ভাবনা: জয়েও চিন্তা কমল না তৃণমূল কর্মীদের। বৃহস্পতিবার দুপুরে উলুবেড়িয়ায়। ছবি: সুব্রত জানা
গেরুয়া-হাওয়া থমকে গেল উলুবেড়িয়ায়।
হাওড়ার ওই লোকসভা কেন্দ্রের বিদায়ী সাংসদ তথা এ বারেরও তৃণমূল প্রার্থী তৃণমূলের সাজদা আহমেদের উপরেই আস্থা রাখলেন ভোটাররা। বিজেপির সঙ্গে লড়াইয়ে রাজ্যের বহু জেতা আসনেও এ বার তৃণমূলের ভোট কমেছে। কিন্তু উলুবেড়িয়ায় উল্টো ছবি!
পাঁচ বছর আগে উলুবেড়িয়া কেন্দ্র থেকে সাজদার স্বামী সুলতান আহমেদ তৃণমূলের টিকিটে ২ লক্ষ ১ হাজার ভোটে জিতেছিলেন। এ বার সেই ব্যবধানকেও ছাপিয়ে গেলেন সাজদা। তিনি জিতেছেন ২ লক্ষ ১৫ হাজার ভোটে। সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রের প্রতিটিতে জয়ী হয়েছেন সাজদা। কার্যত হালে পানি পাননি বিজেপির জয় বন্দ্যেপাধ্যায়। অবশ্য সুলতানের মৃত্যুতে গত বছর ওই কেন্দ্রে উপ-নির্বাচনে সাজদার জয়ের ব্যবধান ছিল প্রায় ৫ লক্ষ। যদিও সেটা ‘সহানুভূতির ভোট’ হওয়ায় ব্যবধান বেশি হয়েছিল বলে দাবি তৃণমূল নেতাদের।
কিন্তু কোন অঙ্কে এল সাফল্য?
রাজনীতির সঙ্গে জড়িতরা মনে করছেন, প্রথমত, সাজদার স্বচ্ছ ভাবমূর্তি। বিরোধীরাও যাঁর বিরুদ্ধে সে ভাবে কোনও কথা বলতে পারেনি। দ্বিতীয়ত, আগের দফায় স্বল্প সময়ের মধ্যেও সাজদার অনেক উন্নয়নমূলক কাজ এবং তৃতীয়ত, দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এখানে সে ভাবে মাথাচাড়া না-দেওয়া।
তৃণমূল নেতৃত্বও মানছেন, প্রথম দিন থেকে লড়াইয়ের মূল দায়িত্ব দলীয় বিধায়কেরাই ঘাড়ে তুলে নিয়েছিলেন। তাঁরা প্রাণপাত পরিশ্রম করেছেন। কর্মী-বৈঠক থেকে শুরু করে রোড শো— সবেতেই অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছেন। তার পরেও তাঁরা কাজ ভাগ করে দিয়েছেন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, পঞ্চায়েতের প্রধান, উলুবেড়িয়া পুরসভার কাউন্সিলর, জেলা পরিষদের সদস্য ও পদাধিকারীদের কাছে। সব মিলিয়ে সাংগঠনিক ভাবে শৃঙ্খলাবদ্ধ থেকে লড়েছেন তাঁরা।
এক বিধায়কের কথায়, ‘‘২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনের আগে অ্যাসিড-টেস্ট করে নিলাম। পঞ্চায়েত নির্বাচনে যেহেতু ছাপ্পা ভোটের অভিযোগ উঠেছিল, তাই নিজেদের অবস্থানটি ঠিক কোথায় সেটাই যাচাই করে নেওয়ার জন্য আমরা লোকসভা নির্বাচনে ঝাঁপিয়েছিলাম।’’ আর এক বিধায়ক বলেন, ‘‘আমরা পঞ্চায়েতের পদাধিকারীদের সাফ জানিয়ে দিয়েছিলাম, লোকসভা ভোটের ফলের উপরে নির্ভর করে রাজ্য সরকার পড়বে না। আমরা আরও আড়াই বছর থাকব। তাই কারও গাফিলতিতে যদি ভোট কমে, তা হলে তাঁকে ছেড়ে কথা বলা হবে না। এই দাওয়াইয়ে কাজ হয়েছে।’’
দলের সাংগঠনিক শৃঙ্খলার কথা স্বীকার করে তৃণমূলের হাওড়া (গ্রামীণ) জেলা সভাপতি পুলক রায় বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর উন্নয়নমূলক কাজগুলির কথা আমরা সমস্ত স্তরের মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছিলাম আমাদের সাংগঠনিক ক্ষমতারই জোরে। তাই এত বড় ব্যবধানে জয়।’’ আর সাজদা বলছেন, ‘‘উলুবেড়িয়ার মানুষকে আমি ধন্যবাদ জানাচ্ছি। মুখ্যমন্ত্রীর উন্নয়নমূলক কাজগুলির সুফল আমাদের দলের নেতা কর্মীরা তুলে ধরতে পেরেছেন। তাই এই কঠিন সময়েও আমাদের এত বড় ব্যবধানে জয় এসেছে।’’
লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে সাজদার জয়ের ব্যবধান সবচেয়ে বেশি বাগনানে (৪৮ হাজার)। সবচেয়ে কম উলুবেড়িয়া উত্তর কেন্দ্রে (১৪ হাজার)। এর পিছনে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বকে কারণ হিসেবে মনে করছেন কেউ কেউ। তবে ওই কেন্দ্রের বিধায়ক তথা মন্ত্রী নির্মল মাজির দাবি, ‘‘একটা বিধানসভার পক্ষে এই ব্যবধান মোটেই কম নয়। তবে আগামী দিনে আরও ভাল করার চেষ্টা করব।’’
রাজ্যের অন্য কেন্দ্রগুলির মতো এখানেও সিপিএমের ভোট কমেছে। তারা চলে গিয়েছে তৃতীয় স্থানে। আনুপাতিক ভাবে ভোটবৃদ্ধিতে দ্বিতীয় স্থানে এসেছে বিজেপি। অনেকে মনে করছেন, সিপিএমের নিচুতলার কর্মীরা বিজেপিকে ভোট দিয়েছেন। মাত্র ২ শতাংশ ভোট পেয়েছে কংগ্রেস।
দেশ জুড়ে সাফল্য এবং এ রাজ্যে দু’অঙ্কের আসনপ্রাপ্তির পরেও উলুবেড়িয়ায় কেন তৃণমূলের সঙ্গে টক্করে পিছিয়ে পড়ল বিজেপি?
বিজেপির (গ্রামীণ) জেলা সভাপতি অনুপম মল্লিকের দাবি, ‘‘আমাদের কাছে এই ফল খারাপ বলে মনে হচ্ছে না। ২০১৪ সালে তৃণমূলের মূল লড়াই হয়েছিল সিপিএমের সঙ্গে। ২০১৮ সালের উপ-নির্বাচন থেকে লড়াইয়ের অভিমুখ আমরা ঘুরিয়ে দিতে পেরেছি।’’ তৃণমূলের বিরুদ্ধে ‘বৈজ্ঞানিক রিগিং’ এবং মেরুকরণের অভিযোগ তুলে অনুপমবাবু বলেন, ‘‘বহু বুথে আমরা একটি করে ভোট পেয়েছি। তৃণমূলের মেরুকরণের রাজনীতির জন্য একটি সম্প্রদায়ের ভোট আমরা পাইনি।’’
অভিযোগ উড়িয়ে তৃণমূল নেতা পুলকবাবুর দাবি, ‘‘ব্যাপারটি ঠিক উল্টো। বিজেপির মেরুকরণের অপচেষ্টাকে আমরা অনেক কষ্টে
রুখে দিয়েছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy