্যন্ত সংখ্যাটা ৩২০০-র কিছু বেশি। এর বাইরে থাকা যক্ষ্মা রোগীদের সম্পর্কে তথ্য পেতে জেলার সব নার্সিংহোম এবং বেসরকারি প্যাথলজি কেন্দ্রগুলিকে এ সংক্রান্ত রিপোর্ট পাঠাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া, যে সব ওষুধের দোকান যক্ষ্মার ওষুধ বিক্রি করবে, তাদেরও নথি রাখতে হবে।

যক্ষ্মা চিকিৎসার পরিকাঠামোর উন্নতির জন্য চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতাল, আরামবাগ মহকুমা হাসপাতাল, শ্রীরামপুর ওয়ালশ এবং বলাগড় প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কফ পরীক্ষার বিশেষ যন্ত্র বসেছে। কিন্তু আরামবাগ হাসপাতালের তাঁদের জন্য তৈরি বক্ষ বহির্বিভাগটি ছ’বছর ধরে বন্ধ থাকায় ক্ষুব্ধ যক্ষ্মা রোগীরা। অন্য রোগে আক্রান্তদের সঙ্গেই সাধারণ বহির্বিভাগে তাঁদের চিকিৎসা করাতে হচ্ছে। এতে তদারকি সুষ্ঠু ভাবে হচ্ছে না বলে অভিযোগ। ওই হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে আসা যক্ষ্মা রোগীদের মধ্যে গোঘাটের বদনগঞ্জের বিমল মণ্ডলের অভিযোগ, ‘‘সাধারণ বহির্বিভাগে বিরাট লাইনে দাঁড়াতে যেমন কষ্ট হচ্ছে, তেমনই রোগ ধরা পড়ছে দেরিতে।’’ শুকদেব মণ্ডল নামে তিরোলের এক যক্ষ্মা রোগীর কথায়, ‘‘হাসপাতালে ডাক্তার দেখাতে আসা থেকে ওষুধ পেতে সময় লেগে যাচ্ছে প্রায় দু’মাস।”

হাসপাতালের সুপার শিশির নস্কর অবশ্য দাবি করেছেন, “যক্ষ্মার জন্য বিশেষ বক্ষ বিভাগের প্রয়োজন হয় না। সাধারণ বহির্বিভাগ থেকেই পরিষেবা চলে। সপ্তাহে একদিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মেডিসিন বহির্বিভাগে বসছেন।’’ তবে ওই হাসপাতালের বক্ষ বহির্বিভাগটি ফের চালুর জন্য পদক্ষেপের আশ্বাস দিয়েছেন জেলার যক্ষ্মা আধিকারিক প্রকাশবাবু।

অন্য বিষয়গুলি:

Tuberculosis Network Health Department
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE