Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

গেট খুললেও কাজ হল না গোন্দলপাড়ায়

নোটিস দিয়ে মিল খোলা হল। শ্রমিকেরা এলেন। কিন্তু কোনও কাজ হল না। কর্তৃপক্ষেরও কারও টিকিও দেখা গেল না। দিনভর অপেক্ষার পরে শ্রমিকেরা ঘরে ফিরলেন একরাশ হতাশা নিয়ে।

বিফলে: কারখানায় ঢুকছেন শ্রমিকরা। নিজস্ব চিত্র

বিফলে: কারখানায় ঢুকছেন শ্রমিকরা। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
চন্দননগর শেষ আপডেট: ১০ মে ২০১৯ ০২:০৮
Share: Save:

প্রায় তিন সপ্তাহের ব্যবধান। গোন্দলপাড়া জুটমিলে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি!

নোটিস দিয়ে মিল খোলা হল। শ্রমিকেরা এলেন। কিন্তু কোনও কাজ হল না। কর্তৃপক্ষেরও কারও টিকিও দেখা গেল না। দিনভর অপেক্ষার পরে শ্রমিকেরা ঘরে ফিরলেন একরাশ হতাশা নিয়ে।

২০১৮ সালের ২৭ মে ওই জুটমিল বন্ধ হওয়ার পরে গত ১৯ এপ্রিল নোটিস দিয়ে জানানো হয়েছিল, পরের দিন থেকে মিল খুলবে। রক্ষণাবেক্ষণের কাজ শুরু হবে। কিন্তু ২০ এপ্রিল শ্রমিকেরা গেলেও কোনও কাজ হয়নি। কর্তৃপক্ষেরও কেউ আসেননি। তারপর থেকে মিলটি খোলা থাকলেও সে ভাবে কাজ হচ্ছিল না বলে অভিযোগ শ্রমিকদের। বুধবার সকালে ফের ওই মিলে ‘সাসপেনশন অব ওয়ার্ক’-এর নোটিস পড়ে। কিন্তু এ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মালিকপক্ষকে কড়া বার্তা দেওয়ায় সন্ধ্যাতেই বৃহস্পতিবার সকালে মিল খোলা হবে বলে নোটিস দেওয়া হয়। কিন্তু শ্রমিকদের যাওয়াই সার। কোনও কাজ হয়নি।

মিল খোলার নামে ‘নাটক’ হচ্ছে বলে আগেই অভিযোগ তুলেছিলেন শ্রমিকেরা। এ দিন সেই অভিযোগ আরও জোরালো হল। শ্রমিকদের অভিযোগ, ১৫ দিন অন্তর তাঁদের মজুরি মেলে। সেইমতো ৭ মে মজুরি পাওয়ার কথা ছিল। অনেকে ভেবেছিলেন, এ দিন মিল খুললে তা মিলবে। কিন্তু মেলেনি।

শুক্রবার সকালের শিফ‌্টে মিলে কাজে গিয়েছিলেন পান্নালাল দাস। তাঁর ক্ষোভ, ‘‘আমরা মিলে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করলাম। কিন্তু কাজ কিছুই হল না। অপেক্ষাই সার।’’ রামদেব সাউ নামে আর এক শ্রমিক বলেন, ‘‘মিলে রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করতে গেলে তো কর্তৃপক্ষের তরফে কাউকে থাকতে হবে। কিন্তু মিলের ম্যানেজারদেই কেউই ছিলেন না। কাজ হবে কী করে?’’ ‘রক্ষণাবেক্ষণ’ বিভাগের কর্মী রাজেশ জয়সোয়ারা বলেন, ‘‘জুটমিল চালাতে গেলে কাঁচা পাট লাগে। কিন্তু মিল কর্তৃপক্ষ কাঁচা পাটের জোগানই দেননি। কী করে মিল চলবে?’’

মিল কর্তৃপক্ষের তরফে পার্সোনেল ম্যানেজার অবশ্য শ্রমিকদের আশ্বাস করেছেন। তাঁর দাবি, ‘‘ঘোষণামতো এ দিন মিল খুলেছে। রক্ষণাবেক্ষণ করে পুরোদস্তুর উৎপাদন চালু করতে আরও কিছুটা সময় লাগবে। শ্রমিকদের বকেয়া মজুরিও দিয়ে দেওয়া হবে।’’ গেট খুললেও এ দিন যে ওই মিলে কোনও কাজ হয়নি তা মেনে নিয়েছেন চন্দননগরের বিধায়ক তথা মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন। তিনি বলেন, ‘‘এটা ঠিকই গোন্দলপাড়া জুটমিলে বৃহস্পতিবার শ্রমিকেরা ঢুকলেও পরিকল্পনামাফিক কাজ হয়তো হয়নি। এই পরিস্থিতি বদলাতে শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটকের সঙ্গে কথা বলব। যাতে দ্রুত মিলে কাজের পরিবেশ ফিরে আসে তা আমি নিশ্চিত দেখব।’’

বুধবার সকালে ওই মিলে ‘সাসপেনশন অব ওয়ার্ক’-এ নোটিসের জেরে তেতে উঠেছিল শ্রমিক মহল্লা। ভাঙচুর চালানো হয়েছিল ফেরিঘাটে, মিল লাগোয়া তৃণমূলের দু’টি কার্যালয়ে এবং দুই তৃণমূল নেতার বাড়িতেও। সেই হামলায় জড়িত অভিযোগে রাতে পুলিশ আট জনকে গ্রেফতার করে। ধৃতদের বৃস্পতিবার চন্দননগর আদালতে হাজির করানো হয়। বিচারক ধৃতদের ১৪ দিন জেল হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

অন্য বিষয়গুলি:

Jute Mill Suspension of Work
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE