বেশ কয়েক মাস বন্ধ থাকার পরে ফের উত্তরপাড়ায় গঙ্গা থেকে সাদা বালি তোলা শুরু হয়ে গিয়েছে।
কোতরং এলাকায় অন্তত চারটি ইটভাটার জমিতে স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র বসিয়ে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের মদতে ওই কাজ করছেন বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেরই। এর জেরে নদীর পাড়ে তাঁরা ভাঙনের আশঙ্কাও করছেন। ওই সব ভাটা-মালিকেরা জানিয়েছেন, ওই কাজে তাঁরা কোনও ভাবে জড়িত নন। ভাটার জমিতে জোর করে যন্ত্র বসিয়ে ওই কাজ করা হচ্ছে বলে তাঁদের অভিযোগ। দিন কয়েক আগে একটি ইটভাটার কর্তারা পুলিশে দায়ের করা অভিযোগে জানিয়েছেন, ওই বেআইনি কাজের প্রতিবাদ করায় তাঁদের কর্মীদের মারধর করা হয় এবং ভাঙচুর চালানো হয়।
নদী-বিশেজ্ঞরা জানিয়েছেন, খেলায়-খুশি মতো গঙ্গা থেকে বালি তোলা যায় না। তাতে ভাঙনের আশঙ্কা থাকে। ভাঙনে সাধারণ মানুষ বিপদের মুখে পড়বেন। এ ক্ষেত্রে কিছু সর্তকতা জরুরি। পরিবেশ-বন্ধু বিশ্বজিত্ মুখোপাধ্যায় বলেন, “বেআইনি ভাবে গঙ্গার বালি তোলায় একদিকে যেমন পাড় ভাঙে, তেমনই গঙ্গার জীব-বৈচিত্র্য নষ্ট হতে পারে। বিষয়টি বন্ধে মুখ্যমন্ত্রী, রাজ্যপাল সবাইকেই জানানো হয়েছে। পরিবেশ আদালতে মামলা করা হয়েছে। এই বেআইনি কাজ এখনই বন্ধ হওয়া জরুরি।”
জেলা তৃণমূল সভাপতি তপন দাশগুপ্ত বলেন, “আমাদের কেউ ওই বেআইনি কাজে যুক্ত বলে জানি না। খোঁজ নিচ্ছি। কেউ জড়িত জানা গেলে তাঁর বিরুদ্ধে নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
শ্রীরামপুরের মহকুমাশাসক মৃণালকান্তি হালদার বলেন, “গঙ্গায় বালি তোলার বিষয়টি সরাসরি দেখে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর। এ ক্ষেত্রে কী হয়েছে, তা ওরাই বলতে পারবে। বিষয়টি খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।” মহকুমা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর জানিয়েছে, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, ভাটা-কর্মীদের মারধর এবং ভাঙচুরের অভিযোগ মিলেছে। তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বালি তোলার কারবার যাঁরা চালাচ্ছেন, তাঁদের সঙ্গে অবশ্য যোগাযোগ করা যায়নি।
ওই ভাটাগুলির কাছেই শিবতলা শ্মশানঘাট। ভাঙনের জেরে ওই শ্মশানঘাট বর্তমানে গঙ্গায় তলিয়ে যেতে বসেছে। ঘাটের অনেকাংশ ইতিমধ্যেই তলিয়ে গিয়েছে। পরিস্থিতি যাতে আরও খারাপ না হয় সেই বিষয়টি মাথায় রেখেই প্রশাসনের তরফে সেখানে গঙ্গা থেকে সাদা বালি তোলা বন্ধ করে দেওয়া হয় কয়েক মাস আগে। কিন্তু এ বার চারটি ইটভাটায় অন্তত ৮টি যন্ত্র বসিয়ে গত কয়েক মাস ধরে ওই কারবার চালনো হলেও প্রশাসনের কোনও হুঁশ নেই বলে অভিযোগ। অনেকেই এর পিছনে রাজনৈতিক মদত রয়েছে বলে মনে করছেন। তাই ভয়ে তাঁরা প্রতিবাদের রাস্তায় যাচ্ছেন না। নদীর মাঝ বরাবর পাইপ নিয়ে গিয়ে অবাধে চলছে বালি তোলা।
গত বছর চন্দননগরে গঙ্গার পাড় ভাঙার কারণে একটি আবাসন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তার পিছনেও বেআইনি ভাবে বালি তোলাকে কারণ বলে মনে করেছিলেন কেউ কেউ। কিন্তু তার পরেও তা বন্ধে উদ্যোগী হয়নি প্রশাসন। কোনও কিছুর তোয়াক্কা না করে উত্তরপাড়ায় বালি তোলা হচ্ছে বলে অভিযোগ। কোতরং এলাকার যে ইটভাটায় বালি তোলার যন্ত্র বসানো নিয়ে সম্প্রতি গোলমাল হয়, তার মালিক সুনীল ধোলানি বলেন, “এক ব্যক্তি জোর করে আমার ইটভাটায় ঢুকে গঙ্গা থেকে বালি তোলার বেআইনি কারবার চালাচ্ছে। বাধা দেওয়ায় ইটভাটায় ভাঙচুর করা হয়। কর্মচারীদের মারধর করা হয়। ভাটায় অনেক মহিলা কাজ করে। তাঁদের নিরাপত্তার বিষয়টি রয়েছে। পুলিশকে সব জানিয়েছি।”
স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই জানিয়েছেন, গঙ্গা থেকে তোলা বালি মোটা টাকায় এলাকার বিভিন্ন নির্মাণ কাজে বিক্রি করা হচ্ছে। ট্রাকে বোঝাই করে তা নিয়ে যাওয়া হচ্ছে দূরবর্তী জায়গাতেও। অথচ, সরকার কোনও রয়্যাল্টি পাচ্ছে না। রাজনীতির তাগিদে অস্বীকার করা হলেও তৃণমূল নেতারা নিশ্চিত ভাবেই জানেন তাঁদের কারা ওই অনৈতিক কাজে জড়িত। বিষয়টি এখনই বন্ধ না হলে এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করছেন তাঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy