Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

শোকবিহ্বল গোপালপুর চায় খুনিদের কঠিন শাস্তি

একরত্তি মেয়েটার এমন পরিণতির কথা ভাবতেই পারছেন না প্রতিবেশীরা। শুক্রবার রাতে নিখোঁজ হওয়ার পর থেকেই বাবা চিন্ময়বাবু যখন মেয়ের খোঁজে হন্যে, তখন প্রতিবেশীরাও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলেন। তারপর যখন মুক্তিপণ চেয়ে ফোন এল তখন অন্য চিন্তা।

গঙ্গার চরে এখানেই মেলে অন্বেষার বস্তাবন্দি দেহ।—নিজস্ব চিত্র।

গঙ্গার চরে এখানেই মেলে অন্বেষার বস্তাবন্দি দেহ।—নিজস্ব চিত্র।

তাপস ঘোষ
বলাগড় শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:০৫
Share: Save:

একরত্তি মেয়েটার এমন পরিণতির কথা ভাবতেই পারছেন না প্রতিবেশীরা।

শুক্রবার রাতে নিখোঁজ হওয়ার পর থেকেই বাবা চিন্ময়বাবু যখন মেয়ের খোঁজে হন্যে, তখন প্রতিবেশীরাও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলেন। তারপর যখন মুক্তিপণ চেয়ে ফোন এল তখন অন্য চিন্তা। কী ভাবে টাকার জোগাড় হবে? তবে অন্বেষার পরিবার এই ভেবে নিশ্চিন্ত ছিলেন যে সে অন্তত বেঁচে রয়েছে।

কিন্তু শনিবার সকালে গঙ্গায় যখন তার সাইকেলটা পাওয়া যায়, তখন পরিবারে একটা আশঙ্কার মেঘ দেখা দেয়। মেয়েটা সত্যিই বেঁচে আছে তো? আশঙ্কা কেটে যায় যখন ফের বিকেলে বেশি মুক্তিপণ চেয়ে ফোন আসে। মেয়েকে ফিরে পেতে মরিয়া মণ্ডল পরিবারের মুক্তিপণ কমানোর আর্জি মেনে নেয় অপহরণকারীরা। মেয়ের কিছু হয়নি ভেবে নিশ্চিত ছিলেন বাবা-মা। পুলিশও তত্‌পর ছিল।

কিন্তু রবিবার ভোরবেলার দুঃসংবাদ গোটা পরিবারটাকেই শোকে নির্বাক করে দিয়েছে। শনিবার মা প্রমিতাদেবীর প্রশ্ন ছিল, “আমাদের কারও সঙ্গে তো কোনও শত্রুতা নেই। তা হলে কী হল মেয়েটার?” রবিবার সকালেও সেই একই প্রশ্ন তাঁর কান্না ভেজা গলায়। খালি পাল্টে গিয়েছে দ্বিতীয় লাইনটা। কেন এমন হল? উত্তর ছিল না সন্তানহারা মাকে সান্ত্বনা দিতে আসা প্রতিবেশীদের কাছেও। বাবা চিন্ময় মণ্ডল শুধু অপলক চোখে তাকিয়ে। দৃষ্টিতে শূন্যতা। জ্যাঠামশাই ভুবনেশ্বর মন্ডল বলেন, ‘‘ও আমাদের খুব আদরের ছিল। গ্রামের প্রত্যেকে ওকে খুব ভালবাসত। টাকার জন্য ওকে এমন নিষ্ঠুরভাবে খুন করে দিল ছেলেগুলো! ওদের যেন উপযুক্ত শাস্তি হয়। এর বেশি কিছু বলার নেই।’’

চন্দননগরে অন্বেষার মামার বাড়ি নিখোঁজের খবর পৌঁছতেই মামা রঞ্জন ছুটে জিরাটে ভাগ্নীর খোঁজে সারাদিন চষে বেরিয়েছেন। মৃত্যুর খবর পেয়ে ভেঙে পড়েন তিনি। বললেন, “শিশুদের প্রতি জন্তু জানোয়ারেরও মায়া মমতা আছে। ওকে যারা মেরেছে, তাদের একবারও হাত কাঁপল না!’’

শুধু মণ্ডল পরিবারই নয়, গোটা গোপালপুরের মানুষের একটাই জিজ্ঞাসা, ‘এমন কচি মেয়েটার কেন এমন হল’? এক সময় কষ্ট ক্ষোভের আকার নেয়। এলাকার তিন যুবকের ঘটনায় জড়িত থাকার খবরে তাদের বাড়িতে চড়াও হয়ে ভাঙচুর চালায় বাসিন্দাদের একাংশ।

শুক্রবার শেষ স্কুলে গিয়েছিল অন্বেষা। সহপাঠীকে আর দেখতে না পাওয়ার শোকে বিহ্বল তার বন্ধুরা। শোকার্ত শিক্ষক-শিক্ষিকারাও। শিক্ষিকা দেবযানী শ বলেন, ‘‘ভাবতেই কীরকম লাগছে যে মেয়েটা ওই দিন আমার ক্লাসে ক্লাস করল। আর এখন সে নেই। খুব মেধাবী এবং শান্ত স্বভাবের ছিল। ওকে যারা নৃশংসভাবে খুন করেছে তাদের যেন সমাজে কোনও ঠাঁই না হয়। যেন দৃষ্টান্তমূলক উপযুক্ত শাস্তি হয়।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE