এই বাড়িতেই চলে সিবিআই তল্লাশি। ছবি কেদারনাথ ঘোষ।
বছর কয়েক আগে হঠাৎ ভোলবদল!
অ্যাসবেসটসের বাড়ি ভেঙে গজিয়ে উঠল ঝাঁ-চকচকে তিন তলা। শ্রীরামপুর-উত্তরপাড়া ব্লকের কানাইপুরের শাস্ত্রীনগর নিউ কলোনিতে এই বাড়ির দুই ভাই অমিত ও নীরজ সিংহের সঙ্গে কয়লা পাচারের যোগ রয়েছে বলে সিবিআইয়ের দাবি। বৃহস্পতিবার, বছরের শেষ দিনে ওই বাড়িতে অভিযান চালাল তারা। বিষয়টি নিয়ে মুখে কুলুপ পরিবারের সদস্যদের।
এ দিন সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ সিবিআইয়ের ছয় সদস্যের দল ওই বাড়িতে তল্লাশি চালায়। সূত্রের খবর, নীরজ বা অমিতকে সেখানে পাওয়া যায়নি। পরিবারের অন্যদের সঙ্গে কথা বলেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার আধিকারিকরা। পরিবারে রয়েছেন অমিত-নীরজের বাবা-মা, দুই ভাইয়ের স্ত্রী এবং অমিতের দুই নাবালক ছেলে। কিছু নথিপত্র বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে বলে সিবিআই অফিসাররা জানান। বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ তাঁরা বেরিয়ে যান। মাসখানেক আগে ইডি এবং আয়কর দফতরও ওই বাড়িতে হানা দিয়েছিল।
কয়লা পাচার কাণ্ডে অনুপ মাঝি ওরফে লালার খোঁজ করছে সিবিআই। সিবিআই সূত্রের দাবি, লালার সঙ্গে নীরজ-অমিতের যোগাযোগ রয়েছে। দুই ভাইয়ের কাজ ছিল প্রভাবশালী লোকজনের হাতে টাকা তুলে দেওয়া। বাঁকুড়া, আসানসোলে মূলত নীরজই এই কাজ করতেন। নীরজদের বাড়ির কাছেই বন্ধ হিন্দমোটর কারখানা। কারখানা লাগোয়া যে রাস্তায় গাড়ি পরীক্ষা করা হত, তার একটি পরিত্যক্ত জায়গা দখল করে নীরজরা টাকা লেনদেনের কাজ করতেন বলে সিবিআইয়ের তদন্তকারীদের দাবি।
পাড়া-পড়শিদের জানান, দুই ভাইয়ের কার্যকলাপ সম্পর্কে তাঁদের কোনও ধারণাই ছিল না। তবে, হঠাৎ বাড়ির চেহারা বদল নিয়ে আলোচনা চলত। তাঁরা জানতেন, অমিত-নীরজ কলকাতার বড়বাজারে কাপড়ের ব্যবসা করেন। এক সময় কাছেই আদর্শনগরে ভাড়া থাকত ওই পরিবার। বছর কুড়ি আগে শাস্ত্রীনগরে আসে। ২০১৪ সাল থেকে বাড়ির চেহারা বদলাতে থাকে। ঘরের সৌন্দর্যায়ন, দামি আসবাবপত্র দেখে তাক লাগে পড়শিদের।
তবে, নীরজদের সাধারণ জীবনযাত্রা বিশেষ বদলায়নি। প্রতিবেশীরা জানান, ওই পরিবারের কেউ এলাকায় মেলামেশা করেন না। একমাত্র নীরজের বাবা মনোজ লোকজনের সঙ্গে অল্পস্বল্প কথা বলেন। স্থানীয় এক যুবকের কথায়, ‘‘ওঁরা কারও সঙ্গে কথা বলেন না। মোটরবাইক নিয়ে দুই ভাই যাতায়াত করেন। ওঁদের নামে যা শুনছি, কী আর বলব!’’ প্রতিবেশীরা জানান, দীপাবলিতে কার্যত সারারাত ধরে ওই বাড়ির লোকেরা প্রচুর টাকার বাজি পোড়ান। এক যুবকের কথায়, ‘‘ওঁদের হঠাৎ বড়লোক হওয়া দেখে প্রশ্ন জাগত, কী করে এমনটা হল। এখন রহস্যভেদ হচ্ছে।’’ পড়শি এক মহিলার দাবি, ‘‘এমন কাণ্ড-কারখানা কোনও দিন টের পাইনি।’’ একই কথা বলছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও। কানাইপুর পঞ্চায়েতের স্থানীয় সদস্য অনিতা দেবী ঠাকুরের বক্তব্য, ‘‘ওঁরা এই কাজে যুক্ত, এমন আঁচ পাইনি।’’ পঞ্চায়েত প্রধান আচ্ছালাল যাদব বলেন, ‘‘ওঁরা বড়বাজারে কাপড়ের ব্যবসা করে বলেই তো জানতাম। জীবনযাত্রাও সাধারণ। ভিতরে ভিতরে কার কোথায় যোগাযোগ, কেমন করে জানব? সংবাদমাধ্যমেই এ সব শুনছি।’’বাড়িতে সিবিআই অভিযান চলার সময় অমিত-নীরজের বাবা মনোজ দাবি করেন, এ ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা চলে যাওয়ার পরে বহু ডাকাডাকিতে এক যুবক দরজা কিছুটা ফাঁক করে শুধু বলেন, ‘‘আমরা কিছু বলব না। বাড়িতে অসুস্থ মানুষ আছেন। আমরা নার্ভাস বোধ করছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy