বলাগড়ে এই চরের দখল নিয়েই সংঘর্য। — নিজস্ব চিত্র।
নদীর এক পাড় ভাঙে, আর এক পাড় গড়ে। জেগে ওঠে চর। শুরু হয় চর দখলের লড়াই।
বরাবর এমনটাই হয়ে এসেছে। এ বারও ঠিক সেটাই ঘটল। রক্তপাতের সাক্ষী থাকল গঙ্গার এ-পারে নদিয়ার সাহেবডাঙা আর ও-পারের বলাগড়।
গঙ্গার যে চর নিয়ে হুগলির বলাগড় এবং রানাঘাটের সাহেবডাঙা মধ্যে গণ্ডগোল, সেই এলাকা এখন থেকে হুগলির। দিন কয়েক আগে গণ্ডগোলের প্রেক্ষিতে এমনই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে দুই জেলা প্রশাসন। বুধবার নদিয়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) অভিজিৎ ভট্টাচার্য জানান, তিনি নিজে ওই চরে গিয়েছেন। সমস্ত মাপজোকের পরে এটা পরিষ্কার যে, ওই চর হুগলি জেলার মধ্যেই পড়ছে। তবে, সে জমি কোনও ব্যক্তির নয়, খাস জমি। কারা ওই জমি পাবে বা কী ভাবে বণ্টন হবে, সেই সিদ্ধান্ত নেবে হুগলি জেলা প্রশাসন।
বলাগড়ের চাষিদের একাংশের অভিযোগ, ওই পারের চাষিরা কার্যত জোর করে জমির দখল নেন। তাঁদের কাছে জমির বৈধ কাগজপত্র রয়েছে। কিন্তু ওই পারের লোকেরা জোর করছেন। নদিয়ার দিকের লোকের পাল্টা দাবি, ওই জমি তাঁদেরই। বলাগড়ের চাষিরাই তাঁদের বাধা দিচ্ছেন। তাঁদের ফসল নষ্ট করে দিচ্ছেন।
ঘটনার সূত্রপাত বছর চারেক আগে। সাহেবডাঙা এলাকায় কয়েকশো বিঘা জমি ভাগীরথীতে তলিয়ে যায়। বছর ঘুরতে না ঘুরতে ও-পারে বলাগড়ের দিকে চর জেগে ওঠে। এ দিকের বাসিন্দাদের যুক্তি, যেহেতু তাঁদের এলাকা ভেঙে ও-পারে চর জেগেছে, তাই ওই চরে তাঁরাই চাষ করবেন। বছর দু’য়েক আগে এই নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ হয়। তখন দু’পারের লোকজনকে নিয়ে বৈঠক হয়। হুগলি জেলা পরিষদের সদস্য রুনা খাতুন, বলাগড় ব্লকের তৃণমূল নেতা তপন দাস, নদিয়া জেলা পরিষদের সদস্য রিনা সমাজদার, ন’পাড়া পঞ্চায়েতের প্রধান প্রমুখ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। সেখানে একটি যৌথ কমিটি গড়া হয়। ঠিক হয়, যত দিন না প্রশাসনিক ভাবে জমি চিহ্নিত করা হচ্ছে, স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে হবে। কেউ চাষে বাধা দিলে মারামারি না করে কমিটির সংশ্লিষ্ট পারের আহ্বয়াককে জানাতে হবে। তাঁরাই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। বছর খানেক আগে ওই চরের পরিস্থিতি নিয়ে আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়। সেই সময় হুগলির সাংসদ রত্না দে নাগ সমস্যার সমাধানে হুগলি জেলা প্রশাসনের আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলেন। দুই জেলা প্রশাসনের মধ্যে বিতর্কিত চরের জমি চিহ্নিতকরণ নিয়ে আলোচনাও হয়। কিন্তু আখেরে যে কাজের কাজ কিছু হয়নি তা বোঝা গেল গত ৪ ফেব্রুয়ারির ঘটনায়।
ওই দিন নদিয়ার সাহেবডাঙার কয়েকজন চরে চাষের কাজে গিয়েছিলেন। কিন্তু ও-পারের বাসিন্দারা তাঁদের তাড়া করে। তাঁরা রুখে দাঁড়ালে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। সাহেবডাঙার জনা কুড়ি বাসিন্দা জখম হন। নিখোঁজ হন সাহেবডাঙার দুই বাসিন্দা লক্ষ্মীনারায়ণ বিশ্বাস ও হেমন্ত মণ্ডল। গত ৭ ফেব্রুয়ারি লক্ষ্মীনারায়ণ এবং ১৬ ফেব্রুয়ারি হেমন্তের মৃতদেহ উদ্ধার হয়।
প্রশাসনের আশঙ্কা, বৈঠক করে যতই আলোচনা হোক না কেন, তুষের তলায় ধিকিধিকি আগুন জ্বলছেই। যে ভাবে বেঘোরে দু’টো প্রাণ চলে গেল, তাতে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার নিতে পারে মনে করছে দুই জেলা প্রশাসন।
হেমন্ত মণ্ডলের দুই নাবালক ছেলে। সংসারের একমাত্র রোজগেরে সদস্য বলতে ছিলেন তিনিই। এই অবস্থায় নদিয়া জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, ওই চরের উপরে তাদের কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। এই পরিস্থিতিতে বলাগড়ের বাসিন্দারা যদি ওই জমিতে চাষ করতে নামে, তা হলে ফের সংঘর্ষ বাধার আশঙ্কা করছে প্রশাসন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy