Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

বিপর্যয় মোকাবিলায় হুগলি নিধিরাম সর্দার

রাজ্যে ক্ষমতায় এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বেহাল বিপর্যয় মোকাবিলা ব্যবস্থা ঢেলে সাজার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু পরিস্থিতি বদলায়নি।

অব্যবহৃত: পড়ে নষ্ট হচ্ছে উদ্ধার গাড়ি। নিজস্ব চিত্র।

অব্যবহৃত: পড়ে নষ্ট হচ্ছে উদ্ধার গাড়ি। নিজস্ব চিত্র।

প্রকাশ পাল ও তাপস ঘোষ
চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০১৮ ০০:০৪
Share: Save:

বাঁশের সেতুর একাংশ জেগে রয়েছে। চারপাশে বাঁচার জন্য হাত-পা ছুড়ছেন কয়েকশো মানুষ। তলিয়ে গিয়েছেন অনেকে। কলকাতা থেকে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের বাহিনী এসে একে একে ২২ জনের দেহ উদ্ধার করল জল থেকে। তার আগে পর্যন্ত দাঁড়িয়ে দেখা ছাড়া কার্যত কিছু করার ছিল না জেলা প্রশাসনের।

ছবিটা ন’মাস আগে ভদ্রেশ্বরের তেলেনিপাড়া ফেরিঘাটে অস্থায়ী জেটি-দুর্ঘটনার। বছর খানেক আগে শ্রীরামপুরে গঙ্গায় এক যুবক তলিয়ে যাওয়ার ঘটনায় উদ্ধারকাজে দেরির অভিযোগে অবরোধ, পুলিশের লাঠিচার্জ— কিছুই বাদ থাকেনি। বিপর্যয় মোকাবিলার ক্ষেত্রে হুগলি জেলা প্রশাসনের অসহায়তার এগুলো কয়েকটা টুকরো ছবি মাত্র। খাতায়-কলমে জেলায় বিপর্যয় মোকাবিলা দল রয়েছে জেলায়। কিন্তু তাদের হাল ঢাল-তলোয়ার বিহীন নিধিরাম সর্দারের মতোই।

রাজ্যে ক্ষমতায় এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বেহাল বিপর্যয় মোকাবিলা ব্যবস্থা ঢেলে সাজার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু পরিস্থিতি বদলায়নি। উত্তরপাড়া থেকে বাঁশবেড়িয়া পর্যন্ত হুগলির ১০টি পুরসভা গঙ্গার পাড়ে। তার পরে রয়েছে জিরাট, বলাগড়, গুপ্তিপাড়ার মতো গ্রামীণ এলাকা। আরামবাগ মহকুমাও নদীবেষ্টিত। নদীতে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। এমন জেলায় বিপর্যয় মোকাবিলার অবস্থা খুব একটা সুখকর নয়। কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে জেলা পুলিশ-প্রশাসনের তরফে কলকাতা পুলিশের বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরে খবর দেওয়া হয়। বহু ক্ষেত্রেই তাদের পৌঁছতে অনেক সময় গড়িয়ে যায়। আর তাতেই ক্ষোভ বাড়ে। ঠিক যেমনটা হয়েছে বহরমপুরের দৌলতাবাদে বাস দুর্ঘটনার পর।

চন্দননগর কমিশনারেটের এক কর্তা জানান, সাঁতারে পারদর্শী কয়েকজন যুবকের ফোন নম্বর থানায় থাকে। প্রাথমিক ভাবে তাঁদের জলে নামানো হয়। কোথাও স্থানীয় জেলে বা মাঝিদেরও নামানো হয়। কিন্তু প্রশিক্ষণহীন লোকজনকে এই কাজে নামানো কতটা যুক্তিপূর্ণ, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এক পুলিশকর্তার বক্তব্য, ‘‘আসলে ওঁদের তাড়াতাড়ি জলে নামালে দেহ উদ্ধারের সম্ভাবনা কিছুটা হলেও থাকে। ক্ষোভও প্রশমিত হয়।’’

চুঁচুড়ায় জেলার সিভিল ডিফেন্সের সদর দফতরে স্থায়ী কর্মী সাকুল্যে ৩ জন। বিপর্যয় মোকাবিলায় নথিভুক্ত স্বেচ্ছাসেবকদের পাঠানো হয়। সায়ন ঘোষ, মন্টু ঘোষ জানান, কাজ করল‌ে দৈনিক ৪২০ টাকা সম্মান দক্ষিণা মেলে। সায়নের কথায়, ‘‘কোথাও যেতে হলে ফোন করা হয়। কিন্তু তখন হয়তো পেট চালানোর জন্য কাজ করছি। ফলে যাওয়া সম্ভব হয় না।’’ কাজের নিশ্চয়তা না থাকায় অনেকেই ওই কাজ করতে চান না। আধুনিক প্রশিক্ষণও তাঁদের নেই। দফতরে আধুনিক স্পিডবোট নেই। দু’টি উদ্ধার-গাড়ি থাকলেও তা পড়ে।

জেলাশাসক সঞ্জয় বনশ‌ল বলেন, ‘‘যা পরিকাঠামো আছে তা দিয়েই পরিস্থিতি মোকাবিলা করা হয়। কলকাতা থেকে দক্ষ বাহিনী আনা হয়। সিভিল ডিফেন্সে নিয়োগের ব্যাপারে সরকারি নির্দেশিকা এলে সেই মতো পদক্ষেপ করা হবে।’’

বছর আগে বৈদ্যবাটি পুরসভার তরফে রাজ্য সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়, পুর-এলাকায় সাঁতারে পটু কয়েকজন যুবককে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম এবং প্রশিক্ষণ দিলে তাঁরা ডুবুরি হিসেবে কাজ করতে পারবেন। বিশেষত হুগলিতে নৌকোডুবি-সহ যে কোনও উদ্ধারকাজে দ্রুত তাঁদের পাঠানো যাবে। বিষয়টি নিয়ে তেমন কোনও নড়াচড়া অবশ্য হয়নি।

পরিস্থিতি বদলাবে কি না, সে ব্যাপারে সদুত্তর মেলেনি জেলা প্রশাসনের শীর্ষ আধিকারিকদের কাছে।

অন্য বিষয়গুলি:

disaster management Workers Divers
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE