Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Howrah Hooghly News

মায়ের স্বপ্নপূরণই লক্ষ্য ‘ব্রাত্য’ মেয়ের

আদর-ভালবাসা দূর অস্ত্‌, জন্মের পর থেকে কোনও দিনও বাবার চেহারাটাও দেখেননি বিজ্ঞান বিভাগের ওই ছাত্রী। মা, ইন্দ্রাণীদেবীই তাঁর সব কিছু। মেয়েকে বড় করতে একাই দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন এই মা।

মায়ের সঙ্গে চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। শুক্রবার। —নিজস্ব চিত্র

মায়ের সঙ্গে চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। শুক্রবার। —নিজস্ব চিত্র

শান্তনু ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০১৮ ০২:০১
Share: Save:

যদি কোনও দিন বাবার সঙ্গে দেখা হয়, তিনি কয়েকটা প্রশ্ন অবশ্যই করবেন। মুখোমুখি হয়ে জানতে চাইবেন, কী অপরাধ ছিল তাঁর মায়ের? কেন দেড় দিনের মেয়েকে কোলে নিয়ে তাঁকে স্বামীর ঘর ছাড়তে হয়েছিল? পড়াশোনা করে বড় হওয়ার পাশাপাশি জীবনে এটাও তাঁর একটা বড় লক্ষ্য বলেই মনে করেন বেলুড় উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য।

আদর-ভালবাসা দূর অস্ত্‌, জন্মের পর থেকে কোনও দিনও বাবার চেহারাটাও দেখেননি বিজ্ঞান বিভাগের ওই ছাত্রী। মা, ইন্দ্রাণীদেবীই তাঁর সব কিছু। মেয়েকে বড় করতে একাই দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন এই মা। প্রথমে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ছাত্রদের পড়াতেন, পরে একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কাজ নেন ইন্দ্রাণীদেবী। শুক্রবার দুপুরে সেই মেয়েরও উচ্চ মাধ্যমিকের ফল বেড়িয়েছে। ৮৫.২ শতাংশ (৪২৬) নম্বর পেয়ে পাশ করেছেন চন্দ্রিমা। প্রিয় বিষয় জীব বিদ্যায় পেয়েছেন ৯৩। দু’বছর আগে মাধ্যমিকেও তিনি ৯২ শতাংশ নম্বর পেয়েছিলেন। মেয়ের সঙ্গে স্কুলে এসে সেই ফল দেখে ইন্দ্রাণীদেবী বললেন, ‘‘আবারও বাবার বঞ্চনার যোগ্য জবাব দিয়েছে ও।’’

অভিযোগ, কন্যাসন্তানের জন্ম দেওয়ার ‘অপরাধে’ শ্বশুরবাড়িতে খুবই গঞ্জনা সহ্য করতে হয়েছিল ইন্দ্রাণীদেবীকে। তিনি বলেন, ‘‘মেয়ে পছন্দ ছিল না ওদের। তাই ওই বাড়ি ছেড়ে চলে আসতে হয়েছিল। কোনও দিন মেয়েটার খোঁজও নিল না।’’ বালির ঘোষপাড়ায় মামার বাড়িতেই বড় হয়েছেন চন্দ্রিমা। ছোট থেকেই মা তাঁকে বুঝিয়েছেন, বাবা দেখেন না বলে ভেঙে পড়লে চলবে না। বরং পরীক্ষায় ভাল ফল করে যোগ্য উত্তর দিতে হবে সকলকে। মাধ্যমিকের আগে পর্যন্ত বন্ধুদের থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখতেন ডাক্তার হতে চাওয়া মেয়েটি। বলছিলেন, এখনও তাঁর পারিবারিক দিকটি জানাজানি হতেই মাঝেমধ্যে আজকাল প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় তাঁকে। তবে এখন আর এ সবে আমল দেন না গোয়েন্দা গল্প পড়তে ভালবাসা এই ছাত্রী। বলেন, ‘‘মা-ই আমার সব। মায়ের স্বপ্নপূরণ করতেই হবে।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE